০৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাপানের আনন্দময় “সাকে ট্রেন”-এ এক যাত্রা সফটব্যাংক ভিশন ফান্ডে বড় ধরনের ছাঁটাই। লক্ষ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৌদি- পাকিস্তান সামরিক প্যাক্ট ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব এশিয়ার বিলিয়ন-ডলারের মুনকেক বাজারে নতুন ধারা: দুবাই চকলেট ও পিস্তাচিওর ছোঁয়া শিম্পাঞ্জিদের খাদ্যে অ্যালকোহলের উপস্থিতি ১৯৮৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের উত্তরাধিকার আজও মিয়ানমার পেরুর মরুভূমি থেকে আবিষ্কৃত নতুন নগরী: আমেরিকার ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হচ্ছে চীনকে সমর্থন ও যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের সিজে-১০০০: বিশ্বের প্রথম হাইপারসনিক ‘প্লেন কিলার’ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে নতুন ধারণা অফ-সিজনে তরমুজ চাষে নড়াইলের কৃষকদের বাম্পার লাভ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭৬)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪
  • 63

শ্রী নিখিলনাথ রায়

ভাস্কর পণ্ডিতের মৃত্যুশ্রবণে রঘুজী অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া অবশেষে স্বয়ং সসৈন্যে বাঙ্গলায় আসিয়া উপস্থিত হন। তিনি প্রথমে উড়িষ্যায় আগমন করেন এবং তথাকার শাসনকর্তা দুর্লভরামকে বন্দী করিয়া, বীরভূম প্রদেশ দলিত করিতে করিতে বিহারে উপস্থিত হন। তথায় বিদ্রোহী আফগান সৈন্যদিগের সহিত তাঁহার মিলন সংঘটিত হয়। বিহারে নবাবের সহিত মহারাষ্ট্রীয়দিগের ঘোরতর যুদ্ধ ঘটে। ক্রমাগত যুদ্ধে উভয় পক্ষই অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া উঠে। বিশেষতঃ নবাবের অনেক আফগানসৈন্য উৎসাহসহকারে যুদ্ধ না করিয়া, বিদ্রোহী আফগানদিগের সহিত মিলিত হইবার জন্য চেষ্টা করিতেছিল। নবাব আফগানদিগের ব্যবহারে অত্যন্ত মর্মাহত হইয়া কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়েন।

সম্মুখে ভীষণ শত্রুগণ সর্ব্বধ্বংসসূচক হুঙ্কার ছাড়িতেছে, এদিকে নিজ সৈন্যগণ বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ব্বক তাঁহার পক্ষ পরিত্যাগ করিতে উত্থত, এরূপ অব- স্থায় নবাবের মন অত্যন্ত বিচলিত হইয়া উঠিল। এক দিন সহসা তিনি অন্তঃপুরমধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া নবাব-বেগমের সম্মুখে উপবিষ্ট হইলেন। নবাববেগম তাঁহাকে বিষন্নচিত্ত দেখিয়া অনুযোগ করিলেন। অনন্তর নবাবের বিষাদের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, নবাব বলিলেন যে, আমি আমার লোকদিগের মধ্যে অন্ত্যরূপ ভাব দেখিতেছি, কেন যে এ সকল ব্যাপার ঘটিতেছে, বলিতে পারি না। নবাববেগম এই কথা শুনিয়া নিজেই মজঃফর আলি খাঁ ও ফকীর আলি খাঁ নামক দুই ব্যক্তিকে রঘুজীর নিকট দূতস্বরূপ পাঠাইয়া দেন।

যাহাতে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হয়, তাহাই তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল। তাঁহারা মহারাষ্ট্রীয়দিগের পথপ্রদর্শক ও নবাবের প্রবল শত্রু মীর হাবীবের নিকট উপস্থিত হইলে, মীর হাবীব তাঁহাদিগকে রঘুঙ্গীর নিকট লইয়া যান। রঘুজীও পুনঃ পুনঃ যুদ্ধে পরিক্লান্ত হইয়া মনে মনে সন্ধিস্থাপনে উৎসুক হইলেও মীর হাবীব তাহাতে বাধা দিয়া তাঁহাকে আলিবদ্দীর বিরুদ্ধে বারংবার উত্তেজিত করেন। মীর হাবীবের উত্তেজনায় রঘুজী সন্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিয়া, মুর্শিদাবাদ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হইলেন। রঘুজীকে সন্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিতে দেখিয়া, নবাব ও বেগমের পরামর্শানুসারে পুনর্ব্বার নবাবসৈন্যগণ মহারাষ্ট্রীয়দিগের পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতে লাগিল এবং তাহাদিগকে আক্রমণ করিয়া ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিল।

মহারাষ্ট্রীয়গণ যেরূপ নবাব আলিবদ্দী খাঁকে ব্যাকুল করিয়াছিল, সেই রূপ কতিপয় আফগান সেনানীও তাঁহাকে কিছুদিন অশান্তির হিল্লোলে ভাসমান করিয়া তুলে। তাহার প্রধান সেনাপতি মোস্তাফা খা, সমশের খাঁ প্রভৃতি বিদ্রোহী হইয়া বিহার প্রদেশে অত্যন্ত গোলযোগ ঘটাইয়াছিল। মোস্তাফা খাঁ প্রথমে হত হয়। তাহার পর আফগানেরা কথঞ্চিৎ ভগ্নোপ্তম হইয়া কৌশলপূর্ব্বক নবাবের রাজ্যে নানারূপ উৎপাত করিতে থাকে। আলিবন্দীর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা এবং সিরাজউদ্দৌলার পিতা জৈনুদ্দীন তৎকালে বিহারের শাসনকর্তার পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আফগানের। কথঞ্চিং শান্তভাব অবলম্বন করায় জৈনুদ্দীন তাহাদিগকে নিজ সৈন্যগণের অন্তর্ভূত করিতে ইচ্ছা করেন।

