শ্রী নিখিলনাথ রায়
যে সময়ে তাহারা সমাহিত করিবার জন্য ভূমি হইতে মৃতদেহ উত্তোলন করে, সেই সময়ে সেই অসংখ্য নর- নারীর মধ্য হইতে ঈদৃশ রোদন ও শোকের ধ্বনি উঠিয়াছিল, যে তাহাতে যেন আকাশ বিদীর্ণ হইবার উপক্রম হইল। এই রূপ ঘটনা পূর্ব্বে কখনও দৃষ্ট বা শ্রুত হয় নাই।” নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁর মৃত্যুর পর তাঁহার প্রণয়িণী ঘসেটা বেগম আপনার যাবতীয় সম্পত্তি লইয়া মোতিঝিলের প্রাসাদে অবস্থিতি করিতেছিলেন।
এই সময়ে আলিবর্দী খাঁ মৃত্যুশয্যায় শায়িত হন। ঘসেটা বেগম সিরাজের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি জানিতেন যে, আলিবন্দীর মৃত্যুর পর সিরাজই বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার সিংহাসনে উপবিষ্ট হইবেন। ঘসেটী আত্মরক্ষার ও সিরাজের সিংহাসনারোহণে বাধা প্রদানের জন্দ্র পরলোকগত স্বামীর সৈন্যদিগকে হস্তী ও লক্ষ মুদ্রা প্রদান করিয়া বন্ধপরিকর হইতে অনুরোধ করেন। প্রায় দশ সহস্র সৈক্স প্রতিজ্ঞাপূর্ব্বক একবাক্যে তাঁহার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতে কৃতসংকল্প হইল।
হোসেনকুলী খাঁর মৃত্যুর পরে রাজা রাজবল্লভ ঢাকার সহকারী শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত হন; আলিবর্দীর মৃত্যুসময়ে তিনি মুর্শিদাবাদে উপস্থিত ছিলেন। ঘসেটা বেগম তাঁহাকে অত্যন্ত বিশ্বাস করিতেন। বেগমের রক্ষার জন্য রাজা গোপনে কাশীম- বাজারের ইংরেজ-কুঠীর অধ্যক্ষ ওয়াট্স সাহেবের সহিত সিরাজের বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন। তিনি স্বীয় পুত্র কৃষ্ণদাসকে সপরি- বারে কলিকাতায় পাঠাইয়া দেন। সিরাজ তাঁহার সহিত ইংরেজদের এইরূপ অসদ্ব্যবহারের কথা মৃত্যুশয্যায় শায়িত আলিবন্দীকে জানাইলে, -নবাব কাশীমবাজারের সার্জন ফোর্থ সাহেবকে সে কথা জিজ্ঞাসা করেন।
ফোর্থ সাহেব সে কথা অস্বীকার করিয়াছিলেন। সিরাজ কিন্তু ইহার প্রমাণের জন্য পুনর্ব্বার চেষ্টা করিতে প্রবৃত্ত হন; ইতিমধ্যে আলিবন্দী খাঁর জীবনবায়ুর অবসান হয়। আলিবন্দীর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ খৃঃ অব্দের এপ্রিল মাসে সিরাজর উদ্দৌলা মোতিঝিল আক্রমণ করিবার আদেশ দিলেন। ঘসেটা বেগম যে সমস্ত সৈন্যকে পূর্ব্ব হইতে অর্থাদি প্রদান করিয়া তাঁহার সাহায্যের জর প্রস্তুত হইতে বলেন, তাহাদের মধ্যে অধিকাংশই অগ্রে পলায়ন করে।
Leave a Reply