০২:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ইশকুল (পর্ব-০৭)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • 19
আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

‘কী হল রে?’ ‘বলছি-বলছি। ক্লাসে বসে আছি আমরা, বুঝলি। আর প্রথমেই ছিল ফরাসির ক্লাস। বুড়ি ডাইনী আমাদের ক্রিয়াপদ না-শিখিয়ে ছাড়বে না: আলে (যাওয়া) আরিভে (পৌঁছনো), আঁত্রে (প্রবেশ করা), রেস্তে (থাকা), ত’বে (পড়ে যাওয়া) – এই সব ধাতুর পুরাঘটিত সব কটা কালের রূপ। রাইয়েস্কিকে বুড়ি ব্ল‍্যাক বোর্ডে ডাকল। রাইয়েভস্কি বেচারা সবে লিখতে শুরু করেছে রেস্তে, ত’বে, এমন সময় আচমকা গেল দরজা খুলে। আর ঘরে কে ঢুকল বল্ দেখি? একেবারে খোদ ইনস্পেক্টর (নামটা বলে তিকা নিজেই ভয়ে শিটিয়ে উঠল), হেডমাস্টার-মশাই (বলেই এমনভাবে আমার দিকে তাকাল তিষ্কা যেন ভাবখানা এই, ব্যাপার বুঝলি তো?) আর আমাদের ক্লাস-টিচার।
আমরা যে-যার জায়গায় বসার পর হেডমাস্টার- মশাই বলা শুরু করলেন: ‘বিদ্যার্থীবৃন্দ, একটা দুঃসংবাদ দেব তোমাদের। তোমাদেরই ক্লাসের একটি ছাত্র স্পাগিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। বাড়িতে একটা চিঠি লিখে রেখে গেছে সে, তাতে বলেছে সে নাকি জার্মান ফ্রন্টে যুদ্ধে যাচ্ছে। বিদ্যার্থীবৃন্দ, আমি কল্পনাও করতে পারি না যে সে তার ক্লাসের বন্ধুদের না জানিয়ে এ-কাজ করেছে। নিশ্চয়ই তোমাদের অনেকে আগে থেকে ওর এই পালানোর কথা জানতে, কিন্তু কষ্ট স্বীকার করে আমায় আর খবরটুকু দাও নি তোমরা। বিদ্যার্থীবৃন্দ, আমি বলতে চাই…’ পাক্কা আধ ঘণ্টারও বেশি এইভাবে হেডমাস্টার-মশাই মুখ চালালেন।’
আমার বুকটা ধক করে উঠল। ও, তাহলে এ-ই ব্যাপার! দ্যাখো কান্ড, ঠিক যেদিন কিনা অসুখের ওজর দেখিয়ে ইশকুল পালালুম সেইদিনই এমন সব জবর কাণ্ডকারখানা ঘটল, এমন সব সাংঘাতিক খবর আমি যার বিন্দুবিসর্গ জানি না। আর না ইয়াংকা সুকারন্তেইন, না ফেদকা বাশ্মাকভ, কেউই এসে ইশকুলের ছুটির পর খবরটা আমায় জানিয়ে গেল না। আবার বলে, আমি নাকি ওদের প্রাণের বন্ধ! ফেস্কার খেলার পিস্তলের জন্যে যখন গুলির দরকার হয় তখন আমি ওর মন্ড বন্ধ, বনে যাই। তখন আমার কাছে আসে ও। আর তার বদলে কিনা আমার সঙ্গে এমনি ব্যবহার! ইশকুলের অর্ধেক ছেলে ফ্রন্টে পালিয়ে যাবে, আর আমি গাধার মতো বসে থাকব এখানে।
দমকলের গাড়ির মতো বেগে ঢুকলুম ইশকুলে। কোটটা খুলে লুকিয়ে ফেলে কৌশলে তত্ত্বাবধায়ককে এড়িয়ে প্রার্থনার হলঘর থেকে বেরিয়ে-আসা ছেলের ভিড়ে মিশে গেলুম।
ভাল্কা প্লাগিনের যাঁরের মতো বাড়ি ছেড়ে পালানোর এই খবরটা নিয়ে এরপর কয়েকদিন সারা ইশকুল বেশ খানিকটা সরগরম হয়ে রইল।

সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পাশ কাটানোর কৌশল খুঁজছে বিচারকরা, ফেরাতে পারবে কি USAID

ইশকুল (পর্ব-০৭)

০৮:০০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

‘কী হল রে?’ ‘বলছি-বলছি। ক্লাসে বসে আছি আমরা, বুঝলি। আর প্রথমেই ছিল ফরাসির ক্লাস। বুড়ি ডাইনী আমাদের ক্রিয়াপদ না-শিখিয়ে ছাড়বে না: আলে (যাওয়া) আরিভে (পৌঁছনো), আঁত্রে (প্রবেশ করা), রেস্তে (থাকা), ত’বে (পড়ে যাওয়া) – এই সব ধাতুর পুরাঘটিত সব কটা কালের রূপ। রাইয়েস্কিকে বুড়ি ব্ল‍্যাক বোর্ডে ডাকল। রাইয়েভস্কি বেচারা সবে লিখতে শুরু করেছে রেস্তে, ত’বে, এমন সময় আচমকা গেল দরজা খুলে। আর ঘরে কে ঢুকল বল্ দেখি? একেবারে খোদ ইনস্পেক্টর (নামটা বলে তিকা নিজেই ভয়ে শিটিয়ে উঠল), হেডমাস্টার-মশাই (বলেই এমনভাবে আমার দিকে তাকাল তিষ্কা যেন ভাবখানা এই, ব্যাপার বুঝলি তো?) আর আমাদের ক্লাস-টিচার।
আমরা যে-যার জায়গায় বসার পর হেডমাস্টার- মশাই বলা শুরু করলেন: ‘বিদ্যার্থীবৃন্দ, একটা দুঃসংবাদ দেব তোমাদের। তোমাদেরই ক্লাসের একটি ছাত্র স্পাগিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। বাড়িতে একটা চিঠি লিখে রেখে গেছে সে, তাতে বলেছে সে নাকি জার্মান ফ্রন্টে যুদ্ধে যাচ্ছে। বিদ্যার্থীবৃন্দ, আমি কল্পনাও করতে পারি না যে সে তার ক্লাসের বন্ধুদের না জানিয়ে এ-কাজ করেছে। নিশ্চয়ই তোমাদের অনেকে আগে থেকে ওর এই পালানোর কথা জানতে, কিন্তু কষ্ট স্বীকার করে আমায় আর খবরটুকু দাও নি তোমরা। বিদ্যার্থীবৃন্দ, আমি বলতে চাই…’ পাক্কা আধ ঘণ্টারও বেশি এইভাবে হেডমাস্টার-মশাই মুখ চালালেন।’
আমার বুকটা ধক করে উঠল। ও, তাহলে এ-ই ব্যাপার! দ্যাখো কান্ড, ঠিক যেদিন কিনা অসুখের ওজর দেখিয়ে ইশকুল পালালুম সেইদিনই এমন সব জবর কাণ্ডকারখানা ঘটল, এমন সব সাংঘাতিক খবর আমি যার বিন্দুবিসর্গ জানি না। আর না ইয়াংকা সুকারন্তেইন, না ফেদকা বাশ্মাকভ, কেউই এসে ইশকুলের ছুটির পর খবরটা আমায় জানিয়ে গেল না। আবার বলে, আমি নাকি ওদের প্রাণের বন্ধ! ফেস্কার খেলার পিস্তলের জন্যে যখন গুলির দরকার হয় তখন আমি ওর মন্ড বন্ধ, বনে যাই। তখন আমার কাছে আসে ও। আর তার বদলে কিনা আমার সঙ্গে এমনি ব্যবহার! ইশকুলের অর্ধেক ছেলে ফ্রন্টে পালিয়ে যাবে, আর আমি গাধার মতো বসে থাকব এখানে।
দমকলের গাড়ির মতো বেগে ঢুকলুম ইশকুলে। কোটটা খুলে লুকিয়ে ফেলে কৌশলে তত্ত্বাবধায়ককে এড়িয়ে প্রার্থনার হলঘর থেকে বেরিয়ে-আসা ছেলের ভিড়ে মিশে গেলুম।
ভাল্কা প্লাগিনের যাঁরের মতো বাড়ি ছেড়ে পালানোর এই খবরটা নিয়ে এরপর কয়েকদিন সারা ইশকুল বেশ খানিকটা সরগরম হয়ে রইল।