বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-২৭)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

পিওতর মান্তেইফেল

কানা পাইক মাছ
কয়েকটা পাইক মাছ থাকে মস্কো চিড়িয়াখানার বড়ো-সড়ো, প্রচুর আলোকিত একটা অ্যাকোয়ারিয়মে। সবকটা মাছেরই রঙ উজ্জল হলদেটে, শুধু একটা একেবারে কালো। যারা মাছের ব্যাপারী, চিড়িয়াখানায় তারা এলে অ্যাকোয়ারিয়মের কাছে অনেকখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কালো মাছটাকে লক্ষ্য করে। প্রায়ই মন্তব্য শোনা যায়:
‘অবাক কাণ্ড! বাইরে থেকে পাইক যেমন হয় তেমনি, অথচ রঙটা তেমন নয়। নিশ্চয় অন্য জাতের…’
না, ওই একই জাতেরই! ব্যাপারটা হল, মাছের রঙ নির্ভর করে আলোর ওপর। আলো যত জোরালো হবে, মাছের চামড়ার রঙও হবে তত ফিকে। সেটা হয়, কারণ আলোর প্রতিক্রিয়ায় চামড়ার রঞ্জক-কণাগুলো ছোটো ছোটো ডোরায় এসে জমে, ফলে সাধারণভাবে গা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সেইজন্যেই উজ্জল আলোর অ্যাকোয়ারিয়মে রাখা পাইক মাছগুলো অমন হলদেটে।
কিন্তু কালো পাইকটাও তো ওই একই অ্যাকোয়ারিয়মের একই জলে পাশাপাশিই থাকে। পরিস্থিতিটা পুরোপুরি এক, অথচ চামড়ার রঙ একেবারেই অন্য রকম।
তফাৎটা হল কেন?
যদি মন দিয়ে নজর করা যায়, তাহলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কালো পাইকটা কানা। দু’চোখেই তার শাদা ঢেলা। অনুসন্ধানে দেখা গেল, আলো রঞ্জক- কণাকে প্রভাবিত করে সোজাসুজি চামড়া ভেদ করে নয়, চোখের মধ্য দিয়ে গিয়ে, এবং সোজাসুজি রঞ্জক-কণার ওপর নয়, মস্তিষ্ক মারফত। চোখের মণিতে জ্বলজ্বলে আলো পড়লে স্নায়ুর প্রান্তগুলো উত্তেজিত হয়ে ওঠে; রায় বেয়ে সে উত্তেজনা পৌঁছয় মস্তিষ্কে, সেখান থেকে চামড়ায়, যার ফলে তার রঞ্জক-বিন্যাস বদলিয়ে যায়। মাছের যদি চোখ বেধে রাখা হয়, তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার রঙ খানিকটা কালচে হয়ে উঠবে, এমনকি আলো যদি খুব জোরালো থাকে তাহলেও। পাইকের চোখে যদি লাল কাঁচের আঁটো করে বসা চশমা পরানো হয়, তাহলেও এই ঘটবে।
কালো পাইকটা চমৎকার হৃষ্ট-পুষ্ট, নিজের অন্ধত্বে তার যেন কোনোই অসুবিধা হয় না। কাছ দিয়ে কোনো ছোটো মাছ সাঁতরে গেলে সে তাকে গিলে ফেলে চক্ষুষ্মান্ পাইকগুলোর চেয়ে খারাপ নয়, কেননা শিকার যে কাছিয়ে আসছে সেটা সে টের পায় জলের কম্পনে, কিংবা হয়ত মাছের ডাক শুনে। মাছেরা যে ডাকে, তা এখন প্রমাণিত।
যারা মাছ ধরে তারা সবাই নিশ্চয় দেখেছে, খুব গভীরে যেখানে আলো পৌঁছয় কম, সেখান থেকে ছিপে টেনে তোলা গাঢ় রঙের মাছ ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে কত তাড়াতাড়ি। রৌদ্রময় অগভীর জলে ঐ একই মাছ রঙে উজ্জ্বল বালি বা নুড়ির সঙ্গে মিলে যায়।
পরিবেশের পটের সঙ্গে মিশে যাওয়া গায়ের রঙকে বলা হয় পৃষ্ঠপোষিত বা সামঞ্জস্যবিধায়ক রঙ। হিংস্র মাছের আক্রমণ থেকে তা বহু মাছকে বাঁচায়, আবার অগভীর জলে অলক্ষ্যে শিকারের দিকে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে হিংস্র মাছকেও সাহায্য করে তা। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার ব্যাপারে প্রাণীদের স্নায়ু-ব্যবস্থার ভূমিকা কী, তা এ দৃষ্টান্ত থেকে ভালো বোঝা যাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024