অতি সাধারণ কালীগঙ্গা
স্বদেশ রায়
অন্ধকারেরও একটা পথ চলা আছে
সে তা বেশ বুঝতে পারে-
প্রতিদিন কালীগঙ্গা নদীটির তীরে বসে।
আলো ঝলমল পূর্ণিমা আসার আগেও একটা
হালকা অন্ধকার কেমন যেমন দ্রুত পায়ে চলে যায়
নদীর জলের ওপর দিয়ে এপার থেকে ওপারে।
তারপর ধীরে ধীরে পূর্ণিমাকে গ্রাস করতে
একটু একটু করে অন্ধকার এগুতে থাকে-
নিঃশব্দ তার পা চলা।
কালীগঙ্গার জলও বোঝে না-
নদীকূলে প্রতিদিনের মতো বসে থেকে সেও দেখতে পায় না ওই পা।
শুধু জানতে পারে পাখিগুলোর পাখা ঝাপটানো বন্ধ হলে
হালকা অন্ধকারটি আরো গাঢ় হয়।
“অন্ধকারে দাঁড়িয়েও তার কোন কষ্ট নয়, বেদনা নয়, বিচ্ছেদও নয়
কেবলই মনে হয়-
বেহুলা ছাড়া সে বড় একা”
ওই গাঢ় অন্ধকারে একবার জলের দিকে তাকিয়ে
একবার নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে –
সে উঠে যায় কালীগঙ্গার তীরের থেকে
কোন এক গভীর উষ্ণ বুকের আকাঙ্খায়।
অন্ধকারে সে বুক খুঁজতে খুঁজতে
কখনও তার হাত আটকে যেতে থাকে শেয়াকুল কাঁটায়-
রক্তাত হয় সে হাত-
তবুও বুঝতে পারে না-
অন্ধকার কতটা দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়।
অন্ধকারের মাঝে দৃষ্টিশক্তিকে ফেলে দিয়ে
কালীগঙ্গার জলের ঢেউকে তার কাছে মনে হয় এক পোচ
অন্ধকার গোময়ের লেপন।
দৃষ্টিশক্তিকে আটকে দেয়া অন্ধকারের ভেতর ডুবে যেতে যেতে
তার মনে হয় কালীগঙ্গাও ডুবে গেছে-
আর ডুবে যাওয়া কালীগঙ্গার বুকে পরিচিত সেই সব সাগর পায়রা নয়-
কোন এক আদিম জীব যেন লেজের দাপটে দেখাচ্ছে
তার হারিয়ে যাওয়া শক্তি।
প্রতিদিনের বিকেলের একটু শান্ত হাওয়ার কালীগঙ্গার তীরে
এমন করেই সে হারিয়ে যাবে-
হারিয়ে যাবে অজানা এক বেহুলার খোঁজে –
বার বার তাকে টেনে নিয়ে আসতো যে নদী সেও-
কোনদিন বোঝেনি সে এমন সহজ সরল ছোট্ট নদীটিকে দেখে।
তাই অন্ধকারে দাঁড়িয়েও তার কোন কষ্ট নয়, বেদনা নয়, বিচ্ছেদও নয়
কেবলই মনে হয়-
বেহুলা ছাড়া সে বড় একা-
ইন্দ্রের রাজসভায় কালীগঙ্গার তীরের কচি ঘাসের মালা পরে
কেউ কি আর নাচবে কোনদিন তার হাড়গুলো থেকে
ফিরিয়ে আনতে হাড় আর মাংসের বুকের নিচে যে হৃদয় কেবলই
কাঁদে কোন এক অজনা বেহুলাকে মনে করে।
কোন এক অতি সাধারণ কালীগঙ্গা নদীর তীরে।
Leave a Reply