বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এবং উন্নয়ন ও জনগণ-জনগণের যোগাযোগের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে নয়াদিল্লি।
ভারতের অবস্থান ও বক্তব্য
নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি। তিনি জানান, ভারত সবসময় বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এক প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিষয়টিও অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত। ভারতের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এমন পরিবেশ থাকা প্রয়োজন, যেখানে সব পক্ষ অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ধারাবাহিক অবস্থান
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের অবস্থান সব সময়ই স্পষ্ট ও ধারাবাহিক। ভারতের লক্ষ্য বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করা, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা।
ভারতবিরোধী বক্তব্য ও আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ওঠা ভারতবিরোধী মন্তব্য প্রসঙ্গে জয়সওয়াল বলেন, এসব বিষয়ে ভারত একাধিকবার অবস্থান পরিষ্কার করেছে এবং বিভ্রান্তিকর ও ভ্রান্ত বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে সে দেশের সরকারের দায়িত্ব, বাস্তবতার বাইরে গিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া সঠিক নয়।

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের ধারাবাহিক সহিংসতা, বিশেষ করে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা গভীর উদ্বেগের বিষয়। তিনি ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানান এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
এর আগে বাংলাদেশ সরকার ভারতের পক্ষ থেকে একটি বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের ওপর সামগ্রিক হামলা হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি ভালো।

সহিংসতার তথ্য ও দাবি
ভারতের বক্তব্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ভূমি দখলসহ প্রায় দুই হাজার নয়শোর বেশি সহিংসতার ঘটনা স্বাধীন সূত্রে নথিভুক্ত হয়েছে। জয়সওয়াল বলেন, এসব ঘটনাকে কেবল গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন বা রাজনৈতিক সহিংসতা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মিয়ানমার প্রসঙ্গ
মিয়ানমার বিষয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরে জয়সওয়াল বলেন, ভারত দেশটিতে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পক্ষে। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে সেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন প্রয়োজন, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















