২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে পাঠ-বহির্ভূত সময়ে—যেমন বিরতি, সহশিক্ষা কার্যক্রম বা অন্যান্য ফাঁকে—মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করতে পারবে না। স্ক্রিন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় (এমওই) এই নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে।
এর আগে শিক্ষার্থীরা শুধু নিয়মিত ক্লাস চলাকালে এসব ডিভাইস ব্যবহারে সীমাবদ্ধ ছিল। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, সম্পূরক, উন্নয়নমূলক ও পুনর্বাসনমূলক ক্লাসেও একই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু হওয়া একই নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্কুল সময় জুড়ে শিক্ষার্থীদের ডিভাইস নির্দিষ্ট জায়গায়—যেমন লকার বা ব্যাগে—রাখতে হবে। স্মার্টওয়াচকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, কারণ এই ডিভাইসগুলো মেসেজিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ দেয়, যা মনোযোগ বিঘ্নিত করতে পারে এবং সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ কমাতে পারে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ম কঠোর করার পর অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও একই নিয়ম প্রয়োগ করে ইতিবাচক ফল পেয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সুস্থতা বৃদ্ধি, মনোযোগ বাড়া এবং বিরতির মতো অনিয়ন্ত্রিত সময়ে সহপাঠীদের সঙ্গে আরও বেশি সরাসরি মেলামেশা দেখা গেছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত শিক্ষণ ডিভাইসগুলো রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে লক হয়ে যাবে—বর্তমান সময় ১১টার পরিবর্তে। প্রতিদিন রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে সকাল ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এই ডিভাইসগুলো স্লিপ মোডে থাকবে। এতে শিক্ষার্থীরা ঘুমানোর আগে স্ক্রিন ব্যবহারের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমাতে উৎসাহিত হবে।

২০২১ সাল থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব বিদ্যালয় অনুমোদিত ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ—যেমন আইপ্যাড বা ক্রোমবুক—ব্যক্তিগত শিক্ষণ ডিভাইস হিসেবে রয়েছে। এসব ডিভাইসে একটি ব্যবস্থাপনা অ্যাপ রয়েছে, যা স্কুলকে অনাকাঙ্ক্ষিত ইন্টারনেট কনটেন্ট—যেমন পর্নোগ্রাফি ও জুয়া—অবরুদ্ধ করতে এবং স্ক্রিন ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।
স্কুলের বাইরে অভিভাবকরা চাইলে ডিভাইস ব্যবস্থাপনা অ্যাপের ডিফল্ট সেটিং বজায় রাখতে পারেন, পরিবর্তিত সেটিং বেছে নিতে পারেন, অথবা অ্যাপটি বন্ধও করতে পারেন। তবে মন্ত্রণালয় অভিভাবকদের ১০টা ৩০ মিনিটের লক-টাইমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে উৎসাহিত করেছে।
রাজ্যসভার শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী জ্যাসমিন লাউ ইনস্টাগ্রামে বলেছেন, প্রযুক্তি শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠলেও “স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য প্রয়োজন, আর অভ্যাস গড়ে ওঠে ছোটবেলা থেকেই”। তিনি বলেন, এসব পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের আজীবনের জন্য স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জানান, তার নিজের ছোট সন্তানরাও স্ক্রিন নিয়ে কৌতূহলী।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংশোধিত নির্দেশিকা বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিজ নিজভাবে জানাবে—বছরের শুরুতে আলোচনা সভা, ছাত্রহাতবই, বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং অভিভাবক সভার মাধ্যমে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এমওই-এর নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্কুলগুলো নিজস্ব শৃঙ্খলানীতি প্রণয়ন ও প্রয়োজনে সংশোধন করতে স্বাধীন। স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে স্কুলগুলো সাধারণত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার মূল কারণ শনাক্ত করে এবং দায়িত্বশীল ব্যবহারের জন্য কৌশল তৈরি করে।
