০২:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কিউবার পথে সর্বনাশের ছায়া ভেনিজুয়েলার তেলে মার্কিন অবরোধে দ্বীপ রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা সৌদি সম্মানে ভূষিত পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কে নতুন বার্তা ভ্যান্সকে ঘিরে ডানপন্থীদের নতুন সমীকরণ, ২০২৮ দৌড়ে আগাম প্রস্তুতি শুরু স্বাস্থ্য উপহারই এবার উৎসবের নতুন ট্রেন্ড চীনা প্রযুক্তিতে মার্কিন বিনিয়োগে কড়াকড়ি, নতুন আইনে নজরদারি ও প্রতিরক্ষা খাতে বড় বাঁক ক্ষমতার সীমা ভাঙার বছর ট্রাম্পের, বিতর্ক আর দ্রুত সিদ্ধান্তে কাঁপল হোয়াইট হাউস শহরের স্পন্দনে কুপ্রা: সিটি গ্যারেজে বদলে যাচ্ছে নগর সংস্কৃতির মানচিত্র ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত, ঋণের চাপ আর সংস্কারের চ্যালেঞ্জ: শ্রীলঙ্কা এক সংকটে আটকে পড়েছে জিএমের বৈশ্বিক দৌড় ফর্মুলা ওয়ানকে হাতিয়ার করে নতুন বাজারে আমেরিকার অটো জায়ান্ট মাদুরো পতনের ছক কি যুদ্ধ ডেকে আনবে ক্যারিবিয়ানে

জীবন আমার বোন (পর্ব-৪৯)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪
  • 86

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

সবচেয়ে মারাত্মক টাইপ যেটার সাধারণত সে আসে রাত্রে, একটা লাল রঙের ফিয়াট ক্যুপে চালায় ছোকরা। একটা ঝড়। ঝড়ের মতো গাড়ি চালায়। দিনের বেলায় খোকাহোক খোকাহোক খো-কাহোক ধরনের হর্ন বাজিয়ে দু’চারটে পাক মেরে যায়। তার মানে তুমি চাগিয়ে ওঠো, সেই রাত্রিবেলায় আমি আসবো। লাইটপোস্টের নিচে গাড়ি পার্ক ক’রে দাঁড়াবো। তারপর টাইম ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপনের মতো গাড়িতে হেলান দিয়ে কায়দা মেরে দাঁড়িয়ে কিং সাইজের ফিলটার টিপড় সিগ্রেট ধরাবো। ব্যাটাছেলে নিজেই একটা ফিলটার সিগ্রেট। পালক ছড়ানো সেদ্ধ হাঁসের মতো ফকফকে। ঝুলপি দু’টি বিরাট। মনে হয় স্রেফ তার ঝুলপি নামাবার জন্যেই সৃষ্টিকর্তা ওর হুঁকোর খোলের মতো চোখামার্কা মুখটা দিয়েছেন; ওই ঝুলপি না থাকলে ও নিজেই হুঁকোর খোলটা ডেনে ফেলে দিত। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে ছোকরা। ভাবখানা এই: আমি একটা চোঙা, কোন্ শালা আমায় ফোঁকে, আসুক দেখি। যথেষ্ট আছে ওর বাবার, বোঝা যায়; শালা শুয়োরের বাচ্চা, মনে মনে গাল দেয় খোকা।

তবু, এদের হয়তো কোনো দোষই নেই, এক একবার মনে হয় খোকার। ওদের নাচাচ্ছে বেলী। অদৃষ্টের মতো ওদের খেলিয়ে মজা লুটছে; ওরা নাচছে, পাগলের মতো নাচছে।

একদিন তো সামান্য একটুর জন্যে নেহাত ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছে বেচারা ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি-পায়জামা। লম্বা ঝুলপির ক্যুপে অতিশয় লাল চোখ হ’য়ে বুনো শুয়োরের মতো গাঁক গাঁক ক’রে দাবড়ানি দিয়েছিলো তাকে; কাদাপানিতে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আলুভর্তা হ’য়ে যেত বেচারা সেদিন। গাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার ক’রে উঠেছিলো ছোকরা, মিডল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেব, শালা!

সত্যি, বেলীটা একটা ভ্যাম্পায়ার!

