০৮:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাতে গুরুতর অনিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি বাতিল জিন সম্পাদনায় বিশ্বে প্রথম: বিরল রোগ থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেল শিশু কেজে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করল জাপানি এসডিএফ জেটকে: টোকিওর অভিযোগ জামাত খুলনায় নতুন এক হিন্দু বন্ধুকে নিয়োগ দিয়েছে, আর কিছু বলব না: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন সুমাত্রায় ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত শত গ্রামের হাহাকার: ত্রাণ পৌঁছায়নি বহু এলাকায় সুন্দরবন থেকে ৭ জেলে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার এখনও অচল, আন্তঃব্যাংক লেনদেন প্ল্যাটফর্ম বন্ধ সোনামসজিদ হয়ে ভারতে থেকে পেঁয়াজ আনছে বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনে সমান পরিবেশ নেই, প্রশাসনের অবস্থায় গভীর উদ্বেগ : জামায়াত শ্রীপুরে চিকিৎসা অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু, আল রাজি হাসপাতালে তদন্ত দাবি

৪৬ হাজারের বেশি নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের উদ্বেগজনক চিত্র

বিএমইউয়ের সতর্কবার্তা: অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ দ্রুত খারাপের দিকে
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ) সতর্ক করেছে যে দেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত এক বছরে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ বিশ্লেষণ করেছে ৪৬,২৭৯টি ক্লিনিক্যাল নমুনা, যার মধ্যে বহু রোগজীবাণুতে ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতার উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে।

এই তথ্য প্রকাশ করা হয় বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট ২০২৪–২৫’ অনুষ্ঠানে।

নমুনা বিশ্লেষণে প্রধান ফল
২৪ শতাংশ নমুনা (১১,১০৮টি) কালচারে পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল প্রস্রাবের নমুনা, এরপর রক্ত। ইউরিনারি ইনফেকশনে ই-কোলাইই ছিল প্রধান জীবাণু, আর রক্তসংক্রমণে শীর্ষে ছিল সালমোনেলা টাইফি।

ই-কোলাইয়ে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও অ্যামক্সিসিলিনের প্রতি উচ্চমাত্রার প্রতিরোধ লক্ষ্য করা গেছে। মেরোপেনেম ও টাইগেসাইক্লিন এখনো কার্যকর হলেও ধীরে ধীরে এদের সংবেদনশীলতা কমছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সালমোনেলা টাইফির বেশ কয়েকটি আইসোলেট সেফট্রিয়াক্সোনের প্রতিও প্রতিরোধ দেখিয়েছে, যা ক্লোনাল বিস্তারের ঝুঁকি শনাক্তে জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ের পরামর্শ তৈরি করেছে।

ক্লেবসিয়েলা প্রজাতিতেও সেফট্রিয়াক্সোন, জেন্টামাইসিন ও সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের প্রতি মাঝারি থেকে উচ্চ প্রতিরোধ দেখা গেছে। যদিও কোলিস্টিন ও টাইগেসাইক্লিন অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর রয়েছে।

হাসপাতালে অর্জিত সংক্রমণে পরিস্থিতি আরও জটিল। অ্যাসিনেটোব্যাক্টার প্রায় সব প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিই প্রতিরোধী হয়ে উঠছে—এমনকি মেরোপেনেম ও টাইগেসাইক্লিনের প্রতিও প্রতিরোধ বাড়ছে।

প্রবণতার পরিবর্তন (২০২২–২০২৫)
এমআরএসএ ও ইএসবিএল উৎপাদক ই-কোলাই কিছুটা কমলেও কার্বাপেনেমেজ উৎপাদক ই-কোলাই, ক্লেবসিয়েলা, অ্যাসিনেটোব্যাক্টার ও সুডোমোনাসের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

আইসিইউ-সম্পর্কিত সংক্রমণে ছত্রাকের আধিক্যও ধরা পড়ে, যেখানে ক্যান্ডিডা ট্রপিকালিস এবং ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানস বেশি শনাক্ত হয়। বিভিন্ন প্রজাতিতেই ফ্লুকনাজোল-প্রতিরোধের হার উল্লেখযোগ্য।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বিএমইউ উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. শহীনুল আলম বলেন, গবেষণা, গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বড় চ্যালেঞ্জ হলেও তা অদম্য নয়।

প্রধান উপদেষ্টার উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মো. সাইদুর রহমান ভিডিও বার্তায় সতর্ক করে বলেন, আগামী ১০–১৫ বছরে মানবজাতি হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক পূর্ববর্তী সংকটের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ওষুধ থাকবে, কিন্তু সেগুলো আর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করবে না।

