ডাঃ মোঃ জাহিদুর রহমান
সম্প্রতি আকস্মিক বন্যায় দেশের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ পরিবার। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলাকা হলো-ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর। বন্যার সময় ও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এর মধ্য পেটের পীড়া, চর্মরোগ, মশাবাহিত রোগ ও ফুসফুস এর প্রদাহ বেশি দেখা যায়। পেটের পীড়ার মধ্য ডায়রিয়া অন্যতম।
ডায়রিয়া হলে করণীয় :
বন্যার সময় ডায়রিয়া বেশি দেখা দেয়। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। লবণ ও পানির অভাব পূরণ করাই এর একমাত্র চিকিৎসা। শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি বেরিয়ে যায়, তা যদি দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয়, মানুষ তখনই অসুস্থ হয়ে পড়েন ও শরীরে লবণ পানির ঘাটতি দেখা দিলে মৃত্যু হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এক প্যকেট ওরস্যলাইন ৫০০ মিলি পানির মধ্য গুলিয়ে খেলে পানিশূন্যতা দূর হলে জীবন রক্ষা হয়।
বিশুদ্ধ পানি পান :
মূলত বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা একাকার হয়ে যায় এবং এসব উৎস থেকে জীবাণু ছড়ায়। টিউবওয়েলের বিশুদ্ধ পানি পাওয়া না গেলে বিভিন্ন জলাশয়ের পানি পান ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
বন্যায় টিউবওয়েল ডুবে গেলে করণীয় :
যেসব টিউবওয়েল বন্যায় ডুবে গেছে, সেগুলোর পানি ডিসইনফেকশন না করে পান করবেন না। নিজেরাই করতে পারেন এ কাজ। ১০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডারের সঙ্গে দেড় থেকে দুই লিটার পরিমাণ পানি একটি জগ বা পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর টিউবওয়েলের মূল অংশটি পাইপ থেকে খুলে পাইপের মধ্যে সেই মিশ্রণটি ঢেলে দিন। এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। টিউবওয়েলের মূল অংশটি লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট, প্রয়োজনে আরও বেশি সময় ধরে হাতল চাপতে থাকুন।
বন্যার সময় চর্ম রোগ :
বন্যার পানি গোসল বা গায়ে লাগানো থেকে বিরত থাকুন। কেননা এ পানি বিভিন্ন জীবাণুর ধারক ও বাহক। তাই এ পানির সংস্পর্শে বিভিন্ন চর্ম রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সব সময় পানির সংস্পর্শে থাকার জন্য হাতে-পায়ে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা ত্বকের খোসপাঁচড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, প্যারনাইকিয়া, স্ক্যাবিস জাতীয় নানা ধরনের ত্বকের অসুখ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এন্টিহিস্টামিন ও এন্টিফাংগাল লোশন ভাল উপকারে আসতে পারে।
বন্যার সময় মশাবাহিত রোগঃ
বন্যার পর বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকে। এই পানি মশার বংশ বিস্তারে ভূমিকা রাখে। ফলে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই প্রয়োজনে দিনে-রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে পুরো শরীর ঢেকে রাখা যায় এমন পোশাক পরতে হবে। বেশ কিছু গন্ধের প্রতি আকৃষ্ট হলেও কিছু সুগন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না এ প্রাণীটি। এসবের মধ্যে আছে ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস, লেমন গ্রাস এবং পেপারমিন্টের গন্ধ। শোয়ার ঘরের চারদিকে এসব উদ্ভিদের সুগন্ধযুক্ত তেল হালকা করে ছিটিয়ে দেওয়া যায়; কিংবা সরাসরি ত্বকেও মাখা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মসকুইটো রিপেলেন্টও ব্যবহার করতে পারেন মশা তাড়াতে।গন্ধের মতো কিছু কিছু রংও মশা সহ্য করতে পারে না। নীল, বেগুনি, সবুজ ও সাদার মতো উজ্জ্বল রং থেকে মশা দূরে থাকে। তাই শোয়ার ঘরের দেয়াল, বিছানার চাদর ও বালিশের কভারের রঙের ক্ষেত্রেও মশার অপছন্দের রংগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
বন্যার সময় ফুসফুস এর প্রদাহঃ
ফুসফুসের প্রদাহকে চিকিৎসাশাস্ত্রীয় ভাষায় নিউমোনিয়া বলা হয়। শত শত বছর আগ থেকেই নিউমোনিয়া নামক রোগটি আমাদের কাছে পরিচিতি পেয়ে আসছে। সব বয়সের বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সেই এ রোগটি বেশি আক্রান্ত হয়। হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে এ রোগটি শুরু হয়। কাশি অন্যতম প্রধান লক্ষণ প্রথম দিকে তা শুকনো কাশি হতে পারে তারপর কাশির সাথে কফ উঠতে থাকে। কফ সাদা, হলুদ হতে পারে। বুকের একটি বিশেষ অংশে নিউমোনিয়ায় ব্যথা শুরু হয় এবং কাশি দিলে বুকের ব্যথা বেশি বোধ হয়। রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দ্রুত হয় এবং অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। নাড়ি দ্রুত হয়, ত্বক উত্তপ্ত ও শুষ্ক হয়, মুখমণ্ডল রক্তিম এবং মারাত্মক অবস্থায় নীলাভ হতে পারে।ঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা হলে নিউমোনিয়া সহজেই ভালো হয়ে যায়। তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায় না। তবে দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা না হলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। আবার বিলম্ব হলে শ্বাসকষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। যেমন ফুসফুসে ফোড়া, ফুসফুসের পর্দায় পানি জমা, পুঁজ জমা, ব্রঙ্কোপ্লুরায় যোগাযোগ ইত্যাদি হতে পারে।
ডাঃ মোঃ জাহিদুর রহমান
এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য)
সিসিডি(বারডেম)
এমডি রেসিডেন্ট,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply