সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

ত্রিপুরার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা যা জানালেন

  • Update Time : শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪, ৭.১৫ পিএম
চারদিকে শুধুই জল

অমিতাভ ভট্টশালী

“আমাদের বাড়িটা এলাকার সব থেকে উঁচু জায়গায়। সবাই তাই পড়শিরা আমাদের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বাড়িতেও যে জল ঢুকে যাবে, এটা কেউ ভাবতেও পারিনি,”

বিবিসি বাংলার কাছে এভাবে ত্রিপুরার বন্যা পরিস্থিতির বর্ণনা করেন ত্রিপুরার উদয়পুর শহরের সাংবাদিক আয়ুব সরকার । তিনদিন ধরে সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন তিনি।

শুক্রবার সকালে মোবাইল ফোনে ব্যাটারি দিয়ে চার্জ দিয়ে চালু করার পরে বিবিসি বাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন ।

সাম্প্রতিক বন্যায় সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেসব এলাকা, তার মধ্যে অন্যতম গোমতী জেলা। তারই জেলা সদর শহর উদয়পুর।

বন্যায় পুরো রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে ১৯জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন দুজন।

তিনি বলছিলেন, “বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত লাগাতার ৩৮ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে এখানে। সেই জল তো ছিলই। তারপরে ডম্বুর ড্যামের জল ঢুকতে শুরু করে। আবার জেলার কিছু অংশে মিজোরামের দিক থেকেও জল চলে এসেছিল”।

“সব মিলিয়ে যে অবস্থা তা ভয়াবহ। মাত্র দুঘণ্টার মধ্যে আমাদের ঘরে চার ফুট জল জমে গিয়েছিল। রাত্রিবেলা বাধ্য হয়েই সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হয়”

“নানা সময়ে আমিই এগিয়ে যেতাম মানুষজনকে রেসকিউ করতে, এবার আমি নিজেই ভিক্টিম,” বলছিলেন মি. সরকার।

ত্রিপুরায় সবথেকে ভয়াবহ বন্যা তারা দেখেছেন ১৯৮৩ সালে। তবে এবছরের বন্যা তাকে ছাড়িয়ে গেছে। দশ বছর পরে ১৯৯৩ সালেও বন্যা হয়েছিল।

“কোথাও শুধু বাড়ির টিনের ছাদ দেখা যাচ্ছে, কারও বাড়ির শুধু দোতলাটা দেখা যাচ্ছে – মানে একতলা পুরো ডুবে গেছে,” জানাচ্ছিলেন আয়ুব সরকার।

নৌকা বা ভেলা ছাড়া মহারাণী এলাকায় আর কোনও যানবাহন চলছে না

চারদিকে শুধুই জল

গোমতী জেলারই আরেকটি এলাকা মহারাণী। সেখানকার স্থানীয় সাংবাদিক মোছলেম মিঞা শুক্রবার দুপুরে যা দেখতে পাচ্ছেন, তারই বর্ণনা দিচ্ছিলেন বিবিসিকে।

“চারদিকে শুধুই জল, মাঝে মাঝে কিছু মানুষের ঘরবাড়ি আর গাছপালা দেখা যায়। আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। মহারাণী এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ বাড়িতেই বুক সমান জল এখন, কারও বাড়িতে দশ হাত পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে আছে। গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জল নেই। কোথাও কোনও গাড়ি চলার উপায় নেই,” বলছিলেন মি. মিঞা।

তার কথায়, “আমাদের এই অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস, তার ৯৫% মানুষই এখন হয় আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। অনেকে আবার টিলা এলাকার বাড়ি বা অফিস-কাছারিগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে”।

“তারা কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, কেউ জানেন না। অনেকে চেষ্টা করছেন যে নৌকা বা ভেলায় চেপে নিজের বাড়ির দিকে যাওয়ার, যাতে একবার চোখের দেখা দেখে আসতে পারেন”।

তিনি জানাচ্ছিলেন ওই এলাকা এক তো গোমতী নদীর তীরে, লাগাতার বৃষ্টির কারণে সেই জল পাড় উপচিয়ে এলাকা ভাসিয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের ডম্বুর বাঁধের জল ঢুকে এলাকা আরও ডুবিয়েছে।

নিজে সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেও প্রথম দুদিনের পরে তার পক্ষে পেশাগত কাজ করা আর সম্ভব হয় নি।

“কোনওমতে নিজের প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছি। তারপরে নৌকায় করে বহু মানুষকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। এর মধ্যে আর পেশার দিকে নজর দিতে পারি নি,” বলছিলেন মি. মিঞা।

হেলকপ্টারে চেপে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে মুখমন্ত্রী মানিক সাহা

জল নামতে শুরু করেছে

শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় ত্রিপুরার অনেক এলাকা থেকেই জল নেমে যেতে শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।

তবে গোমতী আর খোয়াই নদী দুটির জলস্তর এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়েই বইছে।

মি. আয়ুব সরকার বলছেন, “এখানে সকাল থেকে জল নেমে যাচ্ছে। কিন্তু গোমতী নদীর ধারে সোনামুড়া শহরের দিকে রাত থেকে জল বাড়ছে বলে খবর পেয়েছি। সেখানে বৃহস্পতিবার রাতেও কথা বলতে পেরেছিলাম, কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে আর কোনও যোগাযোগ করতে পারছি না।“

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা আজ হেলিকপ্টারে চেপে গোমতী আর দক্ষিণ জেলায় গিয়েছিলেন।

বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া জলবন্দি মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

জলমগ্ন এলাকাগুলিতে চার-পাঁচদিন ধরে বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস

রাজ্যের অনেক এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করলেও ভারতীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতর ত্রিপুরার চারটি জেলায় আগামী তিনদিন অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল সকালবেলা থেকে।

তবে দুপুরে নতুন উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে সতর্কতার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে তারা। এখন বলা হচ্ছে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার দুটি এলাকায় আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও রাজ্যের অন্য কিছু এলাকায় শুধুই বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে তারা।

পুরো রাজ্যে আগামী দুদিনের জন্য হলুদ সতর্কবার্তা রয়েছে শুক্রবার দুপুর থেকে। তবে রবিবার দক্ষিণ জেলার কিছু এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সেদিন ওই অঞ্চলে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বিবিসি নিউজ বাংলা, কলকাতা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024