শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

তরুণ ভোটাররা বাইডেনের প্রেসিডেন্সি নিয়ে উৎসাহিত নয়

  • Update Time : বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪, ৪.১৯ পিএম

এলিসিয়া ফিনলেই

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে একটি ইলেকট্রিক গাড়ির কী মিল আছে? প্রথমত, কোনোটিই বিশ্রাম ছাড়া খুব বেশি দূর যেতে পারে না।  এছাড়া আরও একটা মিল আছে, উভয় ক্ষেত্রেই তরুণদের ক্রমশ হতাশা বাড়ছে। পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসে এন্ড কো এর একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, ৫৭% আমেরিকান সহস্রাব্দী ইলেকট্রিক-যানবাহন মালিকরা বলছেন যে তারা সম্ভবত আবার গ্যাসোলিন-চালিত গাড়িতে ফিরে যেতে পারেন। প্রধান কারণগুলো হল বাড়িতে ইভি চার্জ করতে না পারা, রাস্তায় চার্জ করতে সমস্যা হওয়া, এবং মালিকানার উচ্চ খরচ। যাদের বাচ্চা আছে বিশেষ করে তারা তাদের ইভি ক্রয় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বয়স্ক ইভি মালিকদের মধ্যে  এই ক্ষোভ বা দুঃখ কম।

সম্ভবত তরুণরা ইভি কেনার খরচ ও জটিলতাগুলো পুরোপুরি বিবেচনা করেননি, যেমনটা তারা বাইডেন প্রেসিডেন্সির নীতি ফলাফলগুলোও ভাবেননি। বয়স্কদের চেয়ে তারা উভয়ের প্রভাব বেশি অনুভব করেন। উদাহরণস্বরূপ: একটি ইভি বীমা করা গ্যাসোলিন-চালিত গাড়ির চেয়ে গড়ে প্রতি মাসে $৪৪ বেশি । উচ্চ মেরামত ও উপাদান খরচ এর অংশিক কারণ। গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের উত্‌পাদন হার বৃদ্ধির ফলে—মি. বাইডেন—প্রত্যাশিত জ্বালানি সঞ্চয়ে ব্যর্থ হয়েছে। অ্যান্ডারসন ইকোনমিক গ্রুপের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ গ্যাস-চালিত গাড়ির জন্য জ্বালানি খরচ ইভি পাওয়ার চেয়ে সস্তা। আপনি যদি বাড়ির মালিক হন, তাহলে জানতে পারবেন যে একটি দামি চার্জার সামঞ্জস্য করতে বৈদ্যুতিক তার আপগ্রেড করতে কয়েক হাজার ডলার খরচ হয়। যদি বাড়ির মালিক না হন, তাহলে বাণিজ্যিক স্টেশনে চার্জ করতে হবে, যেখানে চার্জের ব্যয় বেশি এবং কাজটিও সময় সাপেক্ষ। একটি ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ করতে ১০ ঘন্টার বেশি সময় লাগতে পারে (আবার ব্যাটারি ৮০% এর উপরে চার্জ করা হয় তাহলে তার স্থায়িত্ব দ্রুত কমে যায়)। তরুণদের জন্যে এ কাজ বেশ ঝামেলায় ফেলে দেয়। বাড়ির মালিকদের এবং বয়স্কদের সময়ের দাবী কম দাবি থাকার কারণে চার্জ করা কম সমস্যাজনক।

তারপর আরেকটি ব্যাপার আছে: ইভি গাড়িগুলোর পুনঃবিক্রয় মান গ্যাস-চালিত গাড়ির চেয়ে দ্রুত কমে যায়,  কারণ তাদের ব্যাটারিগুলি সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কমে যায়। শুধুমাত্র ব্যাটারিগুলি প্রতিস্থাপন করতে কয়েক হাজার ডলার খরচ হতে পারে। এর পাশাপাশি, বাজারে ব্যবহৃত এবং নতুন ইভিগুলির একটি অতিরিক্ত সরবরাহ সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পুনঃবিক্রয় মূল্য হ্রাস করেছে। গত বছর, ব্যবহৃত ইভিগুলির দাম ৩০% থেকে ৩৯% কমেছে—ব্যবহৃত গ্যাস-চালিত গাড়ির তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। কয়েক বছর আগে একজন যুবক বিনিয়োগ ব্যাংকার আমাকে গর্ব করে বলেছিলেন যে তার সাম্প্রতিক টেসলা কেনা একটি বুদ্ধিমান বিনিয়োগ ছিল কারণ মুদ্রাস্ফীতি তার মূল্যবৃদ্ধি করবে। তার এ বাজিটা এখন ভুল বা বুদ্ধিমানের কাজ নয় বলেই প্রমানিত হচ্ছে।

