সারাক্ষণ ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ-সংঘাতে নিহত সব মানুষের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। খুঁজতে থাকলে নিহতের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর দুটি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এই পাঁচ হাসপাতালে নতুন করে আরও ৯টি মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়।
এ ছাড়া ওই দিন আরও তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল গিয়ে হতাহতের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চায়নি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নতুন করে একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালটির যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম এসব তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভ-সংঘাতের ঘটনায় নিউরোসায়েন্সেসে মোট ১৩২ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। তাঁদের মধ্যে ১০০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর ৩২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। এর আগে এই হাসপাতাল থেকে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি। তবে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় যুক্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, আহত ৩০০ জন এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। এর মধ্যে ১০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। চারজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর তথ্য আগে পাওয়া যায়নি।
অন্যতম সংঘাতপূর্ণ এলাকা ছিল বাড্ডা, আফতাবনগর, রামপুরা ও বনশ্রী। আফতাবনগর এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের এখানে দুজনের মরদেহ আনা হয়েছিল। তাদের একজন মো. জিল্লুর শেখ (১৭)। ১৮ জুলাই দুপুরে নামাজের পর আফতাবনগর এলাকায় গলা ও বুকে সে গুলিবিদ্ধ হয়। ওই হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আফতাবনগর এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকত জিল্লুর শেখ। গত বৃহস্পতিবার তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবারের কেউ নেই। তার মরদেহ নিয়ে গোপালগঞ্জে গেছেন সবাই। প্রতিবেশীরা জানান, জিল্লুর তার বন্ধুর সঙ্গে রাস্তায় গিয়ে মারা যায়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওর বাবাকে সেই বন্ধু ফোন করলে তাঁরা ভ্যানে করে তাকে হাসপাতালে নেন। মৃত ঘোষণার পর মরদেহ বাসার নিয়ে আসেন তাঁরা।
পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিল করা হবে।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারাদেশে সহিংসতার জেরে গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে কারফিউ জারি করে সরকার। এ সময় গত শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ দিন নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে এসেছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। তবে ইন্টারনেট বন্ধ ও দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ ও কারফিউর প্রেক্ষাপটে চলতি জুলাইয়ে এতে পতনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২৪ জুলাই পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৯৮ কোটি ডলার এসেছিল প্রথম ১৩ দিনে। আর ১৪ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৫৩ কোটি ডলার। যেখানে গত মাসে (জুন) প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সংঘটিত সহিংসতা, মৃত্যু ও ইন্টারনেট বন্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছে তাদের একাংশ। এ পরিস্থিতিতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে জুলাইয়ে আসা রেমিট্যান্স হতে পারে চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক মনে করছেন, হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে যে প্রচার চলছে, প্রবাসীরা তাতে সাড়া দেবেন না। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলেই দেশে রেমিট্যান্স পাঠাবেন বলে তিনি আশাবাদী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র বণিক বার্তাকে জানান, ‘২৪ জুলাই পর্যন্ত ১৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। তবে এ হিসাব কিছুটা বাড়তেও পারে। কারণ টানা পাঁচদিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার ব্যাংক খুললেও কার্যক্রমের পরিসর ছিল খুবই ছোট। ব্যাংকগুলো কেবল নগদ জমা ও উত্তোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স এলেও সেটি পুরোপুরি রিকনসিলিয়েশন হয়নি। ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে এলে মাসের শেষের দিকে রেমিট্যান্সের পুরো হিসাব পাওয়া যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছিল মার্চে। ওই মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর আগে জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। আর মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। সর্বশেষ জুনে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা গত ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির মাধ্যমে। দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি আহরণ করে ব্যাংকটি। ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর বুধ ও বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে। এ দুইদিনে যেসব রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, সেগুলো বন্ধের সময় পাঠানো। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর ক্যাম্পেইনের বিষয়ে আমরাও শুনেছি। এ ক্যাম্পেইনের প্রভাব আগামী সপ্তাহে বোঝা যাবে।’
দেশের আরো তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী জানিয়েছেন, টানা পাঁচদিন ব্যাংক বন্ধ থাকার পর বুধ ও বৃহস্পতিবার যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসার প্রত্যাশা ছিল, সেটি দেখা যায়নি। প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। চাকরিজীবী প্রবাসীরা মাসের প্রথম কিংবা শেষ সপ্তাহে বেতন পান। এ সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়লে বুঝতে হবে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত টানা এক সপ্তাহের সহিংসতা ও সংঘর্ষে অন্তত ২০৬ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। এরপর সীমিত পরিসরে চালু হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি ইন্টারনেট সেবা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারির পাশাপাশি দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার। দেশে সংঘটিত সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও এখন এক ধরনের উত্তেজনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ, আমেরিকার কয়েক দেশে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রবাসীরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কোনো কোনো সমাবেশ থেকে রেমিট্যান্স ‘শাটডাউনের’ ঘোষণাও এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা গত কয়েক দিন পরিবারের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ করতে পারেননি। এ বিষয়টি তাদের বড় একটি অংশকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এমনই এক প্রবাসী জয়দেব কর্মকার। সৌদি আরবে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাংক আর বিকাশে টাকা পাঠাই বেশি। যে পরিস্থিতি হয়েছে; তাতে আগামী দুই-এক মাসে কেউ টাকা পাঠাবে না। পাঠালেও হয়তো বিকাশে পরিবারের খরচের টাকা পাঠাতে পারে। এছাড়া কোনো টাকা পাঠাবে না। ১০ দিন ধরে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই, সন্তানদের দেখতে পারিনি। ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছে। মানুষের মনের মধ্যে একটা ক্ষোভ আছে। এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার দরকার ছিল না। আমরা প্রবাসে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘কারো বাবা, ভাই মারা গেছে, কেউ অসুস্থ হয়েছে। আগে থেকে অসুস্থ কারো সম্পর্কেও এ সময় কোনো খোঁজখবর নেয়া যায়নি। এজন্যই প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বেশি জমেছে। অনেকেই দুই-এক মাস ব্যাংকে টাকা না-ও দিতে পারে।’
শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের একাংশও অনেকটা একই ধরনের বক্তব্য রাখছেন। সৌদি প্রবাসী জয়দেব কর্মকারের মতো অনেকটা একই বক্তব্য রেখেছেন ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশী আইনজীবী মুনাওয়ার হোসেনও। তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সসহ পুরো ইউরোপে বাংলাদেশীরা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে। এখানে যেকোনো ধরনের মিছিল-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা রয়েছে। ফ্রান্স প্রবাসীদের আপাতত দেশে সরাসরি রেমিট্যান্স না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন হলে অন্য কোনো পন্থায় পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই। এটি শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদ।’
দেশে রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ আসে এজেন্ট ব্যাংকিং বা এমএফএস সেবা ব্যবহার করে। এসব সেবার অন্যতম বিকাশ। বিভিন্ন জেলায় বিকাশ এজেন্টদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ১৮ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সেবাটি ব্যবহার করে কেউ রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেননি।
লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের গার্লস স্কুলসংলগ্ন মায়া টেলিকমের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ আলম রাসেল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে নেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে প্রবাস থেকে লেনদেন হয়নি। এখন লেনদেন শুরু হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি মাসে গড়ে বিকাশে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এ মাসে তা অর্ধেকে নেমেছে। আগে যেখানে ২ লাখ টাকা লেনদেন হয়, সেখানে তা অর্ধেকের নিচে নেমেছে।’
এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) সম্প্রতি ৫৭ বাংলাদেশীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়ার বিষয়টিও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অন্যান্য দেশে যারা বিক্ষোভ করেছেন, তাদের মধ্যে আটক আতঙ্ক কাজ করছে। এমনকি অনেকে কর্মস্থলে যেতে শঙ্কাবোধ করছেন। ওইসব দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা জানান, ইউএই ছাড়াও সৌদি আরবের রিয়াদ, কাতারের দোহা, লেবাননের বৈরুত ও ওমানের সালালাহ শহরে বড় ও ছোট আকারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন অনেকে।
এর মধ্যে ১৯ জুলাই বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে মিছিল করায় ইউএই ছাড়াও দুয়েকটি দেশে কয়েকজনকে আটকের গুঞ্জন ওঠে বলে জানা গেছে। তবে সেগুলোর সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
রিয়াদে অবস্থানরত বাংলাদেশী নির্মাণ শ্রমিক রেজাউল রনি (ছদ্মনাম) বলেন, ‘এখানে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষেধ। তারপরও কিছু একটা হলেই লোকজন মিছিল নিয়ে নেমে পড়ে। বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনার সমর্থনে মিছিল হয়েছে। তবে ইউএইতে কারাদণ্ডের ঘটনায় এখন রিয়াদে প্রবাসীদের মধ্যেও আটক আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
লেবাননের বৈরুতে ২১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে দোয়া মাহফিল ও মানববন্ধন করে সেখানে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশী। ইউএইর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তা বড় আকারে রূপ নেয়নি। এর পরও সেখানকার সরকার প্রবাসীদের বিষয়ে এ ধরনের মানববন্ধনে কোনো ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় কিনা, সে বিষয়েও শঙ্কা রয়েছে প্রবাসীদের মধ্যে।
বৈরুতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী শাহ মারুফ (ছদ্মনাম) বলেন, ‘এখানে তেমন কোনো আন্দোলন হয়নি। তবে প্রবাসীদের বড় একটি অংশের মধ্যে এক ধরনের চেষ্টা ছিল।’
কাতারেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে আন্দোলন ও মিছিল করেছে সেখানকার প্রবাসীরা। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক হয়েছেন কিনা সেটা জানা যায়নি। সেখানকার প্রবাসীদের মধ্যেও এখন আটক আতঙ্ক কাজ করছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত এসব ভবন পরিদর্শন করেন তিনি।
এই সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সকালে সেতু ভবনে প্রবেশের পর এর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দেখেন প্রধানমন্ত্রী। পরে মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঘুরে দেখেন।
সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভবন দু’টির ধ্বংসযজ্ঞের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। একইসঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞও পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনে (পঙ্গু হাসপাতাল) আহতদের দেখতে যান।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই কয়েকশ’ দুষ্কৃতকারী সেতু ভবনে প্রবেশ করে এটি ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় অনেক যানবাহন ও মোটরবাইক ভাঙচুর, বিভিন্ন শেড ও কক্ষ তছনছ এবং আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একইদিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে হামলা করা হয়।
Leave a Reply