মরক্কোর উপকূলীয় শহর সাফিতে আকস্মিক বন্যায় অন্তত সাঁইত্রিশ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী রাবাত থেকে প্রায় তিনশ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই শহরে গত এক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
মুহূর্তে বদলে যাওয়া শহরের চিত্র
হঠাৎ নেমে আসা প্রবল স্রোত শহরের রাস্তা দিয়ে গাড়ি, ডাস্টবিন আর নানা জিনিস ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কাদা পানিতে তলিয়ে যায় ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্রের বড় অংশ। মোহাম্মদ পঞ্চম হাসপাতালে চৌদ্দজন আহতকে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অন্তত তিন দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সব হারানোর বেদনা
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাঁর সবকিছু ভেসে গেছে। প্রতিবেশীর দেওয়া পোশাক ছাড়া তাঁর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। কাদা আর ধ্বংসস্তূপে ঢেকে গেছে বাড়িঘর, দোকানপাট ও রাস্তাঘাট।
অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা
শহরের কেন্দ্রে অন্তত সত্তরটি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে গেছে। পঞ্চান্ন বছর বয়সী দোকানদার আবদেল কাদের মেজরা জানান, ব্যবসায়িক ক্ষতি ভয়াবহ। গয়নার দোকান ও কাপড়ের দোকানগুলোর সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা বাঁচাতে দ্রুত সরকারি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মানসিক আঘাত ও উদ্ধার তৎপরতা
রবিবার রাতেই উদ্ধারকর্মী আজেদ্দিন কাত্তানে বিপুল প্রাণহানির কারণে এই বিপর্যয়ের গভীর মানসিক প্রভাবের কথা বলেন। পানি নামতে শুরু করলে শহরজুড়ে দেখা যায় উল্টে পড়া গাড়ি আর কাদায় ঢাকা রাস্তা। ধ্বংসাবশেষ সরাতে একসঙ্গে কাজ করছে সিভিল প্রোটেকশন ইউনিট ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
খরা, জলবায়ু পরিবর্তন ও বাড়তে থাকা ঝুঁকি
মরক্কো টানা সপ্তম বছরের মতো তীব্র খরার মুখে রয়েছে। গত বছর ছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় আরও শক্তিশালী হচ্ছে। উষ্ণ বায়ুমণ্ডল বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারছে, আর উষ্ণ সমুদ্র ঝড়কে আরও তীব্র করে তুলছে। অতীতেও মরক্কোতে আকস্মিক বন্যায় বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যা ভবিষ্যতের ঝুঁকির দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
#মরক্কো #সাফি #আকস্মিকবন্যা #প্রাকৃতিকদুর্যোগ #জলবায়ুপরিবর্তন #খরা #উপকূলশহর #দুর্যোগসংবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















