যুদ্ধের শেষ পর্বে জাপানের গোপন প্রস্তুতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে জাপান যখন মূল ভূখণ্ডে তীব্র যুদ্ধের সম্ভাবনায় কাঁপছিল, তখন ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মির নোবোরিতো ল্যাবরেটরি গোপন গেরিলা যুদ্ধের জন্য নানা অস্ত্র তৈরি করছিল। সেই সময়কার গবেষণা, গোপন প্রকল্প এবং সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার পরিকল্পনাগুলো এবার প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়েছে কাওয়াসাকির মেইজি ইউনিভার্সিটির নোবোরিতো ল্যাবরেটরি মিউজিয়ামে নতুন এক প্রদর্শনীতে।
নোবোরিতো ল্যাব: গোপন প্রকল্পের ইতিহাস
ল্যাবরেটরিটির যাত্রা শুরু ১৯১৯ সালে আর্মি সায়েন্টিফিক রিসার্চ ল্যাব হিসেবে। পরে ১৯৩৯ সালে এটি নোবোরিতো শাখা হিসেবে পুনর্গঠিত হয় এবং গোপন সামরিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এখানে তৈরি হয়েছিল বেলুন বোমা, জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র, গুপ্তচরদের জন্য গোপন ক্যামেরা, ফাউন্টেন পেনে লুকানো বিষ ইনজেক্টর, এমনকি নকল পাসপোর্ট ও চীনা ব্যাংক নোট।
যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেলে অস্ত্র নির্মাণে নতুন দিক
১৯৪৪ সালে সাইপান হারানোর পর জাপান সরাসরি মার্কিন বোমারু বিমানের নাগালে আসে। ১৯৪৫ সালে স্বেচ্ছাসেবী সামরিক আইন কার্যকর হয়, যার মাধ্যমে নারীসহ সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছিল।
নোবোরিতো ল্যাবে তখন তৈরি হয় ক্যানফুডের মতো দেখতে বোমা, বিষমিশ্রিত চকলেট, আর এক মিটার লম্বা দাহ্য রড—যেগুলো সাধারণ মানুষ মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে বলে পরিকল্পনা ছিল।

পরাজয়ের পর প্রমাণ ধ্বংস, আজ ইতিহাসের সাক্ষ্য
জাপান পরাজয়ের পর ল্যাবের নথি ও পরীক্ষামূলক যন্ত্রপাতি ধ্বংস করে প্রমাণ গোপনের চেষ্টা করা হয়। তবুও, আজ সেই ইতিহাসের একটি অংশ সংরক্ষিত মিউজিয়ামে।
৮০ বছর পর যুদ্ধের বার্তা—‘যুদ্ধ শুরু হলে থামে না’
“যুদ্ধ বাস্তবে ঘটেনি বলে হয়তো অনেকের কাছে কল্পনা মনে হয়, কিন্তু সামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষকেও যুদ্ধক্ষেত্রে নামানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল,” বলেন মিউজিয়ামের পরিচালক আকিরা ইয়ামাদা।
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধ একবার শুরু হলে থামানো যায় না। বিজয়ের সম্ভাবনা না থাকলেও এগোতেই হয়—এটাই যুদ্ধের ভয়াবহ সত্য।”
প্রদর্শনীতে যা দেখা যাবে
২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ‘সেই সময়ে, আমাদের যুদ্ধ করতে বলা হয়েছিল’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে রয়েছে—
গেরিলা অস্ত্র তৈরির নথি ও ডায়াগ্রাম
সাধারণ মানুষকে যুদ্ধে যুক্ত করার প্রস্তুতির বিবরণ
ল্যাবের অংশগুলো নানগানো, ফুকুই ও হিয়োগো প্রিফেকচারে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা
মিউজিয়ামটি বুধবার–শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা। প্রবেশ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 
























