০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু শেয়ারবাজারে পতন: সপ্তাহ শেষে লাল সংকেতে ডিএসই ও সিএসই ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬৫)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪
  • 44

শ্রী নিখিলনাথ রায়

গিরিয়া হইতে অর্দ্ধ ক্রোশের কিছু অধিক দক্ষিণপূর্ব্ব মিঠিপুর নামে এক গ্রাম আছে; মিঠিপুর হইতে খামরা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রান্তরের নামই জালিম সিংহের মাঠ।  গিরিয়া হইতে খামরা দুই ক্রোশের অধিক পূর্ব্বে অবস্থিত। জালিম সিংহের মাঠের নিকট আকবরপুর নামে এক খানি ক্ষুদ্র গ্রাম আছে। মিঠিপুর গ্রামে কয়েকঘর চৌহান রাজপুত বাস করেন। তাঁহারা এই রূপ বলিয়া থাকেন যে, প্রতাপাদিত্যের পরাজয়ের পর, ভবানন্দ মজুম- দারকে নদীয়ায় প্রতিষ্ঠিত করিয়া যৎকালে মানসিংহ ভাগীরথীর পূর্ব্বতীরস্থ প্রসিদ্ধ বাদসাহী সড়ক দিয়া দিল্লী গমন করিতেছিলেন, সেই সময়ে তাঁহারা খামরা পর্যন্ত অগ্রসর হইলে, মানসিংহের অনুচর কতিপয় চৌহান রাজপুত কোন কারণবশতঃ দিল্লী যাইতে ইচ্ছা না করিয়া মিঠিপুরে আপনাদিগের বাসস্থান নির্দেশ করেন; বর্তমান চৌহানগণ তাঁহাদিগের বংশধর বলিয়া আপনাদিগের পরিচয় দেন।

বিজয় সিংহ মিঠিপুরস্থ রাজপুতবংশীয় কি রাজপুতনা হইতে নবাগত, তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। মিঠিপুর ও গিরিয়ার মধ্যে কাণা- পুকুর নামে একটি ক্ষুদ্র পুষ্করিণী আছে। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, যুদ্ধের সময় জলাভাব বশতঃ যুদ্ধাস্ত্রদ্বারা তাহা খনন করা হইয়াছিল। বর্ষাকাল ব্যতীত অন্যসময় তাহা শুদ্ধাবস্থায় অবস্থিতি করে। দীঘল গিরিয়া ও ছোট গিরিয়া নামে এক্ষণে প্রায় পরস্পর সংলগ্ন দুই খানি গ্রাম হইয়াছে। দীঘল গিরিয়া হইতেই ছোট গিরিয়ার উৎপত্তি। অষ্টাদশ শতাব্দীর যুদ্ধের সময় হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত গিরিয়া গ্রামের মধ্যে মধ্যে স্থান পরিবর্তন ঘটিয়াছে বলিয়া বোধ হয়।

মীর কাসেমের সৈন্যের সহিত ইংরেজদিগের যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাহার স্থল বিভিন্ন। এই যুদ্ধ কেবলই ভাগীরথীর পশ্চিমতীরে বাঁশলই নদীর মোহানার নিকট হইয়াছিল। সে স্থানের কিয়দংশ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে এবং ভাগীরথীর পূর্ব্বতীরে লালখাঁর দেওয়াড় নামে সুবৃহৎ চরে পরিণত হইয়াছে। লালখার দেওয়াড় এক্ষণে এক খানি বিস্তৃত পল্লী হইয়া উঠিয়াছে। বাঁশলইয়ের বর্তমান মোহানা হইতে পূর্ব্ব মোহানা অপেক্ষাকৃত পূর্ব্বদিকে ছিল; এক্ষণে তাহা লালখাঁর দেওয়া- ড়ের গর্ভস্থ। বাঁশলই রাজমহল পর্ব্বতশ্রেণী হইতে বহির্গত হইয়া নানা- স্থলে বক্রগতি অবলম্বনপূর্ব্বক জঙ্গীপুরের নিকট কানুপুর নামক স্থানের উত্তরে ভাগীরথীর সহিত মিলিত হইয়াছে।

এই কানুপুরে বহুসংখ্যক দস্যুর বাস ছিল। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, তাহারা খাইবার গিরিপথ হইতে উড়িষ্যা পর্যন্ত সর্ব্বত্র দস্যুবৃত্তি করিত। বাঁশলইএর মোহানা হইতে সূতী তিন ক্রোশেরও অধিক উত্তর হইবে। মীর কাসেমের সৈন্য কাটওয়া ও মোতৗঝিলের নিকট পরাজিত হইয়া সূতীতে আসিয়া অন্যান্য সৈন্যদের সহিত মিলিত হয়। সূতীতে মীর কাসেমের ইউরো- পীয় ও আর্ম্মেণীয় সেনাপতি সমরু ও মার্কার অবস্থিতি করিতেছিলেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬৫)

