০৪:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নেটফ্লিক্সের নতুন অ্যাকশন সিরিজ ‘টাইগো’-তে প্রধান চরিত্রে লিসা আইফোন টিমে একের পর এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিদায়, অ্যাপলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ক্রেবন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আগাম বন্ধের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে ইন্দোনেশিয়া গ্লাস ডিসপ্লে–যুক্ত মেকানিক্যাল কিবোর্ড অবশেষে বাজারে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে প্রেস অ্যাক্সেস নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের মামলা  তথ্য সঠিক হলে সাংবাদিক মানহানির দায়ে পড়বেন না: দিল্লি হাইকোর্ট চট্টগ্রামে ঝুলন্ত অবস্থায় সিইউ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার মস্কোর ‘ট্রায়াম্ফ’: কেন রুশ এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সবার চাহিদায় জুবাইদা ঢাকায় পৌঁছে সরাসরি এভারকেয়ারে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান বাংলাদেশে তিন নতুন গ্যাসকূপ: সরকারের অনুমোদনে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকার অনুসন্ধান পরিকল্পনা

বাংলাদেশে তিন নতুন গ্যাসকূপ: সরকারের অনুমোদনে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকার অনুসন্ধান পরিকল্পনা

প্রস্তাবিত তিনটি গ্যাসকূপ খননের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে এবং ব্যয়বহুল আমদানিনির্ভরতা কমাতে বড় উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), যা পেট্রোবাংলার একটি সহকারী প্রতিষ্ঠান। বাড়তে থাকা চাহিদা এবং কমে আসা গ্যাস মজুদের চাপে এই অনুসন্ধান কার্যক্রমকে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগ।

প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা

পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনটি নতুন কূপ—শ্রীকৈল ডিপ-১, মোবারকপুর ডিপ-১ এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১—চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের তিনটি উপজেলার নির্ধারিত স্থানে খনন করা হবে।

মোট ১,১৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকার ৯০৯ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে, আর বাপেক্স নিজস্ব তহবিল থেকে ২২৭.২৫ কোটি টাকা ব্যয় করবে।
প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে অক্টোবর ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৭ পর্যন্ত।

যদি এসব কূপে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর গ্যাস মজুদ পাওয়া যায়, তবে তিন কূপ মিলিয়ে প্রায় ১,৬৯৬.৩৬ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস যুক্ত হতে পারে দেশের সম্ভাব্য মজুদে। পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন অনুযায়ী, এর মধ্যে প্রায় ১,০১৮.১৪ বিসিএফ উত্তোলনযোগ্য হতে পারে।

গভীর কূপ খননের প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা

জিওলজিক্যাল তথ্য ও ৩ডি সিসমিক ডেটার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই তিন কূপের অবস্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে।
শ্রীকৈল ডিপ-১ এবং মোবারকপুর ডিপ-১ কূপ দু’টি ৬ হাজার মিটার পর্যন্ত এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১ কূপটি ৪ হাজার মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হবে।

সরকার ইতোমধ্যে বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে নতুন ড্রিলিং সরঞ্জাম কেনা এবং ভবিষ্যৎ উত্তোলন ধাপের প্রস্তুতির জন্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহের পদক্ষেপ নিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাপেক্স ২০টি নতুন কূপ খননের লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছে।

এলএনজি আমদানিতে চাপ ও ব্যয়

গ্যাস ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫টি স্পট-এলএনজি কার্গো কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। উন্মুক্ত টেন্ডারিং পদ্ধতি চালুর ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী এতে অংশগ্রহণ করছে।

কর্তৃপক্ষের মতে, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা জরুরি চাহিদা সামাল দিতে সাহায্য করলেও আন্তর্জাতিক দামের ওঠানামার ঝুঁকিতে দেশ আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। শীত মৌসুমে উচ্চ চাহিদা ও শিল্পখাতের ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে সরকার অধিকসংখ্যক কার্গো অনুমোদন দিচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকট

বাংলাদেশ বর্তমানে দৈনিক ৪০০–৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতির মুখে রয়েছে। শীতের চাহিদা বাড়লে এই ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন শিল্প অঞ্চলে গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাসাবো ও উত্তরার কয়েকটি এলাকায় গত সপ্তাহ থেকে গ্যাস চাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। কিছু এলাকায় পিক আওয়ারে প্রায় শূন্য সরবরাহ দেখা গেছে।

