শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাঁহারা বলেন, ক্লাইব স্বীয় সৈন্যদিগকে আম্রকুঞ্জমধ্যে প্রবেশ করিতে আদেশ প্রদান করিয়া স্বয়ং শিকারমঞ্চে বিশ্রাম করিতেছিলেন। মোহনলাল রণে ভঙ্গ দিলে, নবাবসৈন্যগণ যখন প্রতিনিবৃত্ত হইতে আরম্ভ করে, ঠিক সেই সময়ে মেজর কিলপ্যাট্রিক তাহাদিগকে আক্রমণ করিবার জন্য ইংরেজ সৈন্যদিগকে আদেশ দিয়া, এক- জন সৈনিক কর্মচারী দ্বারা ক্লাইবের নিকট সংবাদ পাঠাইলেন। সৈনিক কর্মচারী গিয়া দেখিলেন, ক্লাইব নিদ্রা যাইতেছেন। এই সংবাদে ক্লাইব প্রথমে চমকিত হইয়া উঠেন এবং কিলপ্যাট্টিককেও তিরস্কার করেন; কিন্তু যখন বুঝিতে পারিলেন যে, কিলপ্যাট্রিকের কার্য্য যুক্তিসঙ্গত হইয়াছে, তখন নিজেই নবাবসৈন্যের প্রতি মহাবেগে ধাবিত হইলেন।
এদিকে নবাবসৈন্য ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িল। বিশ্বাসঘাতক সেনাপতিত্রয় ইংরেজদিগকে কোনপ্রকার বাধাপ্রদান করিল না। কিন্তু সেনাপতি সিনেফ্র ইহাতে বিচলিত না হইয়া, আপনার অধীন অল্পসংখ্যক সৈন্য লইয়াই ইংরেজদিগের গতিরোধ করিলেন। তিনি ক্রমে ক্রমে পশ্চাৎ হাঁটিয়া নবাবের বুরুজ, পরিখাভ্যন্তর এবং পাহাড়ী হইতে ক্রমান্বয়ে গোলাগুলি চালাইতে লাগিলেন। কোন কোন ঐতি- হাসিক বলিয়া থাকেন যে, পলাশীযুদ্ধের মধ্যে এই টুকুই প্রকৃত যুদ্ধ।। সিনেফ্র শত চেষ্টা করিয়াও ইংরেজদিগের গতিরোধ ও নবাবকে রক্ষা করিতে পারিলেন না।
অপরাহ্ণ পাঁচঘটিকার সময় ইংরেজেরা নবাবের পরিখাবেষ্টিত শিবির অধিকার করিলেন। কিন্তু সিরাজ ইতিপূর্ব্বেই উস্ট্রে আরোহণ করিয়া মুর্শিদাবাদ অভিমুখে যাত্রা করিয়াছিলেন। এইরূপে পলাশীযুদ্ধের অবসান হইল। এই যুদ্ধে নবাবের ৩৫ হাজার পদাতি, ১৫ হাজার অশ্বারোহী, ও ৫৩টি কামান উপস্থিত ছিল। তাহাদের মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার সৈন্য বিশ্বাসঘাতক সেনাপতিত্রয়ের নেতৃত্বে অবস্থিতি করে। ইংরেজদিগের ৯ শত ইউরোপীয়, ১ শত তোপাসী ও- ২১ শত সিপাহী মাত্র ছিল। ইংরেজদিগের নাকি ৭০ জন মাত্র হত ও আহত হয়। ২৩৩ জুন রাত্রিতে ক্লাইব পলাশীপ্রান্তর হইতে প্রায় তিন ক্রোশ উত্তরে দাদপুরে আসিয়া শিবির সন্নিবেশ করিলেন।
পর দিন প্রাতঃকালে মীৎজাফর দাদপুরে ক্রাইবের সহিত সাক্ষাৎ করিলে, ক্রাইব তাঁহাকে বাঙ্গলা বিহার উড়িষ্যার নবাব বলিয়া অভ্যর্থনা করেন। দাদপুর হইতে প্রথমে মীরজাফর, তৎপরে ইংরেজেরা মুর্শিদাবাদ অভিমুখে অগ্রসর হন। ২৫এ জুন ক্লাইব বহরমপুরের নিকট মাদাপুরে শিবির সন্নিবেশ করিয়া ২৯এ জুন পর্যন্ত কাশীমবাজারে অবস্থান করেন; অনন্তর সেই দিবসেই মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইয়া, মীরজাফরকে সিংহাসনে • উপবেশন করাইয়াছিলেন। আমরা সংক্ষেপে পলাশী যুদ্ধের বিবরণ প্রদান করিলাম। ইহা হইতে পলাশীক্ষেত্রে নবাবের সহিত ইংরেজদিগের কিরূপ যুদ্ধ হইয়াছিল, সাধারণে তাহা উত্তমরূপে বুঝিতে পারিবেন।
Leave a Reply