যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রয়াত যৌন অপরাধী ও আর্থিক লগ্নিকারী জেফরি এপস্টেইনের তদন্তের নথিপত্র থেকে বেশ কিছু ফাইল হঠাৎ করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
জেফ্রি এপস্টেইন সম্পর্কিত হাজার হাজার নথিপত্রের মধ্যে গত শুক্রবার প্রকাশিত কমপক্ষে ১৩টি ছবি শনিবারের মধ্যে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা না দিয়েই ওয়েবসাইট থেকে সরানো ফেলা হয়।
ওইসব ছবির মধ্যে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবিও রয়েছে। যদিও সমালোচনার পরে সেটি আবারও প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা না দিয়েই আকস্মিকভাবে ছবি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাউস ওভারসাইট কমিটিতে থাকা ডেমোক্র্যাট সদস্যরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি পোস্টে তারা অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির উদ্দেশে লিখেছেন: “আবার কী ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে?”
যদিও ছবি সরিয়ে ফেলার সঙ্গে মি. ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী টড ব্লাঞ্চ।
রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে প্রকাশিত পোস্টে মার্কিন বিচার বিভাগ জানিয়েছে যে, ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার জন্য নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই বেশ কিছু ফাইল সরিয়ে ফেলা হয়, যেগুলোর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ছবিটিও ছিল।
তবে আরও পর্যালোচনার জন্য ‘সাময়িকভাবে’ ছবিটি সরানো হয় বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।
পর্যালোচনার পর ছবিটিতে ভুক্তভোগীদের চিত্রিত করার কোনও প্রমাণ পাওয়া না যাওয়ায় কোনো পরিবর্তন বা সংশোধন ছাড়াই সেটি পুনরায় ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয়েছে বলে দেশটির বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রোববার ভোরে ট্রাম্পের ছবিটি ওয়েবসাইটের একটি লিঙ্কে দেখা গেছে। তবে সরিয়ে ফেলা অন্য ফাইলগুলো রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওয়েবসাইটে পুনরায় প্রকাশিত হয়নি।
ট্রাম্পের কারণেই ছবিটি সরানো হয়েছিল, এমন অভিযোগ “হাস্যকর” বলে অভিহিত করেছেন আইনজীবী টড ব্লাঞ্চ। “এ ঘটনার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই,” এনবিসি নিউজকে বলেছেন মি. ব্লাঞ্চ।
“আগে প্রকাশিত কয়েক ডজন ছবিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইতোমধ্যেই মি. এপস্টেইনের সঙ্গে দেখা গেছে। কাজেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপস্থিতির কারণে একটি ছবি, একটিমাত্র ছবি সরিয়ে ফেলার দাবি অযৌক্তিক, হাস্যকর,” বলেন মি. ট্রাম্পের আইনজীবী।
মি. ব্লাঞ্চ উল্টো নিউইয়র্কের একজন বিচারকের কথা উল্লেখ করেছেন, যিনি “কোনো ভুক্তভোগী বা অধিকার গোষ্ঠী উদ্বেগ প্রকাশ করলে তাদের কথা শোনার নির্দেশ দিয়েছেন।”
ওই নির্দেশের কারণেই “গত শুক্রবার প্রকাশের পর বেশ কিছু ছবি সরিয়ে ফেলা হয়,” বলেন মি. ব্লাঞ্চ।
উল্লেখ্য যে, যৌন অপরাধী এপস্টেইনের সঙ্গে ছবি দেখা গেলেও কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এপস্টেইনের ভুক্তভোগীরাও এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে যৌন অপরাধী ও আর্থিক লগ্নিকারী জেফরি এপস্টেইনের তদন্তের সব ফাইল প্রকাশের বিষয়ে সম্মতি দেয় মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ।
৪২৭-১ ভোটে সেটি অনুমোদন করে প্রতিনিধি পরিষদ।
সেনেটের নেতা চাক শুমার বিলটি উত্থাপন করেন। এরপর সেনেট সর্বসম্মতিক্রমে আনুষ্ঠানিক ভোট ছাড়াই দ্রুত পাশ করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষর করার পর মার্কিন বিচার বিভাগ এসব নথিপত্র প্রকাশ করে।
২০ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার তদন্তের নথির মধ্যে কিছু জায়গায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
এটি ঘিরে ট্রাম্প এবং এপস্টেইনের সাথে তার সম্পর্ক আবারও খবরের শিরোনামে উঠে আসে। যদিও কোনো অন্যায় কাজে মি. ট্রাম্পের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস।

এপস্টেইন ফাইল কী?
২০০৮ সালে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর বাবা-মা ফ্লোরিডায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করে যে, নিজের পাম বিচের বাড়িতে তাদের মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেছে এপস্টেইন।
এই ঘটনায় এপস্টেইন প্রসিকিউটরদের সাথে একটি আপিল চুক্তিতে পৌঁছান।
তার পুরো বাড়িজুড়ে নারীদের ছবি পাওয়া যায় এবং তাকে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে যৌনকর্মে প্ররোচনার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
তখন থেকে তাকে যৌন অপরাধী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। তবে প্রসিকিউটরদের সঙ্গে চুক্তির ফলে বড় ধরনের জেলের সাজা থেকে রক্ষা পায় এপস্টেইন।
এগারো বছর পর আবারো, তার বিরুদ্ধে যৌনতার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের একটি নেটওয়ার্ক চালানোর অভিযোগ আনা হয়। বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় তিনি কারাগারে মারা যান এবং তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে রায় দেওয়া হয়।
এই দুটি ফৌজদারি তদন্তে বিপুল পরিমাণ নথিপত্র জড়ো করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের সাক্ষাৎকারের প্রতিলিপি এবং তার বিভিন্ন সম্পত্তিতে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা জিনিসপত্র।
তার ব্রিটিশ সহযোগী এবং প্রাক্তন বান্ধবী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধেও একটি পৃথক তদন্ত হয়েছিল, যাকে ২০২১ সালে এপস্টেইনের সাথে যৌনতার জন্য মেয়েদের পাচারের ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
ছবির উৎস,Getty Images
অভিযোগ রয়েছে, ট্রাম্প এবং এপস্টেইন সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, ২০০৮ সালে এপস্টেইন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি এপস্টেইনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
গত সপ্তাহে, হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা তিনটি ইমেইল চেইন প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে এপস্টেইন এবং ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে চিঠিপত্র, যিনি বর্তমানে যৌন পাচারের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
এদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে ২০১১ সালে পাঠানো একটি ইমেলও রয়েছে, যেখানে এপস্টেইন ম্যাক্সওয়েলকে লিখেছিলেন: “আমি চাই তুমি বুঝতে পারো যে কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করেনি সে ট্রাম্প, (ভিক্টিম) তার সাথে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছে।”
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে ইমেইলে উল্লেখিত ভুক্তভোগী হলেন এপস্টেইনকে অভিযুক্ত করা ভার্জিনিয়া গিফ্রে।
এপ্রিল মাসে মারা যাওয়া গিফ্রে বলেছিলেন যে তিনি কখনও ট্রাম্পকে কোনও নির্যাতনে অংশ নিতে দেখেননি এবং ইমেলগুলিতে ট্রাম্পের কোনও অন্যায়ের কোনও ইঙ্গিত নেই।
ট্রাম্পও এপস্টেইনের সাথে সম্পর্কিত কোনও অন্যায়ের কথা বারবার অস্বীকার করে আসছেন।
BBC News বাংলা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















