যুদ্ধক্ষতির বিচারিক প্রক্রিয়ার পথে অগ্রগতি
রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ইউক্রেনে যে ব্যাপক ধ্বংস হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো একটি আন্তর্জাতিক দাবিদাওয়া কমিশন গঠনে সম্মত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত দি হাগে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়। নতুন এই কমিশনের কাজ হবে ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ি, অবকাঠামো, আহত বেসামরিক মানুষ এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির দাবি যাচাই ও প্রক্রিয়াকরণ করা। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা একে ন্যায়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন, যদিও যুদ্ধ এখনো চলমান।
এই কমিশন একটি বিদ্যমান ক্ষয়ক্ষতির নিবন্ধনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে, যেখানে ইতোমধ্যে বহু হাজার যাচাইকৃত দাবি সংরক্ষিত আছে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য। আনুষ্ঠানিক আইনি কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো নথিভুক্তি থেকে বাস্তব ক্ষতিপূরণের পথে এগোতে চায়। তবে চুক্তিটি কার্যকর হতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সংসদীয় অনুমোদন প্রয়োজন, ফলে ক্ষতিপূরণ পেতে সময় লাগবে।
শান্তির অংশ হিসেবে ন্যায়বিচার
ইউরোপীয় নেতারা বলেছেন, দায়বদ্ধতা ছাড়া টেকসই শান্তি সম্ভব নয়। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির বিচার না হলে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে তারা সতর্ক করেছেন। তাদের মতে, এই কমিশন বড় ধরনের সামরিক আগ্রাসনের দীর্ঘমেয়াদি আইনি ও আর্থিক পরিণতির বার্তা দেয়।

তহবিলের প্রশ্ন সবচেয়ে সংবেদনশীল। কিছু দেশ জব্দ করা রুশ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে, তবে আইনি জটিলতা রয়ে গেছে। সমালোচকদের মতে, কার্যকর প্রয়োগ ব্যবস্থা না থাকলে কমিশন প্রতীকী হয়ে পড়তে পারে। তবু কূটনীতিকরা মনে করেন, ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তির জন্য এখনই কাঠামো তৈরি করা জরুরি।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত
ক্ষতিপূরণ উদ্যোগের পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধের কূটনৈতিক আলোচনা জোরদার হয়েছে। ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধবিরতি কাঠামো, নিরাপত্তা গ্যারান্টি ও পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করছে। ইউক্রেন স্পষ্ট করে জানিয়েছে, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা ছাড়া কোনো সমঝোতা গ্রহণযোগ্য নয়।
পশ্চিমা দেশগুলো সামরিক জোটে সদস্যপদ না দিয়েও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার মডেল নিয়ে কথা বলছে। তবে রাশিয়ার অবস্থান কঠোর থাকায় পূর্ণাঙ্গ চুক্তির সম্ভাবনা অনিশ্চিত।
মানবিক ক্ষতি ও পুনর্গঠনের বাস্তবতা
ইউক্রেনে যুদ্ধের মানবিক ক্ষতি বিপুল। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, আর বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যবস্থার ওপর চাপ বেড়েছে। পুনর্গঠনের ব্যয় বর্তমান আন্তর্জাতিক সহায়তার তুলনায় অনেক বেশি।

সাধারণ মানুষের জন্য এই কমিশন তাদের ক্ষতির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। ক্ষতিপূরণ পেতে সময় লাগলেও, ন্যায়ের এই কাঠামো ভবিষ্যৎ পুনর্গঠন ও শান্তির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুদ্ধ থেমে গেলেও এর পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী—এই কমিশন সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

























