আমার মা
মাঝে মাঝে ইলিশ মাছের হালি যখন দুই আনা তিন আনায় নামিত, তখন বাজান একসঙ্গে সাত-আটটি মাছ কিনিয়া আনিতেন। সেগুলি মা ভাজিয়া দিতেন। আমরা সেদিন সাত-আটখানা ভাজা মাছ ভাতের সঙ্গে খাইতাম।
কোনো কোনোদিন বাজানের সঙ্গে হাট হইতে ইলিশ মাছ কিনিয়া বাড়ি ফিরতাম। পথে ফিরিতে যার সঙ্গে দেখা হইত, সে-ই মাছের দাম জিজ্ঞাসা করিত। দাম শুনিয়া কেহ কেহ বলিত, মাছটি বেশ জিতিয়া কিনিয়াছেন। আমার খুব ভালো লাগিত। এখনও দেশে যাইয়া মাঝে মাঝে বাজার হইতে ইলিশ মাছ হাতে ঝুলাইয়া বাড়ি ফিরি। যে দেখে দাম জিজ্ঞাসা করে। উত্তর দিতে আমার তেমনই ভালো লাগে। কোনো কোনো পরিচিত লোক মাছের দাম জিজ্ঞাসা করিবার আগেই দামটা বলিয়া ফেলি। সমস্ত পথ আনন্দমুখর হইয়া ওঠে। সামান্য একটা ইলিশ মাছ বাঙালির জীবনে যে কত আনন্দ আনিয়া দিতে পারে ভাবিলে আশ্চর্য হইতে হয়।
আমাদিগকে ভালো খাওয়াইতে মা কতই না যত্ন লইতেন। মাঝে মাঝে ডালের বড়া ভাজিতেন। তেল না থাকিলে কলাপাতার উপর ডালবাটা বসাইয়া কাঠখোলায় ভাজিয়া লইতেন। সেদিন এত ভাত খাইতাম যে পেটে ধরিত না। ডিমের তরকারি বা মুরগির গোস্ত যেদিন রান্না হইত সেদিন আমাদের আনন্দের অবধি থাকিত না।
বাড়িতে মা খই-মুড়ি বেশি তৈরি করিতে পারিতেন না। যখন তৈরি করিতেন, সারাদিন খই-মুড়ি চিবাইয়া মুখে যা করিয়া ফেলিতাম। আজও মুড়ি খাওয়ার লোভ আমার যায় নাই। গরম মুড়ি পাইলে আমি রাজভোগও ছাড়িতে পারি। সেদিন আমাদের গ্রামের এক বাড়ির কাছ দিয়া যাইতেছি। দেখিলাম তাহারা গরম মুড়ি ভাজিতেছে। আমি যাইয়া আঁচল পাতিয়া বসিলাম। সম্পর্কে আমার দাদি, হামিজদ্দির মা আমাকে মুড়ি দিতে দিতে বলিল, “সেই আগেকার ছোঁচা জসীম তেমনি আছে।” বাড়ির বউরা ঘোমটার আড়ালে হাসিতে লাগিল।
চলবে…