তৃতীয় পরিচ্ছেদ
ধাঁধার উত্তর খুঁজে বের করার ভার আমার ওপর চাপিয়ে মা চলে গেলেন। জার্মানরা আমাদের দেশের লোকের চেয়ে খারাপ না হয়ে পারে কী করে, যখন সবাই জানে তারা খারাপ? এই তো সেদিন সিনেমায় দেখলুম জার্মানরা কাউকেই রেহাই না দিয়ে কীভাবে সবকিছু, পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। ওরা রীমসের বড় গির্জে ধ্বংস করে দিয়েছে, অনেক ছোটখাট গির্জে অপবিত্র করেছে। আর আমাদের দেশের লোক? কই, তারা তো কিছু ধ্বংস করে নি, কিছু অপবিত্র করে নি। বরং উলটো, ওই একই ছবিতে আমি স্বচক্ষে দেখেছি একজন রুশ অফিসার একটা জার্মান বাচ্চাকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাচ্ছেন।
অগত্যা ফেদকার শরণ নিলুম।
ফেংকাও আমার সঙ্গে একমত হল।
‘সে আর বলতে? ওরা তো জানোয়ার। নিরীহ যাত্রী-বোঝাই ‘লুসিটানিয়া’ জাহাজ নইলে ডুবিয়ে দেয় ওরা? কই, আমরা তো কিছু ডুবোই নি? আমাদের জার আর ইংরেজদের জার মহৎ লোক। ফরাসীদের প্রেসিডেন্টও ভালো। আর ওদের ওই ভিলহেল্মটা একটা লোচ্চা, ইতর।’
‘ফেদুকা, ফরাসী জারকে প্রেসিডেন্ট বলে কেন রে?’ আমি শুধোলুম। আস্তে আস্তে প্রশ্নটা হজম করল ফেঢুকা।
‘কী জানি,’ ও জবাব দিল। ‘শুনেছি ওদের প্রেসিডেন্ট নাকি মোটেই জার ছিল না, ওই আর কি অমনিই ছিল।’
‘অমনিই মানে? কী রকম ছিল?’
‘আসলে আমি ঠিক জানি না, বুঝলি। দুমার লেখ্য একটা বই পড়েছিলুম একবার। ভারি মজার বই, অ্যাডভেঞ্চারে একেবারে ঠাসা। ওই বইয়ে লেখা ছিল যে ফরাসীরা একবার ওদের জারকে মেরে ফ্যালে, আর তারপর থেকে ওদের দেশে আছে জারের বদলে প্রেসিডেন্ট।’
শুনে রীতিমতো খেপে গেলুম আমি। বললুম, ‘যাঃ, জারকে আবার মারতে পারা যায় নাকি? ফেক্কা, তুই ভারি মিথ্যেবাদী, আর নয়তো সব গুলিয়ে ফেলেছিস, কী বল?’