এই বেলীর জন্যেই মতিঝিল কলোনীতে যাওয়া বন্ধ করতে হয়েছে তাকে। বেলী চায় সে নাচুক; ওই তিনজনের মতো তাকেও নাচাতে চায় বেলী। খোকার ক্ষেত্রে বেলীর নিজের সুবিধে অনেক বেশি, এসব ব্যাপারে ওর হিসেব সাধারণত নির্ভুল হয়। কখন কিভাবে কার দিকে ঝুঁকলে ফায়দা ওঠানো যাবে ও তা সহজেই অনুমান ক’রে নেয়। পাকাপোক্ত একজন মেয়েমানুষের মতোই বেলী। সে ভালো করেই জেনে নিয়েছে তার হাতে আছে মাথা ঘুরিয়ে দেবার অতি প্রাচীন ডাকিনী বিদ্যা। এ ব্যাপারে অতটুকু মেয়ের যে নির্বিকারচিত্ততা, খোকাকে তা বিস্মিত করে।

‘তুই একটা হাড়কিপ্টে, নিয়ে চল না একদিন সিনেমায়- ‘একটা ভ্যানিটি ব্যাগ প্রেজেন্ট করবি?’

‘তোর সঙ্গে একদিন সাংগ্রিলায় যাব, একজোড়া আইভরির দুল চাই

আমার।’

‘তুই কি ধরনের মেয়ে পছন্দ করিস, নার্স, টেলিফোন অপারেটর না হোলিক্রসে পড়া মেয়ে?’

‘কেমন লাগে রে বিয়ার খেতে?’

‘তুই ঘড়ি পরিস না কেন, আমার টাকা থাকলে একটা রোলেক্স কিনে দিতাম তোকে।

‘আচ্ছা বয়ফ্রেন্ডকে চুমু খেলে দোষ হয়?’

এক একদিন এক একভাবে এগোয় বেলী। কখনো এগোয় পা টিপে টিপে খুব সতর্কভাবে। অনুমানের বাইরে দু’ধাপ বেশি এগিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সংশোধন ক’রে নেয়; অতর্কিতে নিজেকে গুটিয়ে নেবার ক্ষমতাও তার বিপুল, তখন মনে হয় ওর মতো সংযমী দ্বিতীয়টি আর নেই। নানান কথার রাশ মেলে ধরার আড়ালে সে আত্মশাসন করে, খোকা বোঝে।

আবার উল্টোটিও ঘটে দু’একদিন। তখন তার বাইরের ধীরস্থির নিরুপদ্রব স্বভাবের আবরণ একটা দমকা হাওয়ায় খ’সে পড়ে।

একদিন দুপুরে অত্যন্ত বাড়াবাড়ি ক’রে ফেলেছিল বেলী। কোনো একটা চক্রান্ত ছিলো বেলীর, খোকা তার মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝেনি; চক্রান্ত না থাকলে অকারণে কেউ অমন একরোখা গোঁয়ারমূর্তি নিয়ে হামলে পড়ে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

কিউবার পথে সর্বনাশের ছায়া ভেনিজুয়েলার তেলে মার্কিন অবরোধে দ্বীপ রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা

জীবন আমার বোন (পর্ব-৪৯)

১২:০০:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

সবচেয়ে মারাত্মক টাইপ যেটার সাধারণত সে আসে রাত্রে, একটা লাল রঙের ফিয়াট ক্যুপে চালায় ছোকরা। একটা ঝড়। ঝড়ের মতো গাড়ি চালায়। দিনের বেলায় খোকাহোক খোকাহোক খো-কাহোক ধরনের হর্ন বাজিয়ে দু’চারটে পাক মেরে যায়। তার মানে তুমি চাগিয়ে ওঠো, সেই রাত্রিবেলায় আমি আসবো। লাইটপোস্টের নিচে গাড়ি পার্ক ক’রে দাঁড়াবো। তারপর টাইম ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপনের মতো গাড়িতে হেলান দিয়ে কায়দা মেরে দাঁড়িয়ে কিং সাইজের ফিলটার টিপড় সিগ্রেট ধরাবো। ব্যাটাছেলে নিজেই একটা ফিলটার সিগ্রেট। পালক ছড়ানো সেদ্ধ হাঁসের মতো ফকফকে। ঝুলপি দু’টি বিরাট। মনে হয় স্রেফ তার ঝুলপি নামাবার জন্যেই সৃষ্টিকর্তা ওর হুঁকোর খোলের মতো চোখামার্কা মুখটা দিয়েছেন; ওই ঝুলপি না থাকলে ও নিজেই হুঁকোর খোলটা ডেনে ফেলে দিত। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে ছোকরা। ভাবখানা এই: আমি একটা চোঙা, কোন্ শালা আমায় ফোঁকে, আসুক দেখি। যথেষ্ট আছে ওর বাবার, বোঝা যায়; শালা শুয়োরের বাচ্চা, মনে মনে গাল দেয় খোকা।

