০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইশকুল (পর্ব-০৬)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
  • 19
আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

একথা বলতেই হবে যে, খাঁজে খুঁজে যুতসই উদাহরণ বের করার ব্যাপারে ফাদার গোয়াদি ছিলেন একেবারে ঝানু ওস্তাদ। আমার মনে হয়, যদি তিনি জানতে পারতেন যে ওই ঘটনার আগের সপ্তায় ইশকুল থেকে অনুমতি না-নিয়ে আমি সিনেমায় গিয়েছিলুম, তাহলে তিনি স্মৃতি হাঁটকে এমন কিছু ঐতিহাসিক নজির খড়ে বের করতেন যাতে পরিষ্কার দেখানো থাকত অপরাধীকে ইহজীবনেই ঈশ্বরের ক্রোধের ফল ভুগতে হয়েছে।
হ্যাঁ, যা বলছিলুম। ইশকুল যেতে সেদিন দেখলুম তিমুকা গ্রাশ-পাখির মতো মনের আনন্দে শিস্ দিতে দিতে হে’টে চলেছে। আমাকে দেখতে পেয়ে ও বন্ধুভাবে চোখ টিপল, আবার সেইসঙ্গে আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতেও তাকাল। ওর ভাবখানা এইরকম যেন ছেলেটা অত কাছ ঘে’ষে আসছে সহজ মনে তো, নাকি আসছে কোন শয়তানী মতলব নিয়ে?
আমি বললুম, ‘তিম্ঙ্কা, ইশকুলে কিন্তু আমাদের দেরি হয়ে যাবে। পড়া শুরু হওয়ার আগে পৌঁছলেও প্রার্থনায় নির্ঘাত যোগ দিতে পারব না।’
‘কেউ টের পাবে না তো?’ কথা শুনে মনে হল ও ভয় পেয়েছে, আবার কৌতূহলও বেড়ে উঠেছে যেন।
‘সব্বাই টের পাবে, মাইরি। হ্যাঃ, কী আর হবে, বড়জোর আমাদের দুপুরের খাওয়া বন্ধ করে দেবে। এই আর কী।’ ধমক খেতে হবে শুনলে তিঙ্কা যে কী সাংঘাতিক ভয় পেয়ে যায় তা জানতুম। তাই যেন কিছুই হয় নি এমন শান্তভাবে ওকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্যে কথাগুলো বললুম। কেমন-যেন চুপসে গেল তিষ্কা। তাড়াতাড়ি পা চালাতে-চালাতে চিন্তিতভাবে বলল: ‘আমার কী দোষ বল্! আমায় এক মিনিটের জন্যে বাড়িতে থাকতে বলে বাবা গির্জের তালা খুলতে গেল। তা গেল তো গেলই। পুরো উপাসনা কাটিয়ে তবে ফিরল। জানিস, ভাল্ল্কা প্লাগিনের মা এসেছিল ওর জন্যে প্রার্থনা করাতে।’ শুনে মুখ হাঁ হয়ে গেল আমার। ‘অ্যাঁ, কী বললি? ভাল্কা স্পাগিনের জন্যে? কেন? মারা গেছে নাকি?’
‘আরে, না-না, মড়ার জন্যে উপাসনা নয়, ওর খোঁজ পাওয়ার জন্যে।’ ‘খোঁজ পাওয়ার জন্যে? কী বলছিস তুই?’ কথা বলতে গিয়ে গলা কে’লে গেল আমার। ‘যাঃ, তুই বানিয়ে বলছিস তিমুক্কা। নাকে এক ঘুসি ঝাড়ব কিন্তু বলে দিচ্ছি জানিস, কাল আমি ইশকুলে যাই নি রে। আমার জর হয়েছিল তো।’ সঙ্গে-সঙ্গে তিম্ কাটা টিট-পাখির মতো শিস দিতে শুরু করল, ‘তুইত-তুইত- তা-রা-রা’ আর চলতে লাগল এক-ঠ্যাঙে লাফিয়ে লাফিয়ে। এমন জবর খবরটা ও-ই প্রথম আমায় দিতে পারায় দারুণ খুশি ও। বলল, ‘ঠিক-ঠিক, তুই কাল ইশকুলে ছিলি না বটে। চুঃ-চুঃ, গেলে দেখতে পেতিস কী কাণ্ডটাই না হল!’

