১১:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ইশকুল (পর্ব-০২)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • 19

আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ
আর কী আশ্চর্য, সেখানে গিয়ে দেখা গেল গিজে’র গায়করা যেখানে দাঁড়িয়ে গান করে তার পাশটিতে দাঁড়িয়ে মিকা কোমর পর্যন্ত সামনে হেলিয়ে নমস্কার জানাচ্ছে সবাইকে আর পাপকাজ যা-কিছু, করেছে তার জন্যে সকলের সামনে অনুতাপ প্রকাশ করছে। এমনকি আগের বছর ব্যাপারী বেবেশিনের একটা ছাগল চুরি করে ও যে বিক্রি করেছিল আর সেই পয়সায় মদ খেয়েছিল, তা পর্যন্ত স্বীকার করল। আর এ দেখে ব্যাপারী বেবেশিনের চোখে জল এসে পড়ে আর কী! মিত্কার আত্মার মুক্তির জন্যে একটা মোমবাতি কিনে গির্জেয় জালিয়ে দিতে তিনি মিত্কাকে পুরোপুরি একটা রুলই দিয়ে বসলেন।
আর তা-ই বা বলি কেন, পাপীতাপী লোকটার জীবনের ধারা বদলানোর ও ধর্মের আশ্রয়ে ফিরে আসার এই তাজ্জব দৃশ্য দেখে অনেক লোকই সেদিন চোখের জল ফেলেছিল। পুরো হপ্তা জুড়ে এমনি সব হই-হল্লা চলল, আর তারপর ঠিক যেদিন মিত্কার দীক্ষা নেয়ার কথা সেইদিন দেখা গেল মিতুকা গিজে’য় গরহাজির। তা তার উল্টো ধরনের অন্য কোনো দিব্যদর্শনের জন্যে, নাকি আর কোনো কারণে, তা কেউ বলতে পারলে না। এদিকে গির্জের যজমান-পাড়ায় গুজব রটে গেল, মিত্কা নাকি নোভোপ্লোতিন্নাইয়া স্ট্রিটের পাশে নালার মধ্যে পড়ে আছে আর তার পাশে পাওয়া গেছে ভোস্কার একটা খালি বোতল।
ডাঁকন পাতি ও গির্জে’র তত্ত্বাবধায়ক ব্যবসাদার সিনিউগিনকে তাড়াহুড়ো করে ঘটনাস্থলে পাঠানো হল লোকটাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিয়ে আসার জন্যে। কিন্তু ওই দুই ভদ্রলোক ঘটনাস্থল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসে রেগেমেগে জানিয়ে দিলেন মিতুকার সত্যিই জ্ঞানগম্যি নেই, পাঁকে-পড়া শুয়োরের মতো পাশে দ্বিতীয় খালি একটা বোতল নিয়ে শুয়ে আছে সে। আর যখন অনেক ধাক্কাধাক্কির পর ওঁরা তাকে জাগালেন, তখন সে খিস্তি করতে শুরু করল, সটান জানিয়ে দিল সে এতই পাপাঁতাপী আর এত অযোগ্য যে, সন্ন্যাসী হওয়ার ব্যাপারে মতটাই সে পাল্টে ফেলেছে।
আমাদের ছিল শান্ত গিজে’ গুরুজন-মান্য শহর। পরবের দিনগুলোয়, বিশেষ করে ইস্টারের আগের সন্ধেগুলোয়, যখন শহরের তিরিশটা গিজের ঘণ্টা একসঙ্গে বাজতে থাকত, তখন শহরের আকাশেবাতাসে এমন একটা সোরগোল উঠত যে চারপাশের কুড়ি মাইলের মধ্যে সমস্ত গ্রামে সেই আওয়াজ পৌঁছত।
যিশুর ভবিষ্যৎ জন্মঘোষণার (বা অ্যানাসিয়েশন) নামাঙ্কিত গির্জের ঘণ্টার আওয়াজ তখন উঠত সব গির্জে’র ঘণ্টাধ্বনি ছাপিয়ে। আমাদের ‘পরিত্রাতার’ মঠের ঘণ্টাটা ছিল আবার ফাটা। বাজবার সময়ে ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে গুরুগম্ভীর উদারায় কর্কশ আওয়াজ তুলত। ‘সন্ত নিকোলাসের’ মঠের ছোট ঘণ্টাগুলো আবার, বাজত তাঁর রিনরিনে সুরে। আর এই তিন প্রধান গায়েনের সঙ্গে দোহার হয়ে ধয়ো ধরত অন্য সব গির্জের ঘণ্টাঘর। এমনকি শহরের একপ্রান্তে অবস্থিত ছোট্ট জেলখানাটার শাদাসিধে গির্জে ও এই সর্বজনীন বেসুরো ঐকতানে গলা মেলাত।

