সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী বহু প্রবাসীর জীবনে দেশে টাকা পাঠানো একটি নিয়মিত অভ্যাস। মাস শেষে পরিবারের খরচ, পড়াশোনা কিংবা জরুরি ব্যয়ের জন্য এই অর্থ পাঠানো হয়। তবে মাঝেমধ্যেই একটি পুরোনো প্রশ্ন আবার সামনে আসে—নগদ টাকা পাঠানো ভালো, নাকি সোনা পাঠালে বেশি লাভ হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ছে, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে এবং সোনার দাম বারবার নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রবাসীদের মধ্যে সঞ্চয়ের কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে।
সোনা আর নগদের আচরণে পার্থক্য
সোনা ও নগদ অর্থের আচরণ একেবারেই আলাদা। সোনার দাম বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সাধারণত ডলারে নির্ধারিত হয়। ফলে মূল্যস্ফীতির সময়ে অনেক দেশের মুদ্রার তুলনায় সোনা তুলনামূলকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকে। এ কারণেই কিছু প্রবাসী অস্থির দেশীয় মুদ্রার বদলে সোনায় সঞ্চয় করতে আগ্রহী হন।

তবে সোনার সঙ্গে যুক্ত খরচগুলো অনেক সময় চোখে পড়ে না। গয়নার ক্ষেত্রে মজুরি যোগ হয়, কিছু সোনার ওপর আমিরাতে মূল্য সংযোজন কর প্রযোজ্য। আবার দেশে নেওয়ার সময় অনেক দেশে শুল্ক ও কর দিতে হয়, কখনো কখনো ঘোষণা না করলে জব্দের ঝুঁকিও থাকে। এর পাশাপাশি সোনা ব্যবহারযোগ্য করতে হলে তা বহন, যাচাই ও বিক্রি করতে হয়।
অন্যদিকে নগদ অর্থ পাঠানো এখন অনেক সহজ। ডিজিটাল রেমিট্যান্স অ্যাপের মাধ্যমে দ্রুত, কম খরচে এবং প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পৌঁছে যায়, যা দৈনন্দিন খরচের জন্য সরাসরি ব্যবহার করা সম্ভব।
নগদ লেনদেন কেন এখনও এগিয়ে
গত বছর আমিরাত থেকে বিদেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ পৌঁছেছে প্রায় একশ তিরাশি বিলিয়ন দিরহামে। এতে স্পষ্ট হয়, প্রবাসীদের পারিবারিক বাজেটে এই অর্থ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মতো দেশে মোট রেমিট্যান্সের বড় অংশই আসে আমিরাত থেকে।
সংক্ষেপে বলা যায়, সোনা মূল্য ধরে রাখে আর নগদ অর্থ দেয় তাৎক্ষণিক সুবিধা। নিয়মিত খরচের ক্ষেত্রে নগদ অর্থের বিকল্প নেই।

সোনার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
সব সীমাবদ্ধতার পরও দক্ষিণ এশিয়া ও আরব অঞ্চলের বহু পরিবারের কাছে সোনা শুধু সম্পদ নয়, এটি ঐতিহ্য ও পরিচয়ের অংশ। বিয়ে, উৎসব, দেনমোহর কিংবা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে উপহার হিসেবে সোনার গুরুত্ব আজও অটুট।
দুবাইয়ের এক পণ্য বিশ্লেষকের ভাষায়, দক্ষিণ এশীয় অনেক প্রবাসীর কাছে সোনা ভবিষ্যতের জন্য রেখে যাওয়ার একটি উত্তরাধিকার। এই কারণে বিশেষ কিছু সময়ে নগদ অর্থের চেয়ে সোনা পাঠানোকে বেশি অর্থবহ মনে করা হয়।
আমিরাতে সোনার বাজারের শক্ত অবস্থান
বিশ্বের অন্যতম সেরা সোনা কেনার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত আমিরাত। শুধু গত বছরেই দুবাইয়ের মূল্যবান ধাতুর বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয়শ পঁচিশ বিলিয়ন দিরহামে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এই শক্ত অবস্থান প্রবাসীদের সোনার দিকে আরও আকৃষ্ট করছে।

নিয়মকানুন জানা জরুরি
তবে সোনা পাঠানোর আগে নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি। যেমন ভারতে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি গয়না শুল্কমুক্ত নয়। সীমা ছাড়ালে উচ্চ কর বা জব্দের ঝুঁকি থাকে। আবার আমিরাত ছাড়ার সময় নির্দিষ্ট মূল্যের বেশি সোনা বা নগদ অর্থ থাকলে তা ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক।
সোনার দাম বাড়ার পেছনের কারণ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়তে থাকায় অনেকেই নগদের বদলে সোনায় সঞ্চয় করছেন। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সুদের হার স্থির হলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সোনার দিকে ঝোঁকে, এতে চাহিদা ও দাম বাড়ে।
কখন সোনা পাঠানো যুক্তিযুক্ত
সোনার দাম বাড়ার সময়ে সোনা পাঠালে দেশে তার মূল্য আরও বেশি হতে পারে, যা দুর্বল স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে একটি বড় সুবিধা। তবে একই সময়ে ডিজিটাল রেমিট্যান্স আরও সস্তা ও দ্রুত হওয়ায় নিয়মিত খরচের জন্য নগদ অর্থই বেশি কার্যকর।
দৈনন্দিন ব্যয়, স্কুল ফি বা বিল পরিশোধের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠাতে হলে ডিজিটাল লেনদেনই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত। আর দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়, এককালীন বড় অঙ্ক পাঠানো কিংবা সাংস্কৃতিক প্রয়োজনে সোনা এখনো শক্তিশালী একটি বিকল্প।
সহজভাবে ভাবলে, আজকের প্রয়োজনের জন্য পাঠান টাকা, ভবিষ্যতের জন্য পাঠান সোনা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















