সিরিজের সারসংক্ষেপ
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি শেষ হয়েছে ১–০ ফলাফলে; গলের প্রথম টেস্ট ড্র হলেও কলম্বোর দ্বিতীয় টেস্টে শ্রীলঙ্কা ইনিংস ও ৭৮ রানে জয় পেয়ে ট্রফি রেখেছে ঘরেই।
গল টেস্ট: শন্তোর দ্বি-শতকীয় কারিশমা
১৭–২১ জুন গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রান তোলে—নাজমুল হোসেন শanto (১৩১) ও মুশফিকুর রহিম (১২৩) এর ২৪৭ রানের রেকর্ড জুটি দলে স্থিতি এনে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসেও শান্ত অপরাজিত ১২৫ রানে দলকে ২৮৫/৬ ডি-তে পৌঁছে দেন এবং শ্রীলঙ্কাকে ২৯৬ রানের লক্ষ্য দেন; স্বাগতিকরা ৭২/৪-এ থেমে ম্যাচটি ড্র হয়।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার একই ম্যাচে দুই শতক হাঁকিয়ে শান্ত শুধু ম্যাচ বাঁচাননি, ক্যারিয়ার-সেরা আইসিসি র্যাঙ্কিংও নিশ্চিত করেন।
কলম্বো টেস্ট: জয়াসুরিয়ার স্পিন-আতঙ্ক
২৮ জুন শুরু হওয়া দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ২৪৭-এ থামে। জবাবে আনসালা-সহায়ক উইকেটে পাঠুম নিসাঁকা (১৫৮), দীনেশ চান্দিমাল (৯৩) ও কুসাল মেন্ডিস (৮৪) মিলে ৪৫৮ রান তুললে লঙ্কানরা বড় লিড নেয়। ফেরার পথ রুদ্ধ করেন বাঁ-হাতি স্পিনার প্রবাথ জয়াসুরিয়া; ৫-৫৬ নিয়ে বাংলাদেশকে মাত্র ১৩৩ রানে গুটিয়ে সিরিজ-নির্ণায়ক জয় এনে দেন।
বাংলাদেশের ধসের কারণ
- টপ-অর্ডারের অসংহতি: প্রথম ইনিংসে ৪–৫-১ স্কোরলাইন থেকে পুনরুদ্ধার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
- স্পিন-নির্ভর বিপর্যয়: কলম্বোর চতুর্থ দিনের উইকেটে শান্ত -রা সামঞ্জস্য খুঁজে পাননি; ৩৩ রানে ছয় উইকেট হারানোই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
- বোলিং স্ট্র্যাটেজির অভাব: শোরিফুল-তাইজুলদের লাইন-লেংথ ছাড়ের সুবিধা নিয়েই নিসাঁকা-চান্দিমাল লঙ্কান ইনিংস ধাঁধায় ফেলেন।
শ্রীলঙ্কার সাফল্যের সূত্র
- মাঝ-অবস্থানের বড় পার্টনারশিপ: নি সাঁকা-চান্দিমাল তৃতীয় উইকেটে ১৭৬ রান যোগ করে বাংলাদেশের মনোবল ভেঙে দেন।
- স্পিন-পেসের ভারসাম্য: কাসুন রাজিথা-সহ পেসাররা নতুন বলে চাপ তৈরি করলে জয়াসুরিয়া পুরনো বলে আঘাত হানে।
- কৌশলে টস-বিপরীত জয়: টস হেরে ফিল্ডিং নিয়েও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি-সিলভা আক্রমণাত্মক ফিল্ড-সেটিং দিয়ে লিড সীমিত রাখেন।
নেতৃত্বের ধাক্কা
ভারী পরাজয়ের পর নাজমুল হোসেন শান্ত টেস্ট নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, যা দলে নতুন অধিনায়ক বাছাইয়ের তাগিদ জাগাচ্ছে। মুমিনুল হক ও লিটন দাসের নাম আলোচনায় রয়েছে।
পরিসংখ্যানের আয়নায়
বিভাগ | বাংলাদেশ | শ্রীলঙ্কা |
মোট রান (সিরিজ) | ১,১৬০ | ১,০১৫ |
শতক | ৩ (শান্ত ২, মুশফিক ১) | ২ (নিসাঁকা, মেন্ডিস) |
পাঁচ-উইকেট | ০ | ১ (জয়াসুরিয়া) |
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ অভিঘাত
এই জয়ে শ্রীলঙ্কা ১২ পয়েন্ট নিয়ে চক্রের চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ দুই ম্যাচ থেকে মাত্র চার পয়েন্ট সংগ্রহ করে অষ্টম। ফলে পরবর্তী সিরিজে (ভারত সফর, নভেম্বরে) বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সীমিত।
সামনে কী
২ জুলাই থেকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু, তারপর টি-টোয়েন্টি। গল-কলম্বোর অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্ব সংকট পেরিয়ে বাংলাদেশ যদি দ্রুত মানসিক পুনর্গঠন করতে পারে, সাদা-বল সংস্করণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফের জোরদার হতে পারে।
গল টেস্টে লড়াকু বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে স্পিন-জালে জড়িয়ে পড়ে। ব্যাটিং-দুর্বলতা, বোলিং-স্বত্বে ধারহীনতা ও নেতৃত্বের অনিশ্চয়তা—এই তিন মিলিয়ে সিরিজ হাতছাড়া হয়েছে। তবে শান্ত -র ফর্ম পুনর্জাগরণ ও টপ-অর্ডারের সম্ভাবনা আগামী সিরিজে আশার আলো দেখাচ্ছে; ছন্দে ফিরতে হলে এখনই কাঠামোগত সমাধানের পথে হাঁটতে হবে।