১১:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
উম্ম আল কুয়াইনে ই-স্কুটার দুর্ঘটনায় ১০ বছরের শিশুর মৃত্যু গভীর সমুদ্র খননের হুমকিতে হাঙর, রে ও কাইমেরা দীর্ঘ টেনিস মৌসুমের মূল্য: চোট, মানসিক ক্লান্তি আর মাঝপথে ছিটকে যাওয়া রক্ষণশীল নারীর নতুন মিডিয়া জগৎ: দুধওয়ালির পোশাক থেকে নারী জগতের নতুন রাজনীতি ভেনেজুয়েলার তেলের বিপুল ভান্ডার থাকলেও বাস্তব উৎপাদন থেকে যাবে কাগজে-কলমেই রঙে রঙে নির্বাসন ও স্বীকৃতি: কাতারে এম এফ হুসেইনের নিজের জাদুঘর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে বাইবেলের বৈশ্বিক যাত্রা, লক্ষ্য দুই হাজার তেত্রিশ ক্যানসারের পথ ধরেই আলঝেইমারের নতুন চিকিৎসা দিগন্ত নাইরোবির শহরের পাশে বুনো আফ্রিকা: এক দিনে সাফারির অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা যশোরে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

গভীর সমুদ্র খননের হুমকিতে হাঙর, রে ও কাইমেরা

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঙর, রে ও কাইমেরা প্রজাতির আবাসস্থলের সঙ্গে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র খনন এলাকার বড় ধরনের মিল রয়েছে, যা এসব সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

প্রতিবেদন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের আলোচনায় গভীর সমুদ্র খনন একটি ক্রমেই সাধারণ কিন্তু বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে। মূল্যবান খনিজ আহরণের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও, এর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে—বিশেষ করে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে।

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোয়া ক্যাম্পাসের সামুদ্রিক গবেষকদের প্রকাশিত নতুন গবেষণায় এই উদ্বেগ আরও স্পষ্ট হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাঙর, রে ও কাইমেরা—যাদের অনেক সময় ‘ঘোস্ট শার্ক’ বলা হয়—এমন অন্তত ৩০টি প্রজাতির আবাসস্থল এমন এলাকায় পড়েছে, যেখানে গভীর সমুদ্র খননের প্রস্তাব রয়েছে।

এরই মধ্যে এসব প্রজাতির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষকদের মতে, গভীর সমুদ্র খনন সমুদ্রতলকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং পানির স্তরে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি ছড়িয়ে দেবে। এই পলির মেঘ অনেক সামুদ্রিক প্রাণীকে শ্বাসরোধ বা চাপা পড়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, ফলে বিলুপ্তির আশঙ্কা আরও বেড়ে যাবে।

A third of sharks, rays, and chimaeras are threatened with extinction, as new report narrows in on solutions - Press release | IUCN

গবেষণার পদ্ধতি
গবেষক দল আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থার তৈরি প্রজাতির বিস্তৃত মানচিত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত গভীর সমুদ্র খনন এলাকার মানচিত্র মিলিয়ে বিশ্লেষণ করেন। পাশাপাশি প্রতিটি প্রজাতির প্রজনন পদ্ধতি ও তারা কত গভীরে বসবাস করে—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে খননের প্রভাবের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা নিরূপণ করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্কেট ও কাইমেরা প্রজাতি সমুদ্রতলে ডিম পাড়ে। অথচ এই এলাকাগুলোতেই খননযান সবচেয়ে বেশি চলাচল করে, যা এসব প্রজাতির বংশবিস্তারের জন্য বড় হুমকি।

ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতি
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত প্রজাতির মধ্যে রয়েছে তিমি হাঙর, মান্টা রে ও মেগামাউথ হাঙর। ফলাফলে দেখা গেছে, ৩০টি প্রজাতি খনন থেকে সৃষ্ট পলিমাটির প্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর মধ্যে ২৫টি প্রজাতি সরাসরি সমুদ্রতল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতেও রয়েছে।

গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক জেফ ড্রেজেন বলেন, হাঙর ও তাদের ঘনিষ্ঠ প্রজাতিগুলো পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠী, যার প্রধান কারণ অতিরিক্ত শিকার। তাদের এই ভঙ্গুর অবস্থার কারণে গভীর সমুদ্র খননের পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ে আলোচনায় এসব প্রজাতিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। যারা সামুদ্রিক প্রাণীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন, তাদের জানা উচিত—খনন কার্যক্রম তাদের জন্য নতুন করে আরেকটি বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সম্ভাব্য সুরক্ষা ব্যবস্থা
গবেষকদের মতে, এসব প্রজাতিকে রক্ষায় কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি চালু করা, সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকা ঘোষণা করা এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের সময় এসব প্রজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করা।

Sharks, rays, chimaeras further threatened by deep-sea mining | SOEST

গভীর সমুদ্র খনন কেন এত ক্ষতিকর
গভীর সমুদ্র খননের বড় অংশ পরিচালিত হওয়ার কথা ক্ল্যারিয়ন-ক্লিপারটন জোনে, যা হাওয়াইয়ের আশপাশের জলভাগ থেকে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি গভীর সমুদ্র অঞ্চল। সাম্প্রতিক গবেষণায় এই এলাকাকে নতুন প্রজাতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি এমন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলো আগে বিজ্ঞানের অজানা ছিল।

তবে এই নতুন প্রজাতিগুলো সরাসরি খননযন্ত্রের সংস্পর্শে এসে বা পলিমাটির প্রবাহে চাপা পড়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে, তীব্র শব্দ ও আলো দূষণের কারণে গভীর সমুদ্রের প্রাণীদের খাদ্য গ্রহণ ও প্রজনন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হতে পারে। যেহেতু অনেক গভীর সমুদ্রের প্রজাতি স্বাভাবিকভাবেই খুব ধীরে বংশবিস্তার করে, তাই এই প্রভাব তাদের টিকে থাকার সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