জাপানের আনন্দময় “সাকে ট্রেন”-এ এক যাত্রা

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭৬)

১১:০০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

ভাস্কর পণ্ডিতের মৃত্যুশ্রবণে রঘুজী অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া অবশেষে স্বয়ং সসৈন্যে বাঙ্গলায় আসিয়া উপস্থিত হন। তিনি প্রথমে উড়িষ্যায় আগমন করেন এবং তথাকার শাসনকর্তা দুর্লভরামকে বন্দী করিয়া, বীরভূম প্রদেশ দলিত করিতে করিতে বিহারে উপস্থিত হন। তথায় বিদ্রোহী আফগান সৈন্যদিগের সহিত তাঁহার মিলন সংঘটিত হয়। বিহারে নবাবের সহিত মহারাষ্ট্রীয়দিগের ঘোরতর যুদ্ধ ঘটে। ক্রমাগত যুদ্ধে উভয় পক্ষই অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া উঠে। বিশেষতঃ নবাবের অনেক আফগানসৈন্য উৎসাহসহকারে যুদ্ধ না করিয়া, বিদ্রোহী আফগানদিগের সহিত মিলিত হইবার জন্য চেষ্টা করিতেছিল। নবাব আফগানদিগের ব্যবহারে অত্যন্ত মর্মাহত হইয়া কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়েন।

সম্মুখে ভীষণ শত্রুগণ সর্ব্বধ্বংসসূচক হুঙ্কার ছাড়িতেছে, এদিকে নিজ সৈন্যগণ বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ব্বক তাঁহার পক্ষ পরিত্যাগ করিতে উত্থত, এরূপ অব- স্থায় নবাবের মন অত্যন্ত বিচলিত হইয়া উঠিল। এক দিন সহসা তিনি অন্তঃপুরমধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া নবাব-বেগমের সম্মুখে উপবিষ্ট হইলেন। নবাববেগম তাঁহাকে বিষন্নচিত্ত দেখিয়া অনুযোগ করিলেন। অনন্তর নবাবের বিষাদের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, নবাব বলিলেন যে, আমি আমার লোকদিগের মধ্যে অন্ত্যরূপ ভাব দেখিতেছি, কেন যে এ সকল ব্যাপার ঘটিতেছে, বলিতে পারি না। নবাববেগম এই কথা শুনিয়া নিজেই মজঃফর আলি খাঁ ও ফকীর আলি খাঁ নামক দুই ব্যক্তিকে রঘুজীর নিকট দূতস্বরূপ পাঠাইয়া দেন।

যাহাতে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হয়, তাহাই তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল। তাঁহারা মহারাষ্ট্রীয়দিগের পথপ্রদর্শক ও নবাবের প্রবল শত্রু মীর হাবীবের নিকট উপস্থিত হইলে, মীর হাবীব তাঁহাদিগকে রঘুঙ্গীর নিকট লইয়া যান। রঘুজীও পুনঃ পুনঃ যুদ্ধে পরিক্লান্ত হইয়া মনে মনে সন্ধিস্থাপনে উৎসুক হইলেও মীর হাবীব তাহাতে বাধা দিয়া তাঁহাকে আলিবদ্দীর বিরুদ্ধে বারংবার উত্তেজিত করেন। মীর হাবীবের উত্তেজনায় রঘুজী সন্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিয়া, মুর্শিদাবাদ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হইলেন। রঘুজীকে সন্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিতে দেখিয়া, নবাব ও বেগমের পরামর্শানুসারে পুনর্ব্বার নবাবসৈন্যগণ মহারাষ্ট্রীয়দিগের পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতে লাগিল এবং তাহাদিগকে আক্রমণ করিয়া ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিল।

মহারাষ্ট্রীয়গণ যেরূপ নবাব আলিবদ্দী খাঁকে ব্যাকুল করিয়াছিল, সেই রূপ কতিপয় আফগান সেনানীও তাঁহাকে কিছুদিন অশান্তির হিল্লোলে ভাসমান করিয়া তুলে। তাহার প্রধান সেনাপতি মোস্তাফা খা, সমশের খাঁ প্রভৃতি বিদ্রোহী হইয়া বিহার প্রদেশে অত্যন্ত গোলযোগ ঘটাইয়াছিল। মোস্তাফা খাঁ প্রথমে হত হয়। তাহার পর আফগানেরা কথঞ্চিৎ ভগ্নোপ্তম হইয়া কৌশলপূর্ব্বক নবাবের রাজ্যে নানারূপ উৎপাত করিতে থাকে। আলিবন্দীর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা এবং সিরাজউদ্দৌলার পিতা জৈনুদ্দীন তৎকালে বিহারের শাসনকর্তার পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আফগানের। কথঞ্চিং শান্তভাব অবলম্বন করায় জৈনুদ্দীন তাহাদিগকে নিজ সৈন্যগণের অন্তর্ভূত করিতে ইচ্ছা করেন।