মি. বাইডেন মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের জন্য কৃতিত্ব দাবি করেন। এটি সন্দেহজনক, তবে তার প্রশাসনের ডি ফ্যাক্টো ইভি ম্যান্ডেট সম্ভবত অতিরিক্ত সরবরাহ তৈরি করে দাম কমিয়েছে। দ্রুত ইভি মূল্যহ্রাস এই বছর ব্যবহৃত গাড়ির দাম কমিয়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতির হার কমিয়েছে বলে বলা হচ্ছে।

ইভির পুনঃবিক্রয় মূল্য হ্রাস বয়স্কদের জন্য কম উদ্বেগের কারণ যারা তাদের গাড়ি নিয়ে খুশি, যেমন তারা মি. বাইডেন এবং তার নীতিগুলোর সাথে খুশি। ফক্স নিউজের একটি জরিপ অনুসারে, ৬০% ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটার মি. বাইডেনের প্রতি অসন্তুষ্ট, সেক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই অসন্তুষ্টির হার ৪৫%।

 

তরুণ ভোটারদের মধ্যে একটি বড় অংশ বলেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনীতি পরিচালনা করবেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ সামাল দেবেন, মানসিক স্থায়িত্ব দেখাবেন, এবং স্বাভাবিকতা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবেন। মি. ট্রাম্প স্থিতিশীল নাও হতে পারেন, তবে তার প্রেসিডেন্সির সময় মূল্যবৃদ্ধি এবং সামাজিক ও বৈশ্বিক অস্থিরতা কম ছিল।

অন্যদিকে, বয়স্করা প্রতিটি বিষয় ও গুণাবলীতে মি. বাইডেনকে সমর্থন করেছেন। এই বৈষম্যের কারণ কী? বয়স্করা সম্ভবত মি. ট্রাম্পের বুদ্ধিবৃত্তিকে আরও অস্বস্তিকর মনে করেন। তারা বাইডেন প্রেসিডেন্সির সময় বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের মূল্য বৃদ্ধির থেকে বেশি উপকৃত হয়েছেন, অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাস্তব মজুরি কম হ্রাসের চাপ পড়েছে তাদের ওপর। অনেকেই তাদের সোনালি বছরগুলি ভ্রমণে উপভোগ করছেন, বিপরীতে তরুণরা একই স্থানে আটকে আছে।

অধিকাংশ তরুণ আমেরিকান একটি বাড়ি কিনতে পারেন না, এবং অনেকে কাজ খুঁজতে লড়াই করছেন। ২০-২৪ বছর বয়সীদের জন্য কর্মসংস্থান-জনসংখ্যা অনুপাত ৬৫.৩%, যা মহামারীর আগে ৬৮.২% ছিল। ২২ থেকে ২৭ বছরের কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্ব মার্চ মাসে ৪.৭% ছিল—২০০৮ সালের শরতের সময়ের মতোই—সব শ্রমিকদের মধ্যে এটি ছিল ৩.৭%। এটি একটি ঐতিহাসিক ব্যতিক্রম। শুধুমাত্র গত দুই বছরে তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্ব ধারাবাহিকভাবে পুরো কর্মশক্তির তুলনায় বেশি হয়েছে।

এদিকে, ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে গুরুতর গাড়ি ও ক্রেডিট কার্ড অপরাধ ২০০৮-০৯ সালের মন্দার সময়ের মতো ঘটেছে।

তরুণরা বাইডেন প্রেসিডেন্সিকে তাদের আর্থিক ও ভবিষ্যতের জন্য বেশি খরচি মনে করছেন যা তারা আশা করেননি। তাই তাদরে অনেকেই আবার ট্রাম্পের দিকে ফিরে যেতে চাইলে সেটা কোন আশ্চর্যকর কিছু হবে না।

 

লেখক, আমেরিকান সাংবাদিক ও ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের মেম্বার

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024