ইশকুল (পর্ব-০৬)

০৮:০০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

একথা বলতেই হবে যে, খাঁজে খুঁজে যুতসই উদাহরণ বের করার ব্যাপারে ফাদার গোয়াদি ছিলেন একেবারে ঝানু ওস্তাদ। আমার মনে হয়, যদি তিনি জানতে পারতেন যে ওই ঘটনার আগের সপ্তায় ইশকুল থেকে অনুমতি না-নিয়ে আমি সিনেমায় গিয়েছিলুম, তাহলে তিনি স্মৃতি হাঁটকে এমন কিছু ঐতিহাসিক নজির খড়ে বের করতেন যাতে পরিষ্কার দেখানো থাকত অপরাধীকে ইহজীবনেই ঈশ্বরের ক্রোধের ফল ভুগতে হয়েছে।
হ্যাঁ, যা বলছিলুম। ইশকুল যেতে সেদিন দেখলুম তিমুকা গ্রাশ-পাখির মতো মনের আনন্দে শিস্ দিতে দিতে হে’টে চলেছে। আমাকে দেখতে পেয়ে ও বন্ধুভাবে চোখ টিপল, আবার সেইসঙ্গে আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতেও তাকাল। ওর ভাবখানা এইরকম যেন ছেলেটা অত কাছ ঘে’ষে আসছে সহজ মনে তো, নাকি আসছে কোন শয়তানী মতলব নিয়ে?
আমি বললুম, ‘তিম্ঙ্কা, ইশকুলে কিন্তু আমাদের দেরি হয়ে যাবে। পড়া শুরু হওয়ার আগে পৌঁছলেও প্রার্থনায় নির্ঘাত যোগ দিতে পারব না।’
‘কেউ টের পাবে না তো?’ কথা শুনে মনে হল ও ভয় পেয়েছে, আবার কৌতূহলও বেড়ে উঠেছে যেন।
‘সব্বাই টের পাবে, মাইরি। হ্যাঃ, কী আর হবে, বড়জোর আমাদের দুপুরের খাওয়া বন্ধ করে দেবে। এই আর কী।’ ধমক খেতে হবে শুনলে তিঙ্কা যে কী সাংঘাতিক ভয় পেয়ে যায় তা জানতুম। তাই যেন কিছুই হয় নি এমন শান্তভাবে ওকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্যে কথাগুলো বললুম। কেমন-যেন চুপসে গেল তিষ্কা। তাড়াতাড়ি পা চালাতে-চালাতে চিন্তিতভাবে বলল: ‘আমার কী দোষ বল্! আমায় এক মিনিটের জন্যে বাড়িতে থাকতে বলে বাবা গির্জের তালা খুলতে গেল। তা গেল তো গেলই। পুরো উপাসনা কাটিয়ে তবে ফিরল। জানিস, ভাল্ল্কা প্লাগিনের মা এসেছিল ওর জন্যে প্রার্থনা করাতে।’ শুনে মুখ হাঁ হয়ে গেল আমার। ‘অ্যাঁ, কী বললি? ভাল্কা স্পাগিনের জন্যে? কেন? মারা গেছে নাকি?’
‘আরে, না-না, মড়ার জন্যে উপাসনা নয়, ওর খোঁজ পাওয়ার জন্যে।’ ‘খোঁজ পাওয়ার জন্যে? কী বলছিস তুই?’ কথা বলতে গিয়ে গলা কে’লে গেল আমার। ‘যাঃ, তুই বানিয়ে বলছিস তিমুক্কা। নাকে এক ঘুসি ঝাড়ব কিন্তু বলে দিচ্ছি জানিস, কাল আমি ইশকুলে যাই নি রে। আমার জর হয়েছিল তো।’ সঙ্গে-সঙ্গে তিম্ কাটা টিট-পাখির মতো শিস দিতে শুরু করল, ‘তুইত-তুইত- তা-রা-রা’ আর চলতে লাগল এক-ঠ্যাঙে লাফিয়ে লাফিয়ে। এমন জবর খবরটা ও-ই প্রথম আমায় দিতে পারায় দারুণ খুশি ও। বলল, ‘ঠিক-ঠিক, তুই কাল ইশকুলে ছিলি না বটে। চুঃ-চুঃ, গেলে দেখতে পেতিস কী কাণ্ডটাই না হল!’