০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ইশকুল (পর্ব-০৯)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • 19
আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

আমাদের ইশকুলের ধর্মযাজক ফাদার গেন্নাদির বয়েস সত্তর বছরের কাছাকাছি। ঘন দাড়ি আর ভুরুতে মুখটা ভরা, এক ইঞ্চি ফাঁকও চোখে পড়ত না। ফাদার ছিলেন দিব্যি মোটাসোটা। ঘাড় ফিরিয়ে পেছনদিকে দেখতে হলে তাঁকে সারা শরীরটাই ঘোরাতে হত। তাঁর আবার ঘাড় বলতে কিছু ছিল না কিনা, তাই।
ছেলেরা ওঁকে পছন্দ করত। ওঁর ক্লাসে যা-খুশি করা চলত তাস খেলা, ছবি আঁকা, কিংবা ওল্ড টেস্টামেন্ট বইটি সরিয়ে সেই জায়গায় নিজেদের টেবিলে নিষিদ্ধ ন্যাট পিঙ্কারটন বা শার্লক হোমসের বই রেখে দেয়া, সবকিছু। ফাদার গেন্নাদি আবার দূরের জিনিস ভালো দেখতে পেতেন না কিনা তাই।
সেদিন ফাদার গেন্নাদি হাতখানি যথারীতি আশীর্বাদের ভঙ্গিতে তুলে ক্লাসে ঢুকছেন, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ক্লাস-মনিটর চিৎকার করে উঠল: ‘ঈশ্বরই পিতা, সান্ত্বনাদাতা, সত্যের আত্মাস্বরূপ..’
ফাদার গেন্নাদি আবার কানে ছিলেন খাটো। তিনি সবসময়েই চাইতেন ছেলেরা প্রার্থনাবাক্যগুলি দরাজ গলায় স্পষ্ট করে উচ্চারণ করুক। কিন্তু সেদিন তাঁরও মনে হল, মনিটর যেন একটু বাড়াবাড়ি করছে। তাই হাত নেড়ে কঠিন স্বরে বললেন:
‘চুপ, চুপ কাঁ, হচ্ছে কী? কোথায় মিষ্টি সুরে পড়বে, তা নয় ষাঁড়ের মতো চে’চাচ্ছে।’
ফাদার গোয়াদি অনেক দূরের ঘটনা নিয়ে ভগিতা শুরু করলেন। উড়নচণ্ডে ছেলের নীতিকথাটি দিয়ে শুরু করলেন বক্তৃতা। সে-সময়ে যতটুকু বুঝেছিলুম তা এই যে ছেলেটা বাপকে ছেড়ে দেশবিদেশ ঘুরতে বেরিয়েছিল, তারপর অনেক কড়কাপ্‌টা, দুঃখকষ্ট সহ্য করে ছেলে আবার সুড়সুড় করে ফিরে এসেছিল ঘরে।
এর পরে তিনি আমাদের স্বাভাবিক গুণের বিকাশ সম্বন্ধে নীতিকথাটি শুনিয়েছিলেন। কীভাবে একজন লোক তার গোলামদের সবাইকে টাকা দিয়ে তাদের নিজের নিজের গুণের বিকাশ ঘটাতে বলল, কীভাবেই বা কিছু-কিছু গোলাম ব্যবসা-বাণিজ্যে ওই টাকা খাটিয়ে লাভ করল আর বাকি কেউ-কেউ টাকাটা লুকিয়ে রাখায় কিছুই পেল না এই নিয়ে নীতিকথাটি।

সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পাশ কাটানোর কৌশল খুঁজছে বিচারকরা, ফেরাতে পারবে কি USAID

ইশকুল (পর্ব-০৯)

০৮:০০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

আমাদের ইশকুলের ধর্মযাজক ফাদার গেন্নাদির বয়েস সত্তর বছরের কাছাকাছি। ঘন দাড়ি আর ভুরুতে মুখটা ভরা, এক ইঞ্চি ফাঁকও চোখে পড়ত না। ফাদার ছিলেন দিব্যি মোটাসোটা। ঘাড় ফিরিয়ে পেছনদিকে দেখতে হলে তাঁকে সারা শরীরটাই ঘোরাতে হত। তাঁর আবার ঘাড় বলতে কিছু ছিল না কিনা, তাই।
ছেলেরা ওঁকে পছন্দ করত। ওঁর ক্লাসে যা-খুশি করা চলত তাস খেলা, ছবি আঁকা, কিংবা ওল্ড টেস্টামেন্ট বইটি সরিয়ে সেই জায়গায় নিজেদের টেবিলে নিষিদ্ধ ন্যাট পিঙ্কারটন বা শার্লক হোমসের বই রেখে দেয়া, সবকিছু। ফাদার গেন্নাদি আবার দূরের জিনিস ভালো দেখতে পেতেন না কিনা তাই।
সেদিন ফাদার গেন্নাদি হাতখানি যথারীতি আশীর্বাদের ভঙ্গিতে তুলে ক্লাসে ঢুকছেন, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ক্লাস-মনিটর চিৎকার করে উঠল: ‘ঈশ্বরই পিতা, সান্ত্বনাদাতা, সত্যের আত্মাস্বরূপ..’
ফাদার গেন্নাদি আবার কানে ছিলেন খাটো। তিনি সবসময়েই চাইতেন ছেলেরা প্রার্থনাবাক্যগুলি দরাজ গলায় স্পষ্ট করে উচ্চারণ করুক। কিন্তু সেদিন তাঁরও মনে হল, মনিটর যেন একটু বাড়াবাড়ি করছে। তাই হাত নেড়ে কঠিন স্বরে বললেন:
‘চুপ, চুপ কাঁ, হচ্ছে কী? কোথায় মিষ্টি সুরে পড়বে, তা নয় ষাঁড়ের মতো চে’চাচ্ছে।’
ফাদার গোয়াদি অনেক দূরের ঘটনা নিয়ে ভগিতা শুরু করলেন। উড়নচণ্ডে ছেলের নীতিকথাটি দিয়ে শুরু করলেন বক্তৃতা। সে-সময়ে যতটুকু বুঝেছিলুম তা এই যে ছেলেটা বাপকে ছেড়ে দেশবিদেশ ঘুরতে বেরিয়েছিল, তারপর অনেক কড়কাপ্‌টা, দুঃখকষ্ট সহ্য করে ছেলে আবার সুড়সুড় করে ফিরে এসেছিল ঘরে।
এর পরে তিনি আমাদের স্বাভাবিক গুণের বিকাশ সম্বন্ধে নীতিকথাটি শুনিয়েছিলেন। কীভাবে একজন লোক তার গোলামদের সবাইকে টাকা দিয়ে তাদের নিজের নিজের গুণের বিকাশ ঘটাতে বলল, কীভাবেই বা কিছু-কিছু গোলাম ব্যবসা-বাণিজ্যে ওই টাকা খাটিয়ে লাভ করল আর বাকি কেউ-কেউ টাকাটা লুকিয়ে রাখায় কিছুই পেল না এই নিয়ে নীতিকথাটি।