ডিসেম্বরের প্রথম দিনেই কাঁপুনি ধরানো শীতে জমে গেল । সোমবার দিল্লির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে দাঁড়ায় ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ ডিগ্রি কম। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, এ শৈত্যপ্রবাহ কয়েকদিন আরও বজায় থাকতে পারে এবং অন্তত ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
অস্বাভাবিক কম তাপমাত্রায় শীতের শুরু
আইএমডির তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের তাপমাত্রা ছিল এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম, এবং অন্তত গত ১৪ বছরে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে একটি।
আগামী শীত আরও ঠান্ডা হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মধ্য ভারত, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শৈত্যপ্রবাহ দিনের সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পোলার ভর্টেক্সের (মেরু ঘূর্ণিঝড়) প্রভাবে এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাভাবিকের তুলনায় এক থেকে চার দিন বেশি শৈত্যপ্রবাহ দেখা যেতে পারে। সাধারণত এ সময়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পাঁচ থেকে ছয় দিন শৈত্যপ্রবাহ থাকে।

কীভাবে শৈত্যপ্রবাহ ঘোষণা করা হয়
ন্যূনতম তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কমপক্ষে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে থাকলে শৈত্যপ্রবাহ ঘোষণা করা হয়। টানা দুই দিন অন্তত দু’টি আবহাওয়া কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণে এই শর্ত পূরণ করতে হয়।
গত তিন দিনে দিল্লির তাপমাত্রা ধাপে ধাপে কমেছে—শনিবার ১০.৪ ডিগ্রি থেকে রবিবার ৮.৩ ডিগ্রি এবং সোমবার তা নেমে আসে ৫.৭ ডিগ্রিতে। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষার্ধে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির কাছাকাছি নামে, কিন্তু এবার সেই পতন শুরু হয়ে গেল মাসের একেবারে শুরুতেই।
তাপমাত্রা কমায় দিল্লির দূষণও খারাপের দিকে
তীব্র ঠান্ডার সঙ্গে বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রাও। সোমবার বিকেল ৪টায় শহরের গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ৩০৪, যা ‘খুবই খারাপ’ শ্রেণিতে পড়ে। আগের দিন এটি ছিল ২৭৯ (‘খারাপ’ শ্রেণি)।
ডিসেম্বরে দেশের কোথায় কেমন থাকবে তাপমাত্রা
আইএমডি জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে মধ্য ভারতসহ সংলগ্ন উপদ্বীপীয় ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ন্যূনতম তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের নিচে থাকতে পারে। অন্যদিকে দেশের বাকি অংশে ন্যূনতম তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে।
বৃষ্টির সম্ভাবনা
ডিসেম্বরে সারা দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি গড়ের ৭৯% থেকে ১২১% এর মধ্যে। উপদ্বীপীয় ও পশ্চিম-মধ্য ভারতের বেশিরভাগ এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। পূর্ব-মধ্য ও উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু জায়গাতেও বৃষ্টি বাড়তে পারে। অন্যদিকে দেশের বাকি অংশে বৃষ্টি কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পোলার ভর্টেক্স ও লা নিনিয়ার যৌথ প্রভাব
নভেম্বর থেকেই পোলার ভর্টেক্সের প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য ভারতের তাপমাত্রা কমছিল। এখন আবার সেই প্রভাব আরও বাড়ছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে লা নিনিয়া পরিস্থিতি, যা আগামী তিন মাস আরও ঠান্ডা বৃদ্ধি করতে পারে।
আইএমডির ক্লাইমেট মনিটরিং ও প্রিডিকশন গ্রুপের প্রধান ওপি শ্রীজিত বলেন, নভেম্বর মাসে মধ্যপ্রদেশসহ কয়েকটি অঞ্চলে তীব্র ঠান্ডার কারণ ছিল পোলার ভর্টেক্স ও লা নিনিয়া। আবারও সেই প্রভাব জোরালো হচ্ছে।
পোলার ভর্টেক্স কী
এটি মেরু অঞ্চলে গঠিত বিশাল ঠান্ডা বায়ু ও নিম্নচাপের ঘূর্ণায়মান এলাকা। শীতে এটি শক্তিশালী হয় এবং গ্রীষ্মে দুর্বল হয়।
আইএমডি মহাপরিচালক মৃণাল কান্তি মহাপাত্র জানান, এ শীতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কম আসতে পারে, ফলে তাপমাত্রা আরও কমবে। লা নিনিয়ার প্রভাবও ঠান্ডা বাড়াতে সাহায্য করবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















