১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে বাইবেলের বৈশ্বিক যাত্রা, লক্ষ্য দুই হাজার তেত্রিশ ক্যানসারের পথ ধরেই আলঝেইমারের নতুন চিকিৎসা দিগন্ত নাইরোবির শহরের পাশে বুনো আফ্রিকা: এক দিনে সাফারির অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা যশোরে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত ঝালকাঠিতে হাদির গ্রামের বাড়িতে লুটপাট ‘হাদির ওপর হামলাকারী শিবিরের লোক’—রিজভীর বক্তব্য ভিত্তিহীন: ডিএমপি কমিশনার ইসরায়েলমুখী বিশাল ইভানজেলিকাল মিশন: ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা হাদির ওপর হামলা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ: মির্জা আব্বাস যাত্রাবাড়িতে বাসচাপায় বৃদ্ধার মৃত্যু গাজায় যুদ্ধের শেষ তিন মাসে নবজাতকের মৃত্যু বেড়েছে ভয়াবহভাবে

ওষুধের দামে নাভিশ্বাস: গ্রামে অসুখের চেয়েও বড় বোঝা চিকিৎসার খরচ

দেশজুড়ে ওষুধের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এখন শুধু একটি অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি ক্রমেই জনস্বাস্থ্যের বড় সংকটে রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের জন্য চিকিৎসা নেওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। চিকিৎসকের পরামর্শ থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেক রোগী ডোজ কমাচ্ছেন, কেউ কেউ চিকিৎসাই বন্ধ করে দিচ্ছেন। অসুখের যন্ত্রণার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আর্থিক অসহায়ত্ব ও মানসিক চাপ।

গ্রামীণ বাস্তবতা: চিকিৎসা আছে, ওষুধ নেই

গ্রামের সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সীমিত ওষুধ সরবরাহ দীর্ঘদিনের সমস্যা। ফলে বেশিরভাগ রোগীকেই বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর ওষুধের দাম একাধিক দফায় বেড়েছে। স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, এসিআই, রেডিয়েন্ট, পপুলার ও এসকেএফসহ প্রায় সব বড় কোম্পানির জীবনরক্ষাকারী ও নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
যে ট্যাবলেট একসময় ৮ বা ১০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটির দাম এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই বাড়তি খরচ গ্রামীণ মানুষের আয়ের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের সবচেয়ে বড় সংকট

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। নিয়মিত ইনসুলিন বা ইনজেকশন নিতে হয় এমন রোগীদের মাসিক চিকিৎসা ব্যয় কয়েক হাজার টাকা বেড়ে গেছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে ইনজেকশন কম নিচ্ছেন কিংবা বিকল্প কম কার্যকর ওষুধে চলে যাচ্ছেন।
ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত পরিবারগুলোর অবস্থা আরও করুণ। এক একটি ইনজেকশনের দাম কয়েক হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় মাসে যতগুলো দেওয়ার কথা, তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, যা সরাসরি রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা তৈরি করছে।

ফার্মেসিতে ক্ষোভ, দোকানির অসহায়ত্ব

গ্রামের ফার্মেসিগুলোতেও চাপ বাড়ছে। ওষুধ কিনতে এসে দাম শুনে রোগীর স্বজনদের ক্ষোভ প্রকাশ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। অনেক সময় দোকানিদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হচ্ছে। ফার্মেসি মালিকরা বলছেন, কোম্পানি যে দামে ওষুধ সরবরাহ করছে, তার ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সীমিত মুনাফায় বিক্রি করেও তারা রোগীদের অসন্তোষের মুখে পড়ছেন।

নীতিমালার আশ্বাস, মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন

ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দাম নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা রয়েছে এবং কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়াতে পারবে না। তবে গ্রামীণ বাজারে এর বাস্তব প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাত, বাজারে কয়েকটি কোম্পানির প্রভাব এবং দুর্বল তদারকি—সব মিলিয়ে ওষুধের দাম কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

চিকিৎসা কি এখন বিলাসপণ্য?

বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশ মানুষ নিজ খরচে চিকিৎসা করেন। গ্রামীণ এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ আরও বেশি নির্ভরশীল বেসরকারি ফার্মেসির ওপর। ফলে ওষুধের দাম বাড়া মানেই চিকিৎসা থেকে ছিটকে পড়া। অনেক পরিবার খাবার, শিক্ষা বা অন্য প্রয়োজন কমিয়ে ওষুধ কেনার চেষ্টা করছে, তাতেও পেরে উঠছে না।

শেষ কথা

ওষুধ কোনো বিলাসপণ্য নয়, এটি মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার। গ্রামীণ মানুষের জন্য ওষুধের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এক ধরনের নীরব সংকট তৈরি করছে। কার্যকর মূল্যনিয়ন্ত্রণ, শক্ত নজরদারি এবং সরকারি পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। নইলে অসুখ নয়, ওষুধের দামই হয়ে উঠবে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু।

#ওষুধ #ওষুধেরদাম #স্বাস্থ্যসংকট #গ্রামীণবাংলাদেশ #চিকিৎসাব্যয়

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে বাইবেলের বৈশ্বিক যাত্রা, লক্ষ্য দুই হাজার তেত্রিশ

ওষুধের দামে নাভিশ্বাস: গ্রামে অসুখের চেয়েও বড় বোঝা চিকিৎসার খরচ

১২:৫৭:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশজুড়ে ওষুধের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এখন শুধু একটি অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি ক্রমেই জনস্বাস্থ্যের বড় সংকটে রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের জন্য চিকিৎসা নেওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। চিকিৎসকের পরামর্শ থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেক রোগী ডোজ কমাচ্ছেন, কেউ কেউ চিকিৎসাই বন্ধ করে দিচ্ছেন। অসুখের যন্ত্রণার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আর্থিক অসহায়ত্ব ও মানসিক চাপ।

গ্রামীণ বাস্তবতা: চিকিৎসা আছে, ওষুধ নেই

গ্রামের সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সীমিত ওষুধ সরবরাহ দীর্ঘদিনের সমস্যা। ফলে বেশিরভাগ রোগীকেই বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর ওষুধের দাম একাধিক দফায় বেড়েছে। স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, এসিআই, রেডিয়েন্ট, পপুলার ও এসকেএফসহ প্রায় সব বড় কোম্পানির জীবনরক্ষাকারী ও নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
যে ট্যাবলেট একসময় ৮ বা ১০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটির দাম এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই বাড়তি খরচ গ্রামীণ মানুষের আয়ের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের সবচেয়ে বড় সংকট

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। নিয়মিত ইনসুলিন বা ইনজেকশন নিতে হয় এমন রোগীদের মাসিক চিকিৎসা ব্যয় কয়েক হাজার টাকা বেড়ে গেছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে ইনজেকশন কম নিচ্ছেন কিংবা বিকল্প কম কার্যকর ওষুধে চলে যাচ্ছেন।
ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত পরিবারগুলোর অবস্থা আরও করুণ। এক একটি ইনজেকশনের দাম কয়েক হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় মাসে যতগুলো দেওয়ার কথা, তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, যা সরাসরি রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা তৈরি করছে।

ফার্মেসিতে ক্ষোভ, দোকানির অসহায়ত্ব

গ্রামের ফার্মেসিগুলোতেও চাপ বাড়ছে। ওষুধ কিনতে এসে দাম শুনে রোগীর স্বজনদের ক্ষোভ প্রকাশ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। অনেক সময় দোকানিদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হচ্ছে। ফার্মেসি মালিকরা বলছেন, কোম্পানি যে দামে ওষুধ সরবরাহ করছে, তার ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সীমিত মুনাফায় বিক্রি করেও তারা রোগীদের অসন্তোষের মুখে পড়ছেন।

নীতিমালার আশ্বাস, মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন

ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দাম নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা রয়েছে এবং কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়াতে পারবে না। তবে গ্রামীণ বাজারে এর বাস্তব প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাত, বাজারে কয়েকটি কোম্পানির প্রভাব এবং দুর্বল তদারকি—সব মিলিয়ে ওষুধের দাম কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

চিকিৎসা কি এখন বিলাসপণ্য?

বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশ মানুষ নিজ খরচে চিকিৎসা করেন। গ্রামীণ এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ আরও বেশি নির্ভরশীল বেসরকারি ফার্মেসির ওপর। ফলে ওষুধের দাম বাড়া মানেই চিকিৎসা থেকে ছিটকে পড়া। অনেক পরিবার খাবার, শিক্ষা বা অন্য প্রয়োজন কমিয়ে ওষুধ কেনার চেষ্টা করছে, তাতেও পেরে উঠছে না।

শেষ কথা

ওষুধ কোনো বিলাসপণ্য নয়, এটি মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার। গ্রামীণ মানুষের জন্য ওষুধের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এক ধরনের নীরব সংকট তৈরি করছে। কার্যকর মূল্যনিয়ন্ত্রণ, শক্ত নজরদারি এবং সরকারি পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। নইলে অসুখ নয়, ওষুধের দামই হয়ে উঠবে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু।

#ওষুধ #ওষুধেরদাম #স্বাস্থ্যসংকট #গ্রামীণবাংলাদেশ #চিকিৎসাব্যয়