০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু শেয়ারবাজারে পতন: সপ্তাহ শেষে লাল সংকেতে ডিএসই ও সিএসই ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬২)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
  • 85

শ্রী নিখিলনাথ রায়

শিবির সন্নিবেশ করিয়া পিপিনা পর্যন্ত অগ্রসর হইয়াছিলেন। নবাব সরফরাজ খ। মুর্শিদাবাদ হইতে যাত্রা করিয়া প্রথম দিনে বামনিয়া, দ্বিতীয়দিনে দেওয়ানসরাই ও তৃতীয়দিনে খামরায় উপস্থিত হন। খামরা হইতে নবাব গিরিয়ায় শিবির সন্নিবেশ করেন; কিন্তু তাঁহার কতক সৈন্য খামরায় অবস্থিতি করিতে থাকে। নবাব গিরিয়ায়। উপস্থিত হইলে, তাঁহার প্রধান সেনাপতি গওস খাঁ ভাগীরথী পার হইয়া প্রায় সূতী পর্য্যন্ত ধাবিত হন। এই সমরে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধির প্রস্তাব চলিতেছিল; কিন্তু সে সন্ধি কার্য্যে পরিণত না হওয়ায়, পুনর্ব্বার যুদ্ধাগ্নি প্রজ্বলিত হইয়া উঠে।

আলিবর্দ্দদী নিজ সৈন্তদিগকে তিন ভাগে বিভক্ত করিয়া এক ভাগ নন্দলাল নামে এক জন বিশ্বস্ত কর্মচারীর অধীনে রাখিয়া, অপর দুই দল নিজে লইয়া রাত্রিযোগে নদীপার হইলেন। গওস খাঁর সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য নন্দলালের প্রতি আদেশ ছিল এবং তিনি নিজে সরফরাজের শিবির আক্রমণ করিবার জন্য ধাবিত হন। রিয়াজে লিখিত আছে যে, গওস খাঁ ও মীর সরফউদ্দীন গিরিয়ানালার পারে শিবির সন্নিবেশ করিয়াছিলেন।+ এই গিরিয়ানালার কোন অনুসন্ধান পাওয়া যায় না; মৃতাক্ষরীনে লিখিত আছে যে, আলিবদ্দী নদীর যে তীরে শিবির সন্নিবেশ করিয়া- ছিলেন, সেই তীরে গওস খাঁর সহিত নন্দলালের যুদ্ধ হয়। ইহাতে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরই বুঝা যাইতেছে।

তাহা হইলে গিরিয়ানালা ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে হওয়ার সম্ভাবনা।রেনেলের কাশীমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে গিরিয়া যুদ্ধপ্রান্তরের নিকট একটি নালা ভাগীরথীর পূর্ব্ব তীরে দৃষ্ট হয়, তাহা এক্ষণে বালুকাস্তূপমধ্যে প্রোথিত। কারণ, ভাগীরথী পশ্চিম হইতে অনেক পূর্ব্বে সরিয়া আসিয়াছেন। সায়রের। কথানুসারে গওস খাঁর অবস্থান পশ্চিমতীরেই বুঝায়। প্রভাত হইবামাত্র আলিবর্দ্দদী নিজের অধীন দুই দল সৈন্য লইয়া সরফরাজকে সম্মুখ ও পশ্চাৎ উভয় দিক্ দিয়া আক্রমণ করিলেন। এদিকে নন্দলালও গওস খাঁর সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইল।

সরফরাজ হস্তিপৃষ্ঠে বিপক্ষের সম্মুখীন হইলেন। নবাবের হস্তিচালক তাঁহাকে আসন্ন বিপদ হইতে উদ্ধার করার জন্য রণস্থল হইতে পলায়ন করিতে উদ্যত হইয়াছিল। কিন্তু সরফরাজ তাহাকে তিরস্কার করিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করেন। অধিক দূর অগ্র- সর হইতে না হইতে একটি বন্দুকের গুলি সরফরাজের মস্তিষ্কে প্রবিষ্ট হওয়ায়, তিনি হস্তিপৃষ্ঠে শায়িত হন। মুর্শিদাবাদের নবাবদিগের মধ্যে কেবল সরফরাজই সমরক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দিয়াছিলেন।  হস্তিচালক তাঁহার মৃত দেহ বহন করিয়া মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইলে, তাহা নেক্টাখালির প্রাসাদে সমাহিত করা হয়।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬২)

