০১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
মার্কিন শীতঝড়ে আকাশপথে অচলাবস্থা, বাতিল ও বিলম্বে ষোলো হাজারের বেশি ফ্লাইট নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, আহত অ্যান্থনি জোশুয়া, নিহত ঘনিষ্ঠ দুই সতীর্থ সাংস্কৃতিক জাগরণে নতুন অধ্যায়: দুই হাজার পঁচিশে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশ্বমুখী অর্জন সিরিয়ায় ফেরার টান, অপেক্ষার বাস্তবতা চীনে বিরল পাখি রক্ষার লড়াই: ভোরের অন্ধকারে শিকারিদের পিছু ধাওয়া শহরের শ্বাসরোধ: আবর্জনা, দূষণ আর ভাঙা রাস্তায় কেন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে ভারতের মহানগর সাবালেঙ্কা–কিরিওসের লড়াই নিয়ে বিতর্ক, তবু ইতিবাচক দিকই দেখছেন দুই তারকা যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার চাপে রাশিয়ার কারখানা ফিরিয়ে নিতে পারছে না হুন্ডাই আর্জেন্টিনায় স্বপ্নের গম মৌসুম শেষের পথে, রেকর্ড ফলনে কৃষকের মুখে হাসি চীনের রেকর্ড সামরিক মহড়া তাইওয়ান ঘিরে, উত্তেজনা কম বলে মন্তব্য ট্রাম্পের

নিউইয়র্ক ছাড়ছেন শিল্পীরা, ঝুঁকিতে শহরের সৃজনশীল পরিচয়

নিউইয়র্ক বহু দশক ধরে শিল্পী ও সৃজনশীল মানুষের শহর হিসেবে পরিচিত। উচ্চ ভাড়া, বিলম্বিত পাতালরেল আর নানা অসুবিধা সত্ত্বেও এই শহরের শিল্পসংস্কৃতি মানুষকে টেনেছে, আটকে রেখেছে। কিন্তু এখন সেই পরিচয়ই বড় প্রশ্নের মুখে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাড়তে থাকা জীবনযাত্রার খরচ আর আবাসন সংকটে নিউইয়র্ক ছেড়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা, আর এর প্রভাব পড়ছে পুরো সৃজনশীল অর্থনীতিতে

সৃজনশীল খাতের সংকোচন
এক সময় নিউইয়র্কের শিল্পখাত বিজ্ঞাপন, টেলিভিশন, প্রকাশনা ও স্থাপত্যের মতো মধ্যবিত্ত পেশাকে শক্ত ভিত দিয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে চিত্র বদলেছে। সেন্টার ফর আরবান ফিউচারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পর থেকে নৃত্যশিল্পী, ফ্যাশন ডিজাইনার, ভিডিও সম্পাদক ও গ্রাফিক ডিজাইনারের সংখ্যা কমেছে। এক সময় যেখানে শিল্পীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল, সেখানে এখন উল্টো ধারা। একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে প্রায় পঞ্চাশটি গ্যালারি, থিয়েটার ও ক্লাব।

ব্যয়বহুল শহর, অসম্ভব টিকে থাকা
শিল্পীদের বড় সংকট এখন বাসা আর স্টুডিও—দুটোই ধরে রাখা। অনেকের পক্ষেই একই সঙ্গে দুটো ভাড়া দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাড়তি বীমা খরচে হাঁসফাঁস করছে শিল্পকেন্দ্রগুলো। তার ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তারে কিছু সৃজনশীল কাজ হারিয়ে যাচ্ছে। মহামারির সময় যে দান-অনুদান শিল্পীদের কিছুটা ভরসা জুগিয়েছিল, তা-ও কমে এসেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এক ধরনের মোড় ঘোরানো সময়।

With Prices Soaring, Can New York Survive as a Mecca for the Arts? - The New  York Times