বিএমইউতে রোগীর ভোগান্তি কমাতে অনলাইন টিকিটিং চালু
প্রশাসন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এএমআর এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে, এখনই সবাইকে একসঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, মানব ও প্রাণীতে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, অসম্পূর্ণ ডোজ এবং অতিরিক্ত ব্যবহারই এই প্রাণঘাতী প্রতিরোধের প্রধান কারণ। তিনি দায়িত্বশীল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, টিকাদান এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিএমইউর বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক এবং বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। শেষে পোস্টার প্রেজেন্টেশনে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

সংযুক্ত আরব আমিরাতে গুরুতর অনিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি বাতিল

৪৬ হাজারের বেশি নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের উদ্বেগজনক চিত্র

০৭:৩৪:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএমইউয়ের সতর্কবার্তা: অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ দ্রুত খারাপের দিকে
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ) সতর্ক করেছে যে দেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত এক বছরে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ বিশ্লেষণ করেছে ৪৬,২৭৯টি ক্লিনিক্যাল নমুনা, যার মধ্যে বহু রোগজীবাণুতে ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতার উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে।

এই তথ্য প্রকাশ করা হয় বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট ২০২৪–২৫’ অনুষ্ঠানে।

নমুনা বিশ্লেষণে প্রধান ফল
২৪ শতাংশ নমুনা (১১,১০৮টি) কালচারে পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল প্রস্রাবের নমুনা, এরপর রক্ত। ইউরিনারি ইনফেকশনে ই-কোলাইই ছিল প্রধান জীবাণু, আর রক্তসংক্রমণে শীর্ষে ছিল সালমোনেলা টাইফি।

ই-কোলাইয়ে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও অ্যামক্সিসিলিনের প্রতি উচ্চমাত্রার প্রতিরোধ লক্ষ্য করা গেছে। মেরোপেনেম ও টাইগেসাইক্লিন এখনো কার্যকর হলেও ধীরে ধীরে এদের সংবেদনশীলতা কমছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সালমোনেলা টাইফির বেশ কয়েকটি আইসোলেট সেফট্রিয়াক্সোনের প্রতিও প্রতিরোধ দেখিয়েছে, যা ক্লোনাল বিস্তারের ঝুঁকি শনাক্তে জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ের পরামর্শ তৈরি করেছে।

ক্লেবসিয়েলা প্রজাতিতেও সেফট্রিয়াক্সোন, জেন্টামাইসিন ও সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের প্রতি মাঝারি থেকে উচ্চ প্রতিরোধ দেখা গেছে। যদিও কোলিস্টিন ও টাইগেসাইক্লিন অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর রয়েছে।

হাসপাতালে অর্জিত সংক্রমণে পরিস্থিতি আরও জটিল। অ্যাসিনেটোব্যাক্টার প্রায় সব প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিই প্রতিরোধী হয়ে উঠছে—এমনকি মেরোপেনেম ও টাইগেসাইক্লিনের প্রতিও প্রতিরোধ বাড়ছে।

প্রবণতার পরিবর্তন (২০২২–২০২৫)
এমআরএসএ ও ইএসবিএল উৎপাদক ই-কোলাই কিছুটা কমলেও কার্বাপেনেমেজ উৎপাদক ই-কোলাই, ক্লেবসিয়েলা, অ্যাসিনেটোব্যাক্টার ও সুডোমোনাসের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

আইসিইউ-সম্পর্কিত সংক্রমণে ছত্রাকের আধিক্যও ধরা পড়ে, যেখানে ক্যান্ডিডা ট্রপিকালিস এবং ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানস বেশি শনাক্ত হয়। বিভিন্ন প্রজাতিতেই ফ্লুকনাজোল-প্রতিরোধের হার উল্লেখযোগ্য।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বিএমইউ উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. শহীনুল আলম বলেন, গবেষণা, গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বড় চ্যালেঞ্জ হলেও তা অদম্য নয়।

প্রধান উপদেষ্টার উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মো. সাইদুর রহমান ভিডিও বার্তায় সতর্ক করে বলেন, আগামী ১০–১৫ বছরে মানবজাতি হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক পূর্ববর্তী সংকটের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ওষুধ থাকবে, কিন্তু সেগুলো আর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করবে না।

বিএমইউতে রোগীর ভোগান্তি কমাতে অনলাইন টিকিটিং চালু
প্রশাসন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এএমআর এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে, এখনই সবাইকে একসঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, মানব ও প্রাণীতে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, অসম্পূর্ণ ডোজ এবং অতিরিক্ত ব্যবহারই এই প্রাণঘাতী প্রতিরোধের প্রধান কারণ। তিনি দায়িত্বশীল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, টিকাদান এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিএমইউর বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক এবং বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। শেষে পোস্টার প্রেজেন্টেশনে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।