শীতের সবজি মাঠ থেকে বাজারে এসেছে অনেক আগেই। নতুন পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। তবু বাজারে গেলে যে স্বস্তির অনুভূতি পাওয়ার কথা, তা এখনও মিলছে না। রাজধানীর কাঁচাবাজারে ঢুকলেই চোখে পড়ে একই চিত্র—দাম কিছুটা নড়েছে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষের পকেটে আরাম পৌঁছায়নি।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ ও সবজির দাম এখনও সাধারণ ক্রেতার জন্য চাপের জায়গায় রয়ে গেছে।
পেঁয়াজে ধীরগতির নামা
নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও পুরোনো পেঁয়াজই এখনও দামে আধিপত্য করছে। আকার ও মানভেদে পুরোনো ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। ছোট পেঁয়াজ তুলনামূলক কম, বড় সাইজের পেঁয়াজের দাম বেশি। নতুন ক্রস জাতের পেঁয়াজ কিছুটা কমে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দেশি পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১৫০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা কমেছে। তবে এই কমার গতি খুব ধীর। বাজারে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা বেশি দামে কেনা পেঁয়াজ আগে বিক্রি না হলে দাম দ্রুত নামবে না বলেই মনে করছেন তারা।
সবজিতে শীত এলেও স্বস্তি আসেনি
সবজির ক্ষেত্রেও একই গল্প। শীতকাল মানেই সবজির ভরা মৌসুম, কিন্তু বাজারে তার প্রতিফলন এখনও স্পষ্ট নয়। কিছু সবজির দাম কমলেও বেশির ভাগ সবজিই রয়ে গেছে চড়া দামে।

বাজারে দেশি টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১২০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৬০ টাকা। গাজর, বেগুন, শিম, করলা, ঢ্যাঁড়স, পটোল, ঝিঙা, বরবটি—সবকিছুতেই দাম তুলনামূলক বেশি। এমনকি শাকপাতার দামও সাধারণ মানুষের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, সামনে দাম আরও কমার সম্ভাবনা আছে। তবে যেসব সবজির মৌসুম এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি, সেগুলোর দাম কিছুদিন এমনই থাকবে।
মুরগি ও মাংসে বাড়তি চাপ
সবজির পাশাপাশি মুরগির বাজারেও চাপ বাড়ছে। শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় বিয়ে, পিকনিক, বিভিন্ন আয়োজন বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে মুরগির দামে।
বাজারে বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, কক মুরগি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। দেশি মুরগির দাম আরও বেশি। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, চাহিদা বাড়ায় এবং খামারিরা শীতে মুরগি তুলতে ঝুঁকি কম নেওয়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
মাছেও নেই স্বস্তি
মাছের বাজারেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। ইলিশ, রুই, কাতল, চিংড়ি—সব ধরনের মাছই বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক বেশি দামে। আকার ও প্রজাতিভেদে কেজিপ্রতি দাম কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
মুদিপণ্যে স্থবিরতা
মুদি দোকানের পণ্যে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। কেবল দুই কেজি আটা প্যাকেটে সামান্য দাম কমেছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি—সবকিছুতেই আগের দামই বহাল রয়েছে।
সব মিলিয়ে শীতের বাজারে এখনো স্বস্তির হাওয়া লাগেনি সাধারণ মানুষের জীবনে। দাম কিছুটা কমার আভাস থাকলেও বাজারের এই ধীরগতির নামায় মানুষ তাকিয়ে আছে কবে সত্যিকারের আরাম ফিরবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