শহরের পরিচয় হারানোর শঙ্কা
শিল্পীরা চলে গেলে ক্ষতি শুধু তাঁদের নয়। শিল্প থেকে অনুপ্রেরণা ও দক্ষতা নেওয়া বিজ্ঞাপন ও নকশার মতো খাতও দুর্বল হয়ে পড়ছে। পর্যটন ও শহরের সাংস্কৃতিক আকর্ষণও হুমকির মুখে। বিজ্ঞাপন জগতের শীর্ষ এক নির্বাহী বলছেন, তরুণ কর্মীরা এখন আর নিউইয়র্ককেই একমাত্র গন্তব্য ভাবছেন না; তুলনামূলক সস্তা শহরে কাজের সুযোগ খুঁজছেন।

সংগ্রামের মধ্যেই টিকে থাকার চেষ্টা
সব প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক শিল্পী নতুন পথ খুঁজছেন। কোথাও নাইটক্লাব আর কমিউনিটি সেন্টার মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন মিলনকেন্দ্র। কেউ আবার ট্রাকে করে অস্থায়ী প্রদর্শনী চালু করেছেন, কারণ স্থায়ী গ্যালারির খরচ বহন করা সম্ভব নয়। কেউ নিজ শোবার ঘরেই ছবি আঁকছেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও। তাঁদের বিশ্বাস, মানিয়ে নেওয়াই নিউইয়র্কে টিকে থাকার একমাত্র উপায়।

আবাসন সংকট ও সরকারি উদ্যোগ
শিল্পীদের জন্য আলাদা আবাসন প্রকল্প বহুদিন ধরে নেই। পুরোনো কয়েকটি প্রকল্পে অপেক্ষমাণ তালিকা এত লম্বা যে নতুন আবেদন নেওয়া বন্ধ। নতুন আইন প্রস্তাব এনে শিল্পীদের জন্য আবাসন নির্মাণ সহজ করার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে শহর কর্তৃপক্ষ সাংস্কৃতিক তহবিল বাড়িয়েছে, নাইটলাইফ দপ্তর চালু করেছে এবং বিনা মূল্যে শিল্পসামগ্রী সরবরাহের উদ্যোগ জোরদার করেছে। তবু বাস্তবতা হলো, নিউইয়র্কের সামগ্রিক ব্যয় সংকট না কাটলে শিল্পীদের টিকে থাকা কঠিন।

ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা
দীর্ঘদিন ধরে যারা এই শহরে শিল্প গড়েছেন, তাঁদের আশঙ্কা স্পষ্ট। নতুন প্রজন্মের সৃজনশীল মানুষদের জন্য নিউইয়র্ক আর আগের মতো সম্ভাবনার শহর থাকছে না। এক অভিজ্ঞ ডিজাইনারের কথায়, শিল্পই শেষ পর্যন্ত সত্যের আশ্রয়। সেই শিল্প যদি ভেঙে পড়ে, তবে আশা হারানোর আশঙ্কাও তৈরি হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

মার্কিন শীতঝড়ে আকাশপথে অচলাবস্থা, বাতিল ও বিলম্বে ষোলো হাজারের বেশি ফ্লাইট

নিউইয়র্ক ছাড়ছেন শিল্পীরা, ঝুঁকিতে শহরের সৃজনশীল পরিচয়

১১:৪৬:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্ক বহু দশক ধরে শিল্পী ও সৃজনশীল মানুষের শহর হিসেবে পরিচিত। উচ্চ ভাড়া, বিলম্বিত পাতালরেল আর নানা অসুবিধা সত্ত্বেও এই শহরের শিল্পসংস্কৃতি মানুষকে টেনেছে, আটকে রেখেছে। কিন্তু এখন সেই পরিচয়ই বড় প্রশ্নের মুখে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাড়তে থাকা জীবনযাত্রার খরচ আর আবাসন সংকটে নিউইয়র্ক ছেড়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা, আর এর প্রভাব পড়ছে পুরো সৃজনশীল অর্থনীতিতে

সৃজনশীল খাতের সংকোচন
এক সময় নিউইয়র্কের শিল্পখাত বিজ্ঞাপন, টেলিভিশন, প্রকাশনা ও স্থাপত্যের মতো মধ্যবিত্ত পেশাকে শক্ত ভিত দিয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে চিত্র বদলেছে। সেন্টার ফর আরবান ফিউচারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পর থেকে নৃত্যশিল্পী, ফ্যাশন ডিজাইনার, ভিডিও সম্পাদক ও গ্রাফিক ডিজাইনারের সংখ্যা কমেছে। এক সময় যেখানে শিল্পীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল, সেখানে এখন উল্টো ধারা। একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে প্রায় পঞ্চাশটি গ্যালারি, থিয়েটার ও ক্লাব।

