এলিজাবেথ এস. ম্যাথিউ একাধিক ভূমিকা পালন করছেন — তিনি একজন সংগীতশিল্পী, কাউন্সেলর, থেরাপিস্ট এবং হাজার হাজার অনুরাগীর জন্য সাহসের প্রতীক। তিনি টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত, যা একটি স্নায়ুবিক ব্যাধি, যার ফলে অনিচ্ছাকৃত শারীরিক ও কণ্ঠগত অঙ্গভঙ্গি (টিকস) হয়। তবে এই শারীরিক অসুবিধা কখনও তাকে মঞ্চে বা ক্যামেরার সামনে আসতে বাধা দেয়নি। উল্টো, এটি তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি চেনা মুখে পরিণত করেছে, যেখানে তিনি তার আর্টের মাধ্যমে টিকস বা অসুস্থতাকে অতিক্রম করে বিশ্বের কাছে তার সক্ষমতার প্রমাণ রাখছেন।
টুরেট সিনড্রোমের সাথে তার সংগ্রাম
এলিজাবেথ বলছেন, “আমি জানতাম না যে আমি টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত, তবে আমার বাবা-মা এটি লক্ষ্য করেন।” কেরালার একটি অঞ্চলে চিকিৎসকরা এটি একটি গুরুতর অবস্থার মতো মনে করেছিলেন, যা তারা সহজে মেনে নিতে পারেননি।
এলিজাবেথ এই ১৬ বছর ধরে টুরেট সিনড্রোমের সাথে সংগ্রাম করেছেন, দৃঢ় মনোবল এবং গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, “যত বড় হচ্ছি, আমার অস্থিরতা এবং উদ্বেগও বেড়ে গেছে। যখন আমি উত্তেজিত বা উদ্বিগ্ন হই, টিকসের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তাই শান্ত থাকতে কঠিন হয়ে পড়ে।”
সংগীত: চিকিৎসা এবং সাহসের মাধ্যম
এলিজাবেথ সংগীতকে নিজের জন্য একটি থেরাপি হিসেবে মনে করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং ৬ বছর বয়স থেকেই ক্লাসিক্যাল সংগীতের প্রশিক্ষণ নেন। তিনি বলেন, “আমার উদ্দেশ্য শুধু গান গাওয়া নয়, বরং আমি গান গেয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে এবং অন্যদের স্বস্তি দিতে চাই। এটি আমার জন্য এক ধরনের চিকিৎসা।”

সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা ও পথচলা
এলিজাবেথ কেরালার কন্নুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং তার শৈশব ছিল প্রাণবন্ত। তিনি তার পিতার তত্ত্বাবধানে চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু ছিলেন। পরে তিনি বেঙ্গালুরুতে কাউন্সেলিং সাইকোলজি-এ এমএসসি সম্পন্ন করেন, যা তার দ্বিতীয় পেশার পথকে পরিস্কার করে দেয়।
এতদিনে তার পরিবার এবং চিকিৎসকরা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি একটি টিকস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। তিনি বলছেন, “এখন এটি মানসিক চাপের কারণে বৃদ্ধি পায়, বিশেষত যখন আমি অনুষ্ঠানে অংশ নিই। আমার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি এক ধরনের উপশম প্রক্রিয়া — শরীর নিজেই টিকসগুলো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।”
চিকিৎসা: মস্তিষ্কের উদ্দীপনা সার্জারি
২০২২ সালে, এলিজাবেথ মস্তিষ্কের উদ্দীপনা সার্জারি (ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন) করান, যা অনেকের জন্য উপকারি হয়েছে। তবে তার জন্য ফলাফল সীমিত ছিল। তবে তিনি আশা হারাননি, “আমি এখনো আশা রাখি। যদিও অন্যরা উপকার পেয়েছে, আমি মনে করি, এই অবস্থায় আমার থাকার পিছনে ঈশ্বরের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে।”
থেরাপি এবং মনোবিজ্ঞান: তার নতুন জীবন
এলিজাবেথ বর্তমানে থিরুভানন্তপুরমে একটি সংগীত থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করছেন, যেখানে তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সাহায্য করেন। তার এই কাজটি তার জীবনের দ্বিতীয় পথ এবং তার সংগীতের প্রতি ভালোবাসা তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। তিনি বলেন, “আমি শুধু টুরেট সিনড্রোমের সাথে বাঁচছি না, আমি এটি সঙ্গে লড়াইও করছি।”

মনের শক্তি এবং পরামর্শ
এলিজাবেথের জন্য, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হল মনোবল রাখা এবং আশার সাথে জীবনযাপন করা। তিনি বলছেন, “এটি একটি প্রক্রিয়া – বিশ্বাস রাখুন, প্রার্থনা করুন এবং আশা রাখুন। আপনি যা পাচ্ছেন তার জন্য হতাশ হবেন না। আমাদের মধ্যে সবাই দুর্বল, তবে যদি আমরা এমন মানুষের সাথে থাকি যারা আমাদের অনুপ্রাণিত করে, তা হলে এটি ঈশ্বরের আশীর্বাদ।”
এছাড়া, তার একটি চাওয়া রয়েছে, “আমি চাই বিশ্বের মানুষ টুরেট সিনড্রোম সম্পর্কে সচেতন হোক। শুধু আমাকে যেমন আছি, তেমনভাবে গ্রহণ করুন।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















