০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু শেয়ারবাজারে পতন: সপ্তাহ শেষে লাল সংকেতে ডিএসই ও সিএসই ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬৪)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪
  • 83

শ্রী নিখিলনাথ রায়

পরে তিনি গিরিয়া হইতে গওস খাঁ, তাঁহার পুত্রদ্বয়ের ও অন্যান্য সহচরের মৃতদেহ উত্তোলন করিয়া ভাগলপুরে লইয়া গিয়া আবার সমাহিত করেন এবং আয়ুঃপূর্ণ হইলে প্রিয় শিষ্য গওস খাঁর পার্শ্বে নিজেও সমাহিত হন। প্রভুর অগ্নে প্রতিপালিত হইয়া প্রভুর সিংহাসন রক্ষার জন্য অকাতরে প্রাণবিসর্জন দেওয়ায়, গওস খাঁ সাধারণের নিকট মহাপুরুষ বলিয়া কীর্ত্তিত হইয়া আসিতেছেন। আলিবর্দী খাঁ এক দিকে যেমন বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ব্বক প্রভুপুত্রের রক্তপাত করিয়া সিংহাসন লাভ করেন, অন্যদিকে সেইরূপ গওস খাঁ ও তাহার পুত্রদ্বয় আপনাদিগের শোণিত দান করিয়া প্রভুর সিংহাসন রক্ষা করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন।

গওস খাঁর সেই অনুপম মহত্ত্ব বহু দিন হইতে গিরিয়ার চতুঃপার্শ্বে গ্রাম্য-কবিতায় গীত হইয়া আসিতেছে। সাধারণ লোকে ‘তাঁহাকে অতিমানুষ বলিয়া বিবেচনা করিয়া থাকে। এরূপ বিবেচনা সাধারণের মনে সহজেই উপস্থিত হইতে পারে। যিনি সপরিবারে ফকীরের নিকট দীক্ষিত হইয়া প্রভুর কল্যাণসাধনোদ্দেশে অনায়াসে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারেন এবং যাঁহার পরিবারস্থ স্ত্রী-পুরুষ। প্রত্যেকেই বীরত্বের পূর্ণাবতার, তাঁহাকে অতিমানুষ বিবেচনা করা অধিকতর আশ্চর্য্যের বিষয় নহে।

গিরিয়ার যে স্থানে গওস খাঁর পবিত্র দেহ পতিত হয়, তথায় তাঁহার স্মৃতির জন্য একটি দরগা নির্মিত হইয়াছিল। গিরিয়ার নিকট মমীন- টোলা গ্রামের চাঁদপুর নামক মৌজায় উক্ত দরগা নির্মিত হয়। চাঁদ- গুর ভাগীরথীর পূর্ব্ব তীরে ছিল। মমীনটোলার কিয়দংশ গঙ্গায় ভাঙ্গিয়া যাওয়ায়, চাঁদপুর এক্ষণে পশ্চিম তীরে পড়িয়াছে। ত্রিশ বৎসরেরও অধিক হইল, গওস খাঁর সে দরগা এক্ষণে ভাগীরথী-গর্ভস্থ হইয়াছে। বর্তমান সময়ে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে নূতন চাঁদপুরে আর একটি সামান্ত দরগা নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। গওস খাঁর দরগা মুসলমানগণ অত্যন্ত শ্রদ্ধাসহকারে পূজা করিয়া থাকেন।

১১৪০ খৃঃ অব্দের শেষ ভাগে গিরিয়ায় প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। গওস খাঁর সহিত সরফরাজের অন্যান্য অনেক সেনাপতি যুদ্ধস্থলে প্রাণ- বিসর্জন করিয়াছিলেন। বিজয়সিংহ নামে সরফরাজের জনৈক রাজপুত সেনাপতি প্রথমে খামরার নিকট অবস্থিতি করিতেছিলেন; পরে অগ্রসর হইয়া অত্যন্ত বীরত্ব প্রদর্শনপূর্ব্বক ভূতলশায়ী হন। তাঁহার নবমবর্ষীয় পুত্র জালিম সিংহও এই যুদ্ধে অদ্ভুত বীরত্ব প্রকাশ করিয়াছিল। যে স্থলে সেই রাজপুত বালক অলৌকিক বীরত্ব দেখাইয়াছিল, তাহাকে অদ্যাপি জালিম সিংহের মাঠ কহিয়া থাকে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬৪)

