০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইশকুল (পর্ব-০৩)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
  • 19
আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ

ঘণ্টাঘরের মিনারের মাথায় উঠতে ভারি ভালো লাগত আমার। একমাত্র ইস্টারের সময়ই বাচ্চাদের ঘণ্টাঘরে উঠতে দেয়া হত। ওপরে যেতে অন্ধকার সরু সরু, সি’ড়ি বেয়ে উঠতে হত অনেকটা। দেয়ালে পাথরের কুলুঙ্গির ভিতর থেকে শোনা যেত পায়রার মিষ্টি-মিষ্টি বকবকম। সি’ড়িতে এত অসংখ্য বাঁক থাকত যে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরত। ঘণ্টাঘরের ওপর থেকে দেখতে পাওয়া যেত পুরো শহর: পাহাড়ের নিচে দিয়ে বয়ে-যাওয়া তেশা নদী, পুরনো ময়দা-কল, ছাগুলে দ্বীপ, ঝোপঝাড়, তার আরও ওধারে খাদের খোয়াই আর শহর-ঘেরা নীল বনরেখা।
আমার বাবা ছিলেন দ্বাদশ সাইবেরিয়ান রাইফেল রেজিমেন্টের সৈনিক। ওই রেজিমেন্ট ছিল তখন জার্মান ফ্রন্টের রিগা আঞ্চলিক অংশে।
ব্যবহারিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি তখন। আমার মা ছিলেন হাসপাতালে ডাক্তারের সহকারী। সবসময়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আমি বেড়ে উঠেছিলুম নিজের মতো করে একরকম। প্রতি সপ্তায় ক্লাসের রিপোর্ট-কার্ড সই করাতে মা-র কাছে নিয়ে যেতুম। বিভিন্ন বিষয়ের নম্বরের ওপর চোখ বুলোতে বুলোতে ড্রইং কিংবা হাতের লেখায় খারাপ নম্বর দেখলে মাথা নাড়তেন মা,বলতেন:
‘এ কী!’
আমার কী দোষ, মা? আঁকতে না পারলে আমি কী করব? মাস্টারমশাইকে আমি ঘোড়া এ’কে দেখালুম, তা তিনি বললেন, এটা ঘোড়া নয় শুয়োর। পরের বার ওই আঁকাটাই তাঁকে দেখিয়ে বললুম, শুয়োর এ’কেছি, মাস্টারমশাই। কিন্তু তিনি চটে উঠে বললেন, এটা শুয়োরও নয়, ঘোড়াও নয়, এটা যে কী তা শয়তানই জানে। আমার দ্বারা শিল্পী হওয়া হবে না, মা।’
‘আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু হাতের লেখায় আবার গণ্ডগোল কেন? দেখি তো তোমার এক্সারসাইজ-খাতা। হায় হায়, এ কী বিতিকিচ্ছি ব্যাপার! প্রত্যেক লাইনে, কালি ধ্যাবড়ানো, আবার পাতার ফাঁকে একটা থ্যাঁতলানো গুবরে-পোকা। উহ, কী জঘন্য!’

ইশকুল (পর্ব-০৩)

০৮:০৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ

ঘণ্টাঘরের মিনারের মাথায় উঠতে ভারি ভালো লাগত আমার। একমাত্র ইস্টারের সময়ই বাচ্চাদের ঘণ্টাঘরে উঠতে দেয়া হত। ওপরে যেতে অন্ধকার সরু সরু, সি’ড়ি বেয়ে উঠতে হত অনেকটা। দেয়ালে পাথরের কুলুঙ্গির ভিতর থেকে শোনা যেত পায়রার মিষ্টি-মিষ্টি বকবকম। সি’ড়িতে এত অসংখ্য বাঁক থাকত যে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরত। ঘণ্টাঘরের ওপর থেকে দেখতে পাওয়া যেত পুরো শহর: পাহাড়ের নিচে দিয়ে বয়ে-যাওয়া তেশা নদী, পুরনো ময়দা-কল, ছাগুলে দ্বীপ, ঝোপঝাড়, তার আরও ওধারে খাদের খোয়াই আর শহর-ঘেরা নীল বনরেখা।
আমার বাবা ছিলেন দ্বাদশ সাইবেরিয়ান রাইফেল রেজিমেন্টের সৈনিক। ওই রেজিমেন্ট ছিল তখন জার্মান ফ্রন্টের রিগা আঞ্চলিক অংশে।
ব্যবহারিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি তখন। আমার মা ছিলেন হাসপাতালে ডাক্তারের সহকারী। সবসময়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আমি বেড়ে উঠেছিলুম নিজের মতো করে একরকম। প্রতি সপ্তায় ক্লাসের রিপোর্ট-কার্ড সই করাতে মা-র কাছে নিয়ে যেতুম। বিভিন্ন বিষয়ের নম্বরের ওপর চোখ বুলোতে বুলোতে ড্রইং কিংবা হাতের লেখায় খারাপ নম্বর দেখলে মাথা নাড়তেন মা,বলতেন:
‘এ কী!’
আমার কী দোষ, মা? আঁকতে না পারলে আমি কী করব? মাস্টারমশাইকে আমি ঘোড়া এ’কে দেখালুম, তা তিনি বললেন, এটা ঘোড়া নয় শুয়োর। পরের বার ওই আঁকাটাই তাঁকে দেখিয়ে বললুম, শুয়োর এ’কেছি, মাস্টারমশাই। কিন্তু তিনি চটে উঠে বললেন, এটা শুয়োরও নয়, ঘোড়াও নয়, এটা যে কী তা শয়তানই জানে। আমার দ্বারা শিল্পী হওয়া হবে না, মা।’
‘আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু হাতের লেখায় আবার গণ্ডগোল কেন? দেখি তো তোমার এক্সারসাইজ-খাতা। হায় হায়, এ কী বিতিকিচ্ছি ব্যাপার! প্রত্যেক লাইনে, কালি ধ্যাবড়ানো, আবার পাতার ফাঁকে একটা থ্যাঁতলানো গুবরে-পোকা। উহ, কী জঘন্য!’