০৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ দলীয় মনোনয়ন না মিললেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন রুমিন ফারহানা বিকশিত বিহারের রূপরেখা নিয়ে দিল্লিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, মোদি ও শাহের সঙ্গে নীতিশের দীর্ঘ আলোচনা জেরুজালেমে গভীর রাতে উচ্ছেদ, গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ফিলিস্তিনি বসতভবন শারজাহর আবাসন বাজারে ডেভেলপমেন্ট অথরিটি  শুরুকের দাপট ভূমিকম্প থেকে বন্যা, এশিয়ায় চরম আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক বছর ক্ষমতায় এলে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের বিশেষ ভাতার ঘোষণা বিএনপির অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা, হরিপুর সীমান্তে মানবপাচারকারীসহ তিনজন আটক বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যুবকের দুই হাতের রগ কেটে দিল দুর্বৃত্তরা ক্রিসমাসের আলো নিভে যাওয়া শহর, ঝড়ে থমকে লিভেনওর্থের অর্থনীতি

শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি, দাবি না মানলে লং মার্চের ঘোষণা

শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন। এ সময় হত্যার সুষ্ঠু বিচারসহ চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবি পূরণ না হলে লং মার্চ ও রোড মার্চসহ ধারাবাহিক কর্মসূচির ঘোষণাও দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন
আজ বেলা সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ের মৈত্রী মিলনাতনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি ও শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশু। সভাপতিত্ব করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ডা. হারুন-অর-রশিদ, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার, গার্মেন্টস অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শামীম ইমাম, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমদ চৌধুরী এবং বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাজনৈতিক শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক নয়টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কারখানার সামনে শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যা করা হয়। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হয়। তবে র‌্যাব ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এবং স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, দীপু চন্দ্র দাস এমন কোনো কথা বলেছেন—এর পক্ষে সরাসরি প্রমাণ বা প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি।

কারখানা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
সংগঠনের নেতারা বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে কারখানার ভেতরে উত্তেজনা তৈরি হলে কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে দীপু চন্দ্র দাসকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয় এবং উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তৌহিদী জনতার ব্যানারে একদল উন্মত্ত লোক তাকে কারখানা থেকে বের করে এনে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এই বর্বর ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সারা দেশের মানুষ তা প্রত্যক্ষ করে। সংগঠনগুলোর দাবি, সন্ধ্যার দিকে উত্তেজনা শুরু হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সময়মতো জানায়নি। কারখানার ভেতরে গুজব ছড়িয়ে বাইরে পরিকল্পিতভাবে জনতা জড়ো করা হয় এবং রাত নয়টার দিকে দীপুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফলে এই হত্যাকাণ্ডে কারখানা কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও উদ্বেগ
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গাছে ঝুলিয়ে আগুন দেওয়ার পৈশাচিক উল্লাস তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে চলে। কারা এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছে এবং কারা এতে জড়িত, তা শনাক্ত করার দাবি জানানো হয়। নেতারা অভিযোগ করেন, পুরো ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট ছিল। স্থানীয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকেই নিতে হবে।

তাদের মতে, এই ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা ও আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন কেউ ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করতে না পারে, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।

চার দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রথমত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত নিহত দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তৃতীয়ত নিহতের পরিবারের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। চতুর্থত কারখানা ও আশপাশের এলাকায় যে ভয়ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে এবং এই ঘটনায় কোনো নিরপরাধ নাগরিক যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি, দাবি না মানলে লং মার্চের ঘোষণা

০৬:০০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন। এ সময় হত্যার সুষ্ঠু বিচারসহ চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবি পূরণ না হলে লং মার্চ ও রোড মার্চসহ ধারাবাহিক কর্মসূচির ঘোষণাও দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন
আজ বেলা সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ের মৈত্রী মিলনাতনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি ও শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশু। সভাপতিত্ব করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ডা. হারুন-অর-রশিদ, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার, গার্মেন্টস অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শামীম ইমাম, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমদ চৌধুরী এবং বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাজনৈতিক শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক নয়টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কারখানার সামনে শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যা করা হয়। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হয়। তবে র‌্যাব ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এবং স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, দীপু চন্দ্র দাস এমন কোনো কথা বলেছেন—এর পক্ষে সরাসরি প্রমাণ বা প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি।

কারখানা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
সংগঠনের নেতারা বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে কারখানার ভেতরে উত্তেজনা তৈরি হলে কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে দীপু চন্দ্র দাসকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয় এবং উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তৌহিদী জনতার ব্যানারে একদল উন্মত্ত লোক তাকে কারখানা থেকে বের করে এনে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এই বর্বর ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সারা দেশের মানুষ তা প্রত্যক্ষ করে। সংগঠনগুলোর দাবি, সন্ধ্যার দিকে উত্তেজনা শুরু হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সময়মতো জানায়নি। কারখানার ভেতরে গুজব ছড়িয়ে বাইরে পরিকল্পিতভাবে জনতা জড়ো করা হয় এবং রাত নয়টার দিকে দীপুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফলে এই হত্যাকাণ্ডে কারখানা কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও উদ্বেগ
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গাছে ঝুলিয়ে আগুন দেওয়ার পৈশাচিক উল্লাস তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে চলে। কারা এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছে এবং কারা এতে জড়িত, তা শনাক্ত করার দাবি জানানো হয়। নেতারা অভিযোগ করেন, পুরো ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট ছিল। স্থানীয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকেই নিতে হবে।

তাদের মতে, এই ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা ও আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন কেউ ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করতে না পারে, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।

চার দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রথমত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত নিহত দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তৃতীয়ত নিহতের পরিবারের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। চতুর্থত কারখানা ও আশপাশের এলাকায় যে ভয়ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে এবং এই ঘটনায় কোনো নিরপরাধ নাগরিক যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।