ইশকুল (পর্ব-০২)

০৮:০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ
আর কী আশ্চর্য, সেখানে গিয়ে দেখা গেল গিজে’র গায়করা যেখানে দাঁড়িয়ে গান করে তার পাশটিতে দাঁড়িয়ে মিকা কোমর পর্যন্ত সামনে হেলিয়ে নমস্কার জানাচ্ছে সবাইকে আর পাপকাজ যা-কিছু, করেছে তার জন্যে সকলের সামনে অনুতাপ প্রকাশ করছে। এমনকি আগের বছর ব্যাপারী বেবেশিনের একটা ছাগল চুরি করে ও যে বিক্রি করেছিল আর সেই পয়সায় মদ খেয়েছিল, তা পর্যন্ত স্বীকার করল। আর এ দেখে ব্যাপারী বেবেশিনের চোখে জল এসে পড়ে আর কী! মিত্কার আত্মার মুক্তির জন্যে একটা মোমবাতি কিনে গির্জেয় জালিয়ে দিতে তিনি মিত্কাকে পুরোপুরি একটা রুলই দিয়ে বসলেন।
আর তা-ই বা বলি কেন, পাপীতাপী লোকটার জীবনের ধারা বদলানোর ও ধর্মের আশ্রয়ে ফিরে আসার এই তাজ্জব দৃশ্য দেখে অনেক লোকই সেদিন চোখের জল ফেলেছিল। পুরো হপ্তা জুড়ে এমনি সব হই-হল্লা চলল, আর তারপর ঠিক যেদিন মিত্কার দীক্ষা নেয়ার কথা সেইদিন দেখা গেল মিতুকা গিজে’য় গরহাজির। তা তার উল্টো ধরনের অন্য কোনো দিব্যদর্শনের জন্যে, নাকি আর কোনো কারণে, তা কেউ বলতে পারলে না। এদিকে গির্জের যজমান-পাড়ায় গুজব রটে গেল, মিত্কা নাকি নোভোপ্লোতিন্নাইয়া স্ট্রিটের পাশে নালার মধ্যে পড়ে আছে আর তার পাশে পাওয়া গেছে ভোস্কার একটা খালি বোতল।
ডাঁকন পাতি ও গির্জে’র তত্ত্বাবধায়ক ব্যবসাদার সিনিউগিনকে তাড়াহুড়ো করে ঘটনাস্থলে পাঠানো হল লোকটাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিয়ে আসার জন্যে। কিন্তু ওই দুই ভদ্রলোক ঘটনাস্থল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসে রেগেমেগে জানিয়ে দিলেন মিতুকার সত্যিই জ্ঞানগম্যি নেই, পাঁকে-পড়া শুয়োরের মতো পাশে দ্বিতীয় খালি একটা বোতল নিয়ে শুয়ে আছে সে। আর যখন অনেক ধাক্কাধাক্কির পর ওঁরা তাকে জাগালেন, তখন সে খিস্তি করতে শুরু করল, সটান জানিয়ে দিল সে এতই পাপাঁতাপী আর এত অযোগ্য যে, সন্ন্যাসী হওয়ার ব্যাপারে মতটাই সে পাল্টে ফেলেছে।
আমাদের ছিল শান্ত গিজে’ গুরুজন-মান্য শহর। পরবের দিনগুলোয়, বিশেষ করে ইস্টারের আগের সন্ধেগুলোয়, যখন শহরের তিরিশটা গিজের ঘণ্টা একসঙ্গে বাজতে থাকত, তখন শহরের আকাশেবাতাসে এমন একটা সোরগোল উঠত যে চারপাশের কুড়ি মাইলের মধ্যে সমস্ত গ্রামে সেই আওয়াজ পৌঁছত।
যিশুর ভবিষ্যৎ জন্মঘোষণার (বা অ্যানাসিয়েশন) নামাঙ্কিত গির্জের ঘণ্টার আওয়াজ তখন উঠত সব গির্জে’র ঘণ্টাধ্বনি ছাপিয়ে। আমাদের ‘পরিত্রাতার’ মঠের ঘণ্টাটা ছিল আবার ফাটা। বাজবার সময়ে ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে গুরুগম্ভীর উদারায় কর্কশ আওয়াজ তুলত। ‘সন্ত নিকোলাসের’ মঠের ছোট ঘণ্টাগুলো আবার, বাজত তাঁর রিনরিনে সুরে। আর এই তিন প্রধান গায়েনের সঙ্গে দোহার হয়ে ধয়ো ধরত অন্য সব গির্জের ঘণ্টাঘর। এমনকি শহরের একপ্রান্তে অবস্থিত ছোট্ট জেলখানাটার শাদাসিধে গির্জে ও এই সর্বজনীন বেসুরো ঐকতানে গলা মেলাত।