ব্যয়বহুল শহর, অসম্ভব টিকে থাকা
শিল্পীদের বড় সংকট এখন বাসা আর স্টুডিও—দুটোই ধরে রাখা। অনেকের পক্ষেই একই সঙ্গে দুটো ভাড়া দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাড়তি বীমা খরচে হাঁসফাঁস করছে শিল্পকেন্দ্রগুলো। তার ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তারে কিছু সৃজনশীল কাজ হারিয়ে যাচ্ছে। মহামারির সময় যে দান-অনুদান শিল্পীদের কিছুটা ভরসা জুগিয়েছিল, তা-ও কমে এসেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এক ধরনের মোড় ঘোরানো সময়।

With Prices Soaring, Can New York Survive as a Mecca for the Arts? - The New  York Times

শহরের পরিচয় হারানোর শঙ্কা
শিল্পীরা চলে গেলে ক্ষতি শুধু তাঁদের নয়। শিল্প থেকে অনুপ্রেরণা ও দক্ষতা নেওয়া বিজ্ঞাপন ও নকশার মতো খাতও দুর্বল হয়ে পড়ছে। পর্যটন ও শহরের সাংস্কৃতিক আকর্ষণও হুমকির মুখে। বিজ্ঞাপন জগতের শীর্ষ এক নির্বাহী বলছেন, তরুণ কর্মীরা এখন আর নিউইয়র্ককেই একমাত্র গন্তব্য ভাবছেন না; তুলনামূলক সস্তা শহরে কাজের সুযোগ খুঁজছেন।

সংগ্রামের মধ্যেই টিকে থাকার চেষ্টা
সব প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক শিল্পী নতুন পথ খুঁজছেন। কোথাও নাইটক্লাব আর কমিউনিটি সেন্টার মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন মিলনকেন্দ্র। কেউ আবার ট্রাকে করে অস্থায়ী প্রদর্শনী চালু করেছেন, কারণ স্থায়ী গ্যালারির খরচ বহন করা সম্ভব নয়। কেউ নিজ শোবার ঘরেই ছবি আঁকছেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও। তাঁদের বিশ্বাস, মানিয়ে নেওয়াই নিউইয়র্কে টিকে থাকার একমাত্র উপায়।

আবাসন সংকট ও সরকারি উদ্যোগ
শিল্পীদের জন্য আলাদা আবাসন প্রকল্প বহুদিন ধরে নেই। পুরোনো কয়েকটি প্রকল্পে অপেক্ষমাণ তালিকা এত লম্বা যে নতুন আবেদন নেওয়া বন্ধ। নতুন আইন প্রস্তাব এনে শিল্পীদের জন্য আবাসন নির্মাণ সহজ করার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে শহর কর্তৃপক্ষ সাংস্কৃতিক তহবিল বাড়িয়েছে, নাইটলাইফ দপ্তর চালু করেছে এবং বিনা মূল্যে শিল্পসামগ্রী সরবরাহের উদ্যোগ জোরদার করেছে। তবু বাস্তবতা হলো, নিউইয়র্কের সামগ্রিক ব্যয় সংকট না কাটলে শিল্পীদের টিকে থাকা কঠিন।

ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা
দীর্ঘদিন ধরে যারা এই শহরে শিল্প গড়েছেন, তাঁদের আশঙ্কা স্পষ্ট। নতুন প্রজন্মের সৃজনশীল মানুষদের জন্য নিউইয়র্ক আর আগের মতো সম্ভাবনার শহর থাকছে না। এক অভিজ্ঞ ডিজাইনারের কথায়, শিল্পই শেষ পর্যন্ত সত্যের আশ্রয়। সেই শিল্প যদি ভেঙে পড়ে, তবে আশা হারানোর আশঙ্কাও তৈরি হয়।