তবু, এদের হয়তো কোনো দোষই নেই, এক একবার মনে হয় খোকার। ওদের নাচাচ্ছে বেলী। অদৃষ্টের মতো ওদের খেলিয়ে মজা লুটছে; ওরা নাচছে, পাগলের মতো নাচছে।

একদিন তো সামান্য একটুর জন্যে নেহাত ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছে বেচারা ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি-পায়জামা। লম্বা ঝুলপির ক্যুপে অতিশয় লাল চোখ হ’য়ে বুনো শুয়োরের মতো গাঁক গাঁক ক’রে দাবড়ানি দিয়েছিলো তাকে; কাদাপানিতে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আলুভর্তা হ’য়ে যেত বেচারা সেদিন। গাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার ক’রে উঠেছিলো ছোকরা, মিডল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেব, শালা!

সত্যি, বেলীটা একটা ভ্যাম্পায়ার!

এই বেলীর জন্যেই মতিঝিল কলোনীতে যাওয়া বন্ধ করতে হয়েছে তাকে। বেলী চায় সে নাচুক; ওই তিনজনের মতো তাকেও নাচাতে চায় বেলী। খোকার ক্ষেত্রে বেলীর নিজের সুবিধে অনেক বেশি, এসব ব্যাপারে ওর হিসেব সাধারণত নির্ভুল হয়। কখন কিভাবে কার দিকে ঝুঁকলে ফায়দা ওঠানো যাবে ও তা সহজেই অনুমান ক’রে নেয়। পাকাপোক্ত একজন মেয়েমানুষের মতোই বেলী। সে ভালো করেই জেনে নিয়েছে তার হাতে আছে মাথা ঘুরিয়ে দেবার অতি প্রাচীন ডাকিনী বিদ্যা। এ ব্যাপারে অতটুকু মেয়ের যে নির্বিকারচিত্ততা, খোকাকে তা বিস্মিত করে।

‘তুই একটা হাড়কিপ্টে, নিয়ে চল না একদিন সিনেমায়- ‘একটা ভ্যানিটি ব্যাগ প্রেজেন্ট করবি?’

‘তোর সঙ্গে একদিন সাংগ্রিলায় যাব, একজোড়া আইভরির দুল চাই

আমার।’

‘তুই কি ধরনের মেয়ে পছন্দ করিস, নার্স, টেলিফোন অপারেটর না হোলিক্রসে পড়া মেয়ে?’

‘কেমন লাগে রে বিয়ার খেতে?’

‘তুই ঘড়ি পরিস না কেন, আমার টাকা থাকলে একটা রোলেক্স কিনে দিতাম তোকে।

‘আচ্ছা বয়ফ্রেন্ডকে চুমু খেলে দোষ হয়?’

এক একদিন এক একভাবে এগোয় বেলী। কখনো এগোয় পা টিপে টিপে খুব সতর্কভাবে। অনুমানের বাইরে দু’ধাপ বেশি এগিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সংশোধন ক’রে নেয়; অতর্কিতে নিজেকে গুটিয়ে নেবার ক্ষমতাও তার বিপুল, তখন মনে হয় ওর মতো সংযমী দ্বিতীয়টি আর নেই। নানান কথার রাশ মেলে ধরার আড়ালে সে আত্মশাসন করে, খোকা বোঝে।

আবার উল্টোটিও ঘটে দু’একদিন। তখন তার বাইরের ধীরস্থির নিরুপদ্রব স্বভাবের আবরণ একটা দমকা হাওয়ায় খ’সে পড়ে।

একদিন দুপুরে অত্যন্ত বাড়াবাড়ি ক’রে ফেলেছিল বেলী। কোনো একটা চক্রান্ত ছিলো বেলীর, খোকা তার মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝেনি; চক্রান্ত না থাকলে অকারণে কেউ অমন একরোখা গোঁয়ারমূর্তি নিয়ে হামলে পড়ে না।