জুনিয়র কলেজ বা মিলেনিয়া ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা যথেষ্ট আত্মশাসন দক্ষতা অর্জন করেছে বলে আশা করা হয়, যদিও ক্লাস চলাকালে ডিভাইস ব্যবহারে শিক্ষকের অনুমতি বাধ্যতামূলক থাকবে। ক্লাসের বাইরে প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা আসে জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত স্ক্রিন ব্যবহারের নির্দেশিকা প্রকাশের পর; যেখানে ১৮ মাসের নিচের শিশুদের জন্য কোনো স্ক্রিন সময় না রাখার সুপারিশ করা হয়, এবং ৭ থেকে ১২ বছর বয়সীদের দিনে স্কুলের কাজ বাদে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার স্ক্রিন সময় নির্ধারণ করা হয়।
জানুয়ারিতেই ‘গ্রো ওয়েল এসজি’ নামে একটি জাতীয় স্বাস্থ্য উন্নয়ন উদ্যোগ চালু হয়, যা শিশুদের খাওয়া, ঘুম, শেখা, ব্যায়াম ও পারিবারিক বন্ধন উন্নত করতে সহায়তা করে।
সরকারের এক জরিপে দেখা গেছে, ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ সপ্তাহের দিনে চার ঘণ্টার বেশি সময় ডিজিটাল ডিভাইসে ব্যয় করে; সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।
আগস্ট মাসে জাতীয় দিবসের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং বলেন, সরকার অভিভাবকদের আরও সহায়তা করবে এবং শিশুদের জন্য অনলাইন পরিবেশ নিরাপদ করতে পদক্ষেপ নেবে। তিনি অভিভাবকদের “শিশুর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ফোন ব্যবহার না করার” আহ্বান জানান।

এই লক্ষ্যে ৩০ নভেম্বর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন মন্ত্রণালয় (এমডিডিআই) এবং সামাজিক ও পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (এমএসএফ) ‘গ্রো ওয়েল এসজি’–র অধীনে দুটি উদ্যোগ ঘোষণা করে—ডিজিটাল প্যারেন্টিং কর্মসূচির একটি সিরিজ এবং ডিজিটাল ওয়েলনেসবিষয়ক নতুন একটি শিশুতোষ বই।
২০২৬ সাল পর্যন্ত সম্প্রদায়ভিত্তিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে কর্মশালা, ওয়েবিনারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এসব কর্মসূচি চালানো হবে। অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে ‘লুক আপ ফ্যামিলি’, ‘টাচ কমিউনিটি সার্ভিসেস’, এবং ‘ইউথটেকএসজি’।
প্রথমে এসব কর্মসূচি এমন এলাকায় চালু হবে, যেখানে তুলনামূলক বেশি তরুণ পরিবার বাস করে। পরে ধাপে ধাপে অন্যান্য এলাকায় বিস্তৃত করা হবে। মন্ত্রণালয় জানায়, বিভিন্ন বয়সের শিশুদের পরিবারের জন্য বয়সভিত্তিক আলাদা কর্মসূচি থাকবে, এবং নিবন্ধন-সংক্রান্ত তথ্য স্থানীয় কমিউনিটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জানানো হবে।
৩০ নভেম্বর বুকিত বাতকে ‘লুক আপ ফ্যামিলি’ একটি পাইলট কর্মশালা আয়োজন করে, যেখানে অভিভাবকরা তাদের ডিজিটাল প্যারেন্টিং অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ শেয়ার করেন।
এদিকে ‘ফ্যামিলিজ ফর লাইফ কাউন্সিল’ বেদোক পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘টিমি অ্যান্ড ট্যামি: গাইড টু ডিজিটাল ওয়েলনেস’ নামে একটি শিশুতোষ বই উদ্বোধন করে। ৩ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য তৈরি বইটিতে স্থানীয় চরিত্রের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপদ অনলাইন আচরণ, দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং স্ক্রিন ও নন-স্ক্রিন কার্যক্রমের ভারসাম্য শেখানো হয়েছে।
বইটি সামাজিক সেবা অফিসগুলোর মাধ্যমে ‘কমলিংক+’ কর্মসূচির আওতায় পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হবে।
এন জিং জিন 


