১১:০০:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

গিরিয়া হইতে অর্দ্ধ ক্রোশের কিছু অধিক দক্ষিণপূর্ব্ব মিঠিপুর নামে এক গ্রাম আছে; মিঠিপুর হইতে খামরা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রান্তরের নামই জালিম সিংহের মাঠ।  গিরিয়া হইতে খামরা দুই ক্রোশের অধিক পূর্ব্বে অবস্থিত। জালিম সিংহের মাঠের নিকট আকবরপুর নামে এক খানি ক্ষুদ্র গ্রাম আছে। মিঠিপুর গ্রামে কয়েকঘর চৌহান রাজপুত বাস করেন। তাঁহারা এই রূপ বলিয়া থাকেন যে, প্রতাপাদিত্যের পরাজয়ের পর, ভবানন্দ মজুম- দারকে নদীয়ায় প্রতিষ্ঠিত করিয়া যৎকালে মানসিংহ ভাগীরথীর পূর্ব্বতীরস্থ প্রসিদ্ধ বাদসাহী সড়ক দিয়া দিল্লী গমন করিতেছিলেন, সেই সময়ে তাঁহারা খামরা পর্যন্ত অগ্রসর হইলে, মানসিংহের অনুচর কতিপয় চৌহান রাজপুত কোন কারণবশতঃ দিল্লী যাইতে ইচ্ছা না করিয়া মিঠিপুরে আপনাদিগের বাসস্থান নির্দেশ করেন; বর্তমান চৌহানগণ তাঁহাদিগের বংশধর বলিয়া আপনাদিগের পরিচয় দেন।

বিজয় সিংহ মিঠিপুরস্থ রাজপুতবংশীয় কি রাজপুতনা হইতে নবাগত, তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। মিঠিপুর ও গিরিয়ার মধ্যে কাণা- পুকুর নামে একটি ক্ষুদ্র পুষ্করিণী আছে। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, যুদ্ধের সময় জলাভাব বশতঃ যুদ্ধাস্ত্রদ্বারা তাহা খনন করা হইয়াছিল। বর্ষাকাল ব্যতীত অন্যসময় তাহা শুদ্ধাবস্থায় অবস্থিতি করে। দীঘল গিরিয়া ও ছোট গিরিয়া নামে এক্ষণে প্রায় পরস্পর সংলগ্ন দুই খানি গ্রাম হইয়াছে। দীঘল গিরিয়া হইতেই ছোট গিরিয়ার উৎপত্তি। অষ্টাদশ শতাব্দীর যুদ্ধের সময় হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত গিরিয়া গ্রামের মধ্যে মধ্যে স্থান পরিবর্তন ঘটিয়াছে বলিয়া বোধ হয়।

মীর কাসেমের সৈন্যের সহিত ইংরেজদিগের যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাহার স্থল বিভিন্ন। এই যুদ্ধ কেবলই ভাগীরথীর পশ্চিমতীরে বাঁশলই নদীর মোহানার নিকট হইয়াছিল। সে স্থানের কিয়দংশ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে এবং ভাগীরথীর পূর্ব্বতীরে লালখাঁর দেওয়াড় নামে সুবৃহৎ চরে পরিণত হইয়াছে। লালখার দেওয়াড় এক্ষণে এক খানি বিস্তৃত পল্লী হইয়া উঠিয়াছে। বাঁশলইয়ের বর্তমান মোহানা হইতে পূর্ব্ব মোহানা অপেক্ষাকৃত পূর্ব্বদিকে ছিল; এক্ষণে তাহা লালখাঁর দেওয়া- ড়ের গর্ভস্থ। বাঁশলই রাজমহল পর্ব্বতশ্রেণী হইতে বহির্গত হইয়া নানা- স্থলে বক্রগতি অবলম্বনপূর্ব্বক জঙ্গীপুরের নিকট কানুপুর নামক স্থানের উত্তরে ভাগীরথীর সহিত মিলিত হইয়াছে।

এই কানুপুরে বহুসংখ্যক দস্যুর বাস ছিল। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, তাহারা খাইবার গিরিপথ হইতে উড়িষ্যা পর্যন্ত সর্ব্বত্র দস্যুবৃত্তি করিত। বাঁশলইএর মোহানা হইতে সূতী তিন ক্রোশেরও অধিক উত্তর হইবে। মীর কাসেমের সৈন্য কাটওয়া ও মোতৗঝিলের নিকট পরাজিত হইয়া সূতীতে আসিয়া অন্যান্য সৈন্যদের সহিত মিলিত হয়। সূতীতে মীর কাসেমের ইউরো- পীয় ও আর্ম্মেণীয় সেনাপতি সমরু ও মার্কার অবস্থিতি করিতেছিলেন।