সন্তান জন্মের পর শরীরের পরিবর্তন অনেক নারীর কাছেই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই পরিবর্তন কখন যে অজানা রোগের সংকেত হয়ে ওঠে, তা বোঝা সহজ নয়। সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী কিন্নারি ভোসালের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। স্তনে ব্যথা, শক্ত গাঁট আর ক্রমবর্ধমান অস্বস্তি নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ভেবেছিলেন এটি হয়তো সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা। পরে পরীক্ষায় উঠে আসে, এটি ক্যানসার নয়, বরং এক বিরল প্রদাহজনিত রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেকেই আক্রমণ করছে
মা হওয়ার পর শুরু হয় সমস্যার যাত্রা
সারাক্ষণ ডেস্ক
চার বছর আগে যমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার পর কিন্নারির স্তন আকারে বড় হতে থাকে। মাসিকের সময় ব্যথা হলেও তা আগে সয়ে যেত। কিন্তু গত দুই বছরে সেই ব্যথা আর কমেনি। বরং বাম স্তনে শক্ত পাথরের মতো গাঁট অনুভূত হতে থাকে। প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও একসময় ব্যথা অসহনীয় হয়ে ওঠে।
ক্যানসারের আশঙ্কা, কিন্তু পরীক্ষায় ভিন্ন চিত্র
সারাক্ষণ ডেস্ক
প্রথমে পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে গেলে ক্যানসারের সন্দেহ করা হয়। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ম্যামোগ্রামসহ নানা পরীক্ষা করা হলেও ক্যানসারের প্রমাণ মেলেনি। তবু নিশ্চিত হতে দ্বিতীয় মত নেওয়া হয়। সেখানে টিস্যু পরীক্ষা ও বায়োপসির পর ধরা পড়ে গ্রানুলোমাটাস মাস্টাইটিস নামে এক বিরল দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত স্তনরোগ।
কী এই গ্রানুলোমাটাস মাস্টাইটিস
সারাক্ষণ ডেস্ক
এই রোগে স্তনের ভেতরের কোষকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। ফলে প্রদাহ, গাঁট, ব্যথা ও ফোলা দেখা দেয়। উপসর্গগুলো অনেক সময় প্রদাহজনিত স্তন ক্যান্সারের মতো হওয়ায় রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্তান জন্ম দেওয়া ও সাম্প্রতিক সময়ে স্তন্যদান করা নারীদের মধ্যেই এই রোগ বেশি দেখা যায়।

অস্ত্রোপচার ও দীর্ঘ চিকিৎসা প্রক্রিয়া
সারাক্ষণ ডেস্ক
প্রথমে ওষুধ ও বিকল্প চিকিৎসার পথ বেছে নিলেও একদিন হঠাৎ রক্ত ও পুঁজ বের হতে শুরু করলে জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হয়। বাম স্তনের একাধিক গাঁট অপসারণ করা হয়। এরপর টানা দুই মাস বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে শরীরের ভেতরের তরল বের করে আনা ও ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়া চলে। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগ চার মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে এবং অনেক সময় আপনা থেকেই শান্ত হয়ে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে আবার ফিরে আসার ঝুঁকিও থাকে।
জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন
সারাক্ষণ ডেস্ক
এই রোগ কিন্নারির দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলেছে। সন্তানদের কোলে নেওয়া বা শক্ত করে জড়িয়ে ধরা সম্ভব হয় না। স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতা ও সীমিত হয়ে গেছে, যাতে ব্যথা না বাড়ে। পাশাপাশি তিনি খাদ্যাভ্যাসে বড় পরিবর্তন এনেছেন। প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা খাবার ছেড়ে দিয়েছেন, গম ও গ্লুটেন এড়িয়ে চলছেন এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক তাজা ফল ও খাবার গ্রহণ করছেন।
আশা আর সতর্কতার মাঝেই জীবন
সারাক্ষণ ডেস্ক
যদিও জানেন এই রোগ আবার ফিরে আসতে পারে, তবু আপাতত ব্যথা ও ফোলা কম থাকায় তিনি স্বস্তিতে আছেন। পরিবারকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশা নিয়েই তিনি প্রতিদিন কাটাচ্ছেন। চিকিৎসকদের মতে, সচেতনতা বাড়লে এমন বিরল রোগ দ্রুত ধরা পড়বে এবং অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক বা ভুল চিকিৎসা এড়ানো সম্ভব হবে।
#স্তনেরোগ #নারীস্বাস্থ্য #বিরলরোগ #মাতৃত্ব #স্বাস্থ্যসচেতনতা #রোগপ্রতিরোধব্যবস্থা
Sarakhon Report 


















