দুর্বল চাহিদার বাজারে নতুন ভূরাজনৈতিক ধাক্কা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব ‘নিষেধাজ্ঞাভুক্ত’ তেল ট্যাংকারের ওপর “সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক” ব্লকেডের নির্দেশ দেওয়ার পর তেলের দাম ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিশ্ববাজারে চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ ও অতিরিক্ত সরবরাহের আশঙ্কায় তেলদাম বহু বছরের নিম্নস্তরের দিকে যাচ্ছিল। ট্রেডারদের ভাষায়, প্রাথমিক উত্থান অনেকটাই ‘সেন্টিমেন্ট’ বা বাজার-মনস্তত্ত্বনির্ভর, কারণ বাস্তবে ব্লকেড কীভাবে কার্যকর হবে এবং কতদিন স্থায়ী হবে—তা নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা আছে।
এর আগের সেশনে তেলদাম প্রায় পাঁচ বছরের নিম্নস্তরের কাছাকাছি স্থির হয়েছিল। সেই চাপের একটি অংশ ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় অগ্রগতির খবর, যা ভবিষ্যতে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারে এবং বাজারে আরও সরবরাহ যোগ হতে পারে—এমন ধারণা। ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে ভেনেজুয়েলা ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কঠোর অবস্থান বাজারে নতুন ভেরিয়েবল তৈরি করেছে। ভেনেজুয়েলার উৎপাদন বৈশ্বিক হিসাবে ছোট হলেও কিছু নির্দিষ্ট গ্রেড ও নির্দিষ্ট ক্রেতার ক্ষেত্রে তার প্রভাব বেশি হতে পারে।
প্রথম দফায় বেঞ্চমার্ক তেলদাম বাড়লেও ট্রেডাররা সতর্ক। কেউ কেউ বলেছেন, উত্থানটি স্বল্পমেয়াদি হতে পারে, আর দুর্বল চাহিদা ও পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে অনেকে এটাকে ‘শর্ট পজিশন’ নেওয়ার সুযোগ হিসেবেও দেখবে। অর্থাৎ দাম বাড়লেও পরে চাপ ফিরতে পারে—এই ধারণা বাজারে আছে।
ভেনেজুয়েলার তেলের অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্লেষকদের মতে, ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদন মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের আনুমানিক ১ শতাংশের মতো। তবে তাদের সরবরাহের ক্রেতা-ভিত্তি তুলনামূলকভাবে কেন্দ্রীভূত। চীন ভেনেজুয়েলার বড় ক্রেতা, আর চীনের মোট আমদানিতে ভেনেজুয়েলার অংশও নজরে পড়ার মতো। ফলে বাধা তৈরি হলে তা বৈশ্বিক সংখ্যায় ছোট হলেও নির্দিষ্ট রিফাইনারি ও রুটের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে।
![]()
আরেকটি জটিলতা হলো ‘স্যানকশনড অয়েল’ বাজার। ভেনেজুয়েলা-সংশ্লিষ্ট বহু শিপমেন্ট নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজ ও জটিল রাউটিংয়ের মাধ্যমে হয়। এই বাজারে বিভিন্ন উৎসের ‘স্যানকশনড’ সরবরাহ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকায় বড় দামের লাফ দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে—এমন ধারণা আছে। অর্থাৎ বাধা মানেই তাৎক্ষণিক ঘাটতি—এ কথা নিশ্চিত নয়, যদি বিকল্প উৎস ও পথ খোলা থাকে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো প্রয়োগ। কতগুলো ট্যাংকার এতে পড়বে, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাস্তবে ব্লকেড কার্যকর করবে—তা স্পষ্ট নয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ট্যাংকার জব্দ করেছে এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অঞ্চলটিতে যুদ্ধজাহাজও সরিয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হলেও ভুল বোঝাবুঝি বা উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

শেভরন, ছাড়, এবং বাস্তবায়নের ধাঁধা
ভেনেজুয়েলার তেলের সব শিপিং একই রকম নয়। কিছু জাহাজ নিষেধাজ্ঞার আওতায়, আবার কিছু জাহাজ ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্ত হলেও অন্য রুটে চলছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শেভরনের চার্টার করা ট্যাংকারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আগের অনুমোদনের ভিত্তিতে ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রে বহন করছে। এই ব্যতিক্রমই দেখায়—ব্লকেড কি সম্পূর্ণ প্রবাহ থামানোর জন্য, নাকি নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাভুক্ত নেটওয়ার্ককে লক্ষ্য করে—এটা বড় প্রশ্ন।
যদি প্রয়োগ ‘নির্বাচিত’ হয়, বাজার দ্রুত শান্ত হতে পারে। আর যদি প্রয়োগ ব্যাপক হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বিশেষ করে ভারী ক্রুডের দামে এবং আমেরিকা অঞ্চলের ফ্লোতে তার প্রভাব বেশি দেখা যেতে পারে। আপাতত বাজার এই ঘটনাকে সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখছে। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতিতে সরবরাহ বাড়ার সম্ভাবনা, অন্যদিকে ভেনেজুয়েলার মতো জায়গায় হঠাৎ বিঘ্ন—এই দুই টানাপোড়েনে তেলদাম চলছে। এখন সবাই দেখবে শিরোনাম নয়, বাস্তবায়নের বিস্তারিত।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















