চীনের পূর্বাঞ্চলের শহর ইওউকে বলা হয় বিশ্বের বড়দিনের রাজধানী। মাইলের পর মাইল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিশাল পাইকারি বাজারে বছরের বেশির ভাগ সময় জুড়েই তৈরি হয় বড়দিনের গাছ, অলংকার, টুপি, মালা আর ক্যান্ডি ক্যান। গ্রীষ্মে এখানে থাকে ব্যস্ততার গুঞ্জন, আর ডিসেম্বর এলেই বাজার অনেকটাই শান্ত। তবু এই শহরের পণ্যই চলতি বছরে চীনের রেকর্ড বাণিজ্য উদ্বৃত্ত গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
শুল্কযুদ্ধের ধাক্কা
বড়দিনের সাজসজ্জা রপ্তানিতে বিশ্বে চীনের আধিপত্য স্পষ্ট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র একাই কিনেছে চীনে উৎপাদিত অর্ধেকের বেশি বড়দিনের পণ্য। কিন্তু এ বছর সেই চিত্র বদলেছে। অক্টোবর পর্যন্ত দশ মাসে চীন রপ্তানি করেছে প্রায় পাঁচশো দশ কোটি ডলারের বড়দিনের সামগ্রী, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। এই পতনের মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কমে যাওয়া। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ এবং এখনো কার্যকর থাকা উচ্চ শুল্ক চীনা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নতুন বাজারের খোঁজে ইওউ
ইওউর বাজারে এখন স্প্যানিশ আর ইতালিয়ান ভাষার শুভেচ্ছা লেখা ব্যানার বেশি চোখে পড়ে। ইউরোপের দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছেন অনেক ব্যবসায়ী। জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কেউ কেউ আবার শুল্ক এড়াতে ঘুরপথও বেছে নিচ্ছেন। সান্তা ক্লজের পুতুল আলাদা আলাদা অংশে পাঠিয়ে অন্য দেশে জোড়া লাগিয়ে নতুন লেবেল দিয়ে বিক্রি করার মতো কৌশল শোনা যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ আর উদ্বেগ
ইওউর ব্যবসায়ীরা কেবল বড় দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়া থেকে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চলে। বাজারে শোনা যায় আরবি, স্প্যানিশসহ নানা ভাষা। যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা শোনা যায় নানা ভাষায়। এক বিক্রেতার কথায়, শুল্কের অনিশ্চয়তায় দাম ঠিক করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাজারও অনেকের হাতছাড়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের উত্তেজনায় সেখানকার ক্রেতাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে।

তবু আশা ফুরায় না
সব চাপের মধ্যে ইওউর বাজারে হতাশা পুরোপুরি গ্রাস করেনি। বড়দিনের পর রমজান, এরপর চীনা নববর্ষ—এক উৎসব শেষ হতেই আরেক উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। খ্রিস্টান, মুসলিমসহ নানা ধর্মীয় উৎসবের সাজসজ্জা তৈরি করেই টিকে আছে এই শহর। শুল্ক আর যুদ্ধের ছায়া থাকলেও ইওউর বাণিজ্য এখনো ঝিলমিল আশা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















