বাংলাদেশে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর ভারতের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে নিউ দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই ও হায়দরাবাদে প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ঘটনা ইতোমধ্যেই টানাপোড়েনের মধ্যে থাকা ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও চাপে ফেলেছে।
নিউ দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, হায়দরাবাদ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকা এবং আগরতলায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। হিন্দু সংগঠনগুলো বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের আশপাশে অবস্থান নিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি তোলে।
ময়মনসিংহে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ
বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে বাংলাদেশে দিপু চন্দ্র দাস নামে ২৫ বছর বয়সী এক হিন্দু পোশাকশ্রমিককে হত্যার ঘটনায়। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একদল লোক তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তাঁর মরদেহ একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কূটনৈতিক পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ
রাজপথে বিক্ষোভ জোরদার হওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক অঙ্গনেও উত্তেজনা দেখা দেয়। ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের দূতকে ডেকে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানায়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ এবং শিলিগুড়িতে একটি ভিসা সেন্টারে ভাঙচুরের ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন।
এরপর একই দিনে নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে। সেখানে ভারতীয় কর্মকর্তারা বাংলাদেশের এক চরমপন্থী ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্তের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং তাঁর মৃত্যুর জন্য ভারতকে দায়ী করে ভিত্তিহীন অভিযোগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, এসব অভিযোগের জেরে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ উসকে উঠেছে এবং গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে হামলার চেষ্টাও হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ
নিউ দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের নেতৃত্বে শত শত বিক্ষোভকারী গেরুয়া পতাকা হাতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের কাছে জড়ো হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ প্রায় দেড় হাজার সদস্য মোতায়েন করে এবং একাধিক ব্যারিকেড বসিয়ে বিক্ষোভকারীদের মিশন এলাকা থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরে আটকে দেয়।
বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা দাহ করে এবং হত্যাকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির দাবি জানায়।
কলকাতায় বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের কাছে বিক্ষোভ করে। বিপুল জনসমাগমে উত্তেজনা বাড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। মুম্বাইয়ে অনুরূপ বিক্ষোভে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে আটক করা হয়। হায়দরাবাদে বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন আরও জোরদার করার হুঁশিয়ারি দেয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সারা দেশের রাজনৈতিক নেতারা এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বিষয়টিকে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে বৃহত্তর উদ্বেগের সঙ্গে যুক্ত করেন। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই হত্যাকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
বিহার বিজেপির সভাপতি দিলীপ জয়সওয়াল অস্থিরতার পেছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেন। কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনেত ভারতের সরকারকে কূটনৈতিকভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
চাপের মুখে মুহাম্মদ ইউনূস দিপু চন্দ্র দাসের হত্যায় ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। বাংলাদেশের বাস্তব শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ঘটনাটিকে ‘কোনোভাবেই ন্যায্যতা নেই এমন নৃশংস অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মামলাটি ‘সম্পূর্ণ ও ব্যতিক্রমহীনভাবে’ এগিয়ে নেওয়া হবে।
( মূল প্রতিবেদনের পুরো অংশের বাংলা অনুবাদ। রিপোটটির হিন্দুস্থান টাইমে প্রকাশের সময় প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
হালনাগাদ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা ৫২ মিনিট)
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















