চীনের অর্থনীতিতে নতুন করে শ্লথতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারখানা উৎপাদন ও খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি এক বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এতে করে বেইজিংয়ের সামনে সংস্কার ও নতুন প্রবৃদ্ধির পথ খোঁজার চাপ আরও জোরালো হয়েছে।
উৎপাদন ও ভোগে ধাক্কা
সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শিল্প উৎপাদনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে চার দশমিক আট শতাংশে, যা গত বছরের আগস্টের পর সবচেয়ে দুর্বল। আগের মাসে এই হার ছিল চার দশমিক নয় শতাংশ। একই সঙ্গে ভোক্তা ব্যয়ের সূচক খুচরা বিক্রি বেড়েছে মাত্র এক দশমিক তিন শতাংশ, যা মহামারি-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ধীর গতি। প্রত্যাশার তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় বাজারে হতাশা ছড়িয়েছে।

রপ্তানিনির্ভর কৌশলের সীমাবদ্ধতা
চীনা নীতিনির্ধারকেরা চলতি বছর ঘরোয়া চাহিদা বাড়ানোর বদলে রপ্তানির ওপর ভর করে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে বিশাল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নিয়ে অসন্তোষ বাড়ায় এই কৌশল টেকসই থাকছে না। অনেক দেশই আমদানি বাধা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে চীনের রপ্তানিকে চাপে ফেলতে পারে।
সম্পত্তি খাতের দীর্ঘ ছায়া
অর্থনীতির আরেক বড় বোঝা হয়ে আছে সম্পত্তি খাত। নতুন বাড়ির দাম আরও কমেছে, বিনিয়োগও ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগ কমেছে দুই দশমিক ছয় শতাংশ, যার বড় কারণ সম্পত্তি বিনিয়োগে প্রায় ষোল শতাংশ পতন। একসময় মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জুড়ে থাকা এই খাত এখন ভোক্তা আস্থা ও শিল্প বিনিয়োগ দুই ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাজারে উদ্বেগ ও নীতির দ্বিধা
দুর্বল তথ্যের প্রভাবে শেয়ারবাজারেও চাপ পড়েছে। বড় আবাসন কোম্পানিগুলো ঋণ পরিশোধ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো কঠিন হয়ে উঠেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, অতিরিক্ত প্রণোদনা দিলেও এখন তা কাঙ্ক্ষিত ফল নাও দিতে পারে। বরং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুত এগিয়ে নেওয়াই হবে টেকসই সমাধান।
ভোক্তা আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ
কর্তৃপক্ষ স্বীকার করছে, গৃহস্থালির আস্থা বাড়াতে আরও পদক্ষেপ দরকার। এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে চলা বড় কেনাকাটার উৎসবও এ বছর ভোক্তাদের তেমন উৎসাহিত করতে পারেনি। গাড়ি বিক্রিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বছরের শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ক্ষীণ হচ্ছে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