১১:০০:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

পরে তিনি গিরিয়া হইতে গওস খাঁ, তাঁহার পুত্রদ্বয়ের ও অন্যান্য সহচরের মৃতদেহ উত্তোলন করিয়া ভাগলপুরে লইয়া গিয়া আবার সমাহিত করেন এবং আয়ুঃপূর্ণ হইলে প্রিয় শিষ্য গওস খাঁর পার্শ্বে নিজেও সমাহিত হন। প্রভুর অগ্নে প্রতিপালিত হইয়া প্রভুর সিংহাসন রক্ষার জন্য অকাতরে প্রাণবিসর্জন দেওয়ায়, গওস খাঁ সাধারণের নিকট মহাপুরুষ বলিয়া কীর্ত্তিত হইয়া আসিতেছেন। আলিবর্দী খাঁ এক দিকে যেমন বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ব্বক প্রভুপুত্রের রক্তপাত করিয়া সিংহাসন লাভ করেন, অন্যদিকে সেইরূপ গওস খাঁ ও তাহার পুত্রদ্বয় আপনাদিগের শোণিত দান করিয়া প্রভুর সিংহাসন রক্ষা করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন।

গওস খাঁর সেই অনুপম মহত্ত্ব বহু দিন হইতে গিরিয়ার চতুঃপার্শ্বে গ্রাম্য-কবিতায় গীত হইয়া আসিতেছে। সাধারণ লোকে ‘তাঁহাকে অতিমানুষ বলিয়া বিবেচনা করিয়া থাকে। এরূপ বিবেচনা সাধারণের মনে সহজেই উপস্থিত হইতে পারে। যিনি সপরিবারে ফকীরের নিকট দীক্ষিত হইয়া প্রভুর কল্যাণসাধনোদ্দেশে অনায়াসে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারেন এবং যাঁহার পরিবারস্থ স্ত্রী-পুরুষ। প্রত্যেকেই বীরত্বের পূর্ণাবতার, তাঁহাকে অতিমানুষ বিবেচনা করা অধিকতর আশ্চর্য্যের বিষয় নহে।

গিরিয়ার যে স্থানে গওস খাঁর পবিত্র দেহ পতিত হয়, তথায় তাঁহার স্মৃতির জন্য একটি দরগা নির্মিত হইয়াছিল। গিরিয়ার নিকট মমীন- টোলা গ্রামের চাঁদপুর নামক মৌজায় উক্ত দরগা নির্মিত হয়। চাঁদ- গুর ভাগীরথীর পূর্ব্ব তীরে ছিল। মমীনটোলার কিয়দংশ গঙ্গায় ভাঙ্গিয়া যাওয়ায়, চাঁদপুর এক্ষণে পশ্চিম তীরে পড়িয়াছে। ত্রিশ বৎসরেরও অধিক হইল, গওস খাঁর সে দরগা এক্ষণে ভাগীরথী-গর্ভস্থ হইয়াছে। বর্তমান সময়ে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে নূতন চাঁদপুরে আর একটি সামান্ত দরগা নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। গওস খাঁর দরগা মুসলমানগণ অত্যন্ত শ্রদ্ধাসহকারে পূজা করিয়া থাকেন।

১১৪০ খৃঃ অব্দের শেষ ভাগে গিরিয়ায় প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। গওস খাঁর সহিত সরফরাজের অন্যান্য অনেক সেনাপতি যুদ্ধস্থলে প্রাণ- বিসর্জন করিয়াছিলেন। বিজয়সিংহ নামে সরফরাজের জনৈক রাজপুত সেনাপতি প্রথমে খামরার নিকট অবস্থিতি করিতেছিলেন; পরে অগ্রসর হইয়া অত্যন্ত বীরত্ব প্রদর্শনপূর্ব্বক ভূতলশায়ী হন। তাঁহার নবমবর্ষীয় পুত্র জালিম সিংহও এই যুদ্ধে অদ্ভুত বীরত্ব প্রকাশ করিয়াছিল। যে স্থলে সেই রাজপুত বালক অলৌকিক বীরত্ব দেখাইয়াছিল, তাহাকে অদ্যাপি জালিম সিংহের মাঠ কহিয়া থাকে।