ফলে অনেক পরিবার রান্নার জন্য বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার বা ইলেকট্রিক চুলার মতো ব্যয়বহুল বিকল্প জ্বালানির ওপর নির্ভর করছে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যদি দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান দ্রুততর না হয় এবং সঞ্চয় ও সরবরাহব্যবস্থা আধুনিকায়ন না করা হয়, তবে আমদানিনির্ভরতা বাড়তেই থাকবে, আর বিশ্ববাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নেটফ্লিক্সের নতুন অ্যাকশন সিরিজ ‘টাইগো’-তে প্রধান চরিত্রে লিসা

বাংলাদেশে তিন নতুন গ্যাসকূপ: সরকারের অনুমোদনে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকার অনুসন্ধান পরিকল্পনা

০৩:৪২:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রস্তাবিত তিনটি গ্যাসকূপ খননের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে এবং ব্যয়বহুল আমদানিনির্ভরতা কমাতে বড় উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), যা পেট্রোবাংলার একটি সহকারী প্রতিষ্ঠান। বাড়তে থাকা চাহিদা এবং কমে আসা গ্যাস মজুদের চাপে এই অনুসন্ধান কার্যক্রমকে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগ।

প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা

পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনটি নতুন কূপ—শ্রীকৈল ডিপ-১, মোবারকপুর ডিপ-১ এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১—চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের তিনটি উপজেলার নির্ধারিত স্থানে খনন করা হবে।

মোট ১,১৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকার ৯০৯ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে, আর বাপেক্স নিজস্ব তহবিল থেকে ২২৭.২৫ কোটি টাকা ব্যয় করবে।
প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে অক্টোবর ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৭ পর্যন্ত।

যদি এসব কূপে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর গ্যাস মজুদ পাওয়া যায়, তবে তিন কূপ মিলিয়ে প্রায় ১,৬৯৬.৩৬ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস যুক্ত হতে পারে দেশের সম্ভাব্য মজুদে। পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন অনুযায়ী, এর মধ্যে প্রায় ১,০১৮.১৪ বিসিএফ উত্তোলনযোগ্য হতে পারে।

গভীর কূপ খননের প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা

জিওলজিক্যাল তথ্য ও ৩ডি সিসমিক ডেটার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই তিন কূপের অবস্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে।
শ্রীকৈল ডিপ-১ এবং মোবারকপুর ডিপ-১ কূপ দু’টি ৬ হাজার মিটার পর্যন্ত এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১ কূপটি ৪ হাজার মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হবে।

সরকার ইতোমধ্যে বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে নতুন ড্রিলিং সরঞ্জাম কেনা এবং ভবিষ্যৎ উত্তোলন ধাপের প্রস্তুতির জন্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহের পদক্ষেপ নিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাপেক্স ২০টি নতুন কূপ খননের লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছে।

এলএনজি আমদানিতে চাপ ও ব্যয়

গ্যাস ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫টি স্পট-এলএনজি কার্গো কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। উন্মুক্ত টেন্ডারিং পদ্ধতি চালুর ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী এতে অংশগ্রহণ করছে।

কর্তৃপক্ষের মতে, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা জরুরি চাহিদা সামাল দিতে সাহায্য করলেও আন্তর্জাতিক দামের ওঠানামার ঝুঁকিতে দেশ আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। শীত মৌসুমে উচ্চ চাহিদা ও শিল্পখাতের ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে সরকার অধিকসংখ্যক কার্গো অনুমোদন দিচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকট

বাংলাদেশ বর্তমানে দৈনিক ৪০০–৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতির মুখে রয়েছে। শীতের চাহিদা বাড়লে এই ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন শিল্প অঞ্চলে গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাসাবো ও উত্তরার কয়েকটি এলাকায় গত সপ্তাহ থেকে গ্যাস চাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। কিছু এলাকায় পিক আওয়ারে প্রায় শূন্য সরবরাহ দেখা গেছে।

ফলে অনেক পরিবার রান্নার জন্য বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার বা ইলেকট্রিক চুলার মতো ব্যয়বহুল বিকল্প জ্বালানির ওপর নির্ভর করছে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যদি দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান দ্রুততর না হয় এবং সঞ্চয় ও সরবরাহব্যবস্থা আধুনিকায়ন না করা হয়, তবে আমদানিনির্ভরতা বাড়তেই থাকবে, আর বিশ্ববাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।