১১:০০:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

শিবির সন্নিবেশ করিয়া পিপিনা পর্যন্ত অগ্রসর হইয়াছিলেন। নবাব সরফরাজ খ। মুর্শিদাবাদ হইতে যাত্রা করিয়া প্রথম দিনে বামনিয়া, দ্বিতীয়দিনে দেওয়ানসরাই ও তৃতীয়দিনে খামরায় উপস্থিত হন। খামরা হইতে নবাব গিরিয়ায় শিবির সন্নিবেশ করেন; কিন্তু তাঁহার কতক সৈন্য খামরায় অবস্থিতি করিতে থাকে। নবাব গিরিয়ায়। উপস্থিত হইলে, তাঁহার প্রধান সেনাপতি গওস খাঁ ভাগীরথী পার হইয়া প্রায় সূতী পর্য্যন্ত ধাবিত হন। এই সমরে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধির প্রস্তাব চলিতেছিল; কিন্তু সে সন্ধি কার্য্যে পরিণত না হওয়ায়, পুনর্ব্বার যুদ্ধাগ্নি প্রজ্বলিত হইয়া উঠে।

আলিবর্দ্দদী নিজ সৈন্তদিগকে তিন ভাগে বিভক্ত করিয়া এক ভাগ নন্দলাল নামে এক জন বিশ্বস্ত কর্মচারীর অধীনে রাখিয়া, অপর দুই দল নিজে লইয়া রাত্রিযোগে নদীপার হইলেন। গওস খাঁর সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য নন্দলালের প্রতি আদেশ ছিল এবং তিনি নিজে সরফরাজের শিবির আক্রমণ করিবার জন্য ধাবিত হন। রিয়াজে লিখিত আছে যে, গওস খাঁ ও মীর সরফউদ্দীন গিরিয়ানালার পারে শিবির সন্নিবেশ করিয়াছিলেন।+ এই গিরিয়ানালার কোন অনুসন্ধান পাওয়া যায় না; মৃতাক্ষরীনে লিখিত আছে যে, আলিবদ্দী নদীর যে তীরে শিবির সন্নিবেশ করিয়া- ছিলেন, সেই তীরে গওস খাঁর সহিত নন্দলালের যুদ্ধ হয়। ইহাতে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরই বুঝা যাইতেছে।

তাহা হইলে গিরিয়ানালা ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে হওয়ার সম্ভাবনা।রেনেলের কাশীমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে গিরিয়া যুদ্ধপ্রান্তরের নিকট একটি নালা ভাগীরথীর পূর্ব্ব তীরে দৃষ্ট হয়, তাহা এক্ষণে বালুকাস্তূপমধ্যে প্রোথিত। কারণ, ভাগীরথী পশ্চিম হইতে অনেক পূর্ব্বে সরিয়া আসিয়াছেন। সায়রের। কথানুসারে গওস খাঁর অবস্থান পশ্চিমতীরেই বুঝায়। প্রভাত হইবামাত্র আলিবর্দ্দদী নিজের অধীন দুই দল সৈন্য লইয়া সরফরাজকে সম্মুখ ও পশ্চাৎ উভয় দিক্ দিয়া আক্রমণ করিলেন। এদিকে নন্দলালও গওস খাঁর সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইল।

সরফরাজ হস্তিপৃষ্ঠে বিপক্ষের সম্মুখীন হইলেন। নবাবের হস্তিচালক তাঁহাকে আসন্ন বিপদ হইতে উদ্ধার করার জন্য রণস্থল হইতে পলায়ন করিতে উদ্যত হইয়াছিল। কিন্তু সরফরাজ তাহাকে তিরস্কার করিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করেন। অধিক দূর অগ্র- সর হইতে না হইতে একটি বন্দুকের গুলি সরফরাজের মস্তিষ্কে প্রবিষ্ট হওয়ায়, তিনি হস্তিপৃষ্ঠে শায়িত হন। মুর্শিদাবাদের নবাবদিগের মধ্যে কেবল সরফরাজই সমরক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দিয়াছিলেন।  হস্তিচালক তাঁহার মৃত দেহ বহন করিয়া মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইলে, তাহা নেক্টাখালির প্রাসাদে সমাহিত করা হয়।