নতুন জীবনীতে মিউজের বদলে শিল্পী জেন বারকিন
জেন বারকিনকে অনেকেই চিনেন হারমেসের আইকনিক ব্যাগের নামধারী, সত্তরের দশকের ফরাসি পপ–সংস্কৃতির এক অনায়াস মুখ আর সার্জ গেইন্সবার্গের সঙ্গী হিসেবে। কিন্তু “ইট গার্ল: দ্য লাইফ অ্যান্ড লেগ্যাসি অব জেন বারকিন” শিরোনামের নতুন জীবনী তাকে কেবল সৌন্দর্য ও স্টাইলের প্রতীক হিসেবে দেখার প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বইটিতে লেখক মারিসা মেল্টজার বারকিনের কৈশোরে ফ্যাশন ম্যাগাজিনে কাজ থেকে শুরু করে পাঁচ দশকজুড়ে চলচ্চিত্র, গান আর মঞ্চে বিচরণের পথ ধরে দেখিয়েছেন—‘ইট গার্ল’ পরিচয়ের পেছনেও ছিল নিয়মিত পরিশ্রম আর সচেতন নান্দনিকতা। তার কাঁধে ঝোলানো সাধারণ উইকার বাস্কেট কিংবা গেইন্সবার্গের দাঁড়ি, স্যুট আর জুতোর ধরন—সবই ধীরে ধীরে সময়ের রুচি ও ফ্যাশনের অংশ হয়ে ওঠে।

তবে দ্য আটলান্টিক–এর পর্যালোচনা বলছে, মেল্টজারের বইতে এক ধরনের টানাপোড়েন আছে। একদিকে তিনি বারকিনকে অবমূল্যায়িত সৃষ্টিশীল প্রতিভা হিসেবে তুলে ধরতে চান, অন্যদিকে তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, সাক্ষাৎকার ও চিঠিপত্র খতিয়ে দেখলে সেখানে বেশি জায়গা পেয়েছে সম্পর্ক, পরিবার ও আবেগী টানাপোড়েনের গল্প; পেশাগত কৌশল বা ক্যারিয়ার–বদলানো উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত তুলনামূলক কম। ফলে বারকিনকে হয়তো গোপন কোনো গুরুর বদলে আমরা দেখি এমন একজন মানুষ হিসেবে, যিনি ক্যামেরার সামনে নিজের স্বাভাবিক উপস্থিতি, অদ্ভুত সরলতা আর নির্দ্বিধা আত্মপ্রকাশ দিয়েই যুগের নান্দনিকতা বদলে দিয়েছেন। আশির দশকে আনি ভারদার সঙ্গে কাজ, পরের সময়ের কিছু গাঢ় চরিত্র এবং মঞ্চে নিজের ইমেজ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা—এই সব পর্ব বইটিতে বারকিনের শিল্পীসত্তার অন্যপিঠ দেখায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ‘ইট গার্ল’ ধারণার নতুন পাঠ
জীবনীটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ‘ইট গার্ল’ ধারণাই নতুনভাবে লেখা হচ্ছে। বারকিনের সময়ের জনপ্রিয়তা গড়ে উঠেছিল চলচ্চিত্র, কনসার্ট আর ম্যাগাজিনের পাতা ঘিরে; আজকের অনলাইন যুগে একই জায়গা দখল করেছে টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও অগণিত মাইক্রো–কমিউনিটি। পর্যালোচনায় বলা হয়, বারকিনকে কেবল অবহেলিত শিল্পী হিসেবে প্রমাণ করার তাড়নায় তার সবচেয়ে বড় শক্তি—দিনযাপনকে সহজভাবে আকর্ষণীয় করে দেখানোর ক্ষমতা—কখনও কখনও আড়াল হয়ে যায়। তার ঝরঝরে চুল, সরল পোশাক, ব্রা–বিহীন লুক বা সাধারণ ঝুড়ি হাতে ক্যামেরার সামনে হাঁটা–চলা অনেক মেয়েদের জন্য নতুন আত্মবিশ্বাসের ভাষায় পরিণত হয়েছিল।

আজকের প্রেক্ষাপটে বারকিনের জীবন স্মরণ করিয়ে দেয় যে জনমানসে গড়ে ওঠা ইমেজ সব সময়ই আংশিকভাবে অন্যদের নির্মাণ, আর সেটি বদলাতে চাইলে শিল্পীর নিজেরও অনেক সময় লাগে। বইটির সবচেয়ে শক্তিশালী অংশগুলোতে দেখা যায়, বারকিন যখন পরিচিত সীমার বাইরে গিয়ে গাঢ় চরিত্রে অভিনয় করেন বা নারী পরিচালকদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন, তখন নিজের ইমেজ নিয়ে আরও সচেতন ও পরীক্ষামূলক হয়ে ওঠেন। সমকালীন বিতর্কে, যেখানে নারী তারকাদের গল্প বারবার নতুন ভাষায় “পুনরুদ্ধার” করা হচ্ছে, সেখানে বারকিনের জীবন দেখায়—পুনর্লিখিত বর্ণনারও সীমা আছে, তবে তার প্রভাব স্থায়ী হতে পারে যদি তা মানুষের নিজের দেখার অভ্যাস বদলে দিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