স্থলভাগেও প্রভাব
গভীর সমুদ্র খননের প্রভাব কেবল সমুদ্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এই শিল্পের জন্য উপকূলীয় এলাকায় প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবহনের অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ইতিহাস বলছে, এ ধরনের উন্নয়ন প্রায়ই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও সামুদ্রিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

উম্ম আল কুয়াইনে ই-স্কুটার দুর্ঘটনায় ১০ বছরের শিশুর মৃত্যু

গভীর সমুদ্র খননের হুমকিতে হাঙর, রে ও কাইমেরা

০৭:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঙর, রে ও কাইমেরা প্রজাতির আবাসস্থলের সঙ্গে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র খনন এলাকার বড় ধরনের মিল রয়েছে, যা এসব সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

প্রতিবেদন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের আলোচনায় গভীর সমুদ্র খনন একটি ক্রমেই সাধারণ কিন্তু বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে। মূল্যবান খনিজ আহরণের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও, এর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে—বিশেষ করে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে।

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোয়া ক্যাম্পাসের সামুদ্রিক গবেষকদের প্রকাশিত নতুন গবেষণায় এই উদ্বেগ আরও স্পষ্ট হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাঙর, রে ও কাইমেরা—যাদের অনেক সময় ‘ঘোস্ট শার্ক’ বলা হয়—এমন অন্তত ৩০টি প্রজাতির আবাসস্থল এমন এলাকায় পড়েছে, যেখানে গভীর সমুদ্র খননের প্রস্তাব রয়েছে।

এরই মধ্যে এসব প্রজাতির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষকদের মতে, গভীর সমুদ্র খনন সমুদ্রতলকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং পানির স্তরে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি ছড়িয়ে দেবে। এই পলির মেঘ অনেক সামুদ্রিক প্রাণীকে শ্বাসরোধ বা চাপা পড়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, ফলে বিলুপ্তির আশঙ্কা আরও বেড়ে যাবে।

A third of sharks, rays, and chimaeras are threatened with extinction, as new report narrows in on solutions - Press release | IUCN

গবেষণার পদ্ধতি
গবেষক দল আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থার তৈরি প্রজাতির বিস্তৃত মানচিত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত গভীর সমুদ্র খনন এলাকার মানচিত্র মিলিয়ে বিশ্লেষণ করেন। পাশাপাশি প্রতিটি প্রজাতির প্রজনন পদ্ধতি ও তারা কত গভীরে বসবাস করে—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে খননের প্রভাবের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা নিরূপণ করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্কেট ও কাইমেরা প্রজাতি সমুদ্রতলে ডিম পাড়ে। অথচ এই এলাকাগুলোতেই খননযান সবচেয়ে বেশি চলাচল করে, যা এসব প্রজাতির বংশবিস্তারের জন্য বড় হুমকি।

ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতি
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত প্রজাতির মধ্যে রয়েছে তিমি হাঙর, মান্টা রে ও মেগামাউথ হাঙর। ফলাফলে দেখা গেছে, ৩০টি প্রজাতি খনন থেকে সৃষ্ট পলিমাটির প্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর মধ্যে ২৫টি প্রজাতি সরাসরি সমুদ্রতল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতেও রয়েছে।

গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক জেফ ড্রেজেন বলেন, হাঙর ও তাদের ঘনিষ্ঠ প্রজাতিগুলো পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠী, যার প্রধান কারণ অতিরিক্ত শিকার। তাদের এই ভঙ্গুর অবস্থার কারণে গভীর সমুদ্র খননের পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ে আলোচনায় এসব প্রজাতিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। যারা সামুদ্রিক প্রাণীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন, তাদের জানা উচিত—খনন কার্যক্রম তাদের জন্য নতুন করে আরেকটি বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সম্ভাব্য সুরক্ষা ব্যবস্থা
গবেষকদের মতে, এসব প্রজাতিকে রক্ষায় কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি চালু করা, সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকা ঘোষণা করা এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের সময় এসব প্রজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করা।

Sharks, rays, chimaeras further threatened by deep-sea mining | SOEST

গভীর সমুদ্র খনন কেন এত ক্ষতিকর
গভীর সমুদ্র খননের বড় অংশ পরিচালিত হওয়ার কথা ক্ল্যারিয়ন-ক্লিপারটন জোনে, যা হাওয়াইয়ের আশপাশের জলভাগ থেকে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি গভীর সমুদ্র অঞ্চল। সাম্প্রতিক গবেষণায় এই এলাকাকে নতুন প্রজাতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি এমন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলো আগে বিজ্ঞানের অজানা ছিল।

তবে এই নতুন প্রজাতিগুলো সরাসরি খননযন্ত্রের সংস্পর্শে এসে বা পলিমাটির প্রবাহে চাপা পড়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে, তীব্র শব্দ ও আলো দূষণের কারণে গভীর সমুদ্রের প্রাণীদের খাদ্য গ্রহণ ও প্রজনন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হতে পারে। যেহেতু অনেক গভীর সমুদ্রের প্রজাতি স্বাভাবিকভাবেই খুব ধীরে বংশবিস্তার করে, তাই এই প্রভাব তাদের টিকে থাকার সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

স্থলভাগেও প্রভাব
গভীর সমুদ্র খননের প্রভাব কেবল সমুদ্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এই শিল্পের জন্য উপকূলীয় এলাকায় প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবহনের অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ইতিহাস বলছে, এ ধরনের উন্নয়ন প্রায়ই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও সামুদ্রিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।