০১:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইশকুল (পর্ব-২০)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • 19
আর্কাদি গাইদার

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

‘নিশ্চয়ই,’ বলল ফেদকা। তারপর পায়ের বেগ কমিয়ে দিয়ে, আর আমরা যেন মাঠে না-থেকে লোকের ভিড়ের মধ্যে আছি এইভাবে এদিক-ওদিক ভালো করে দেখে নিয়ে বলল, ‘আরে ইয়ার, উনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাজনীতি করতেন বলে।’

আমাদের মাস্টারমশাই ঠিক কী ধরনের রাজনীতি করতেন বলে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সে-কথাটা ফেদ্‌কাকে জিজ্ঞেস করতে যাব এমন সময় রাস্তার মোড়ের ওধার থেকে তালে তালে পা-ফেলে এগিয়ে-আসা একদল লোকের ভারি জুতোর শব্দ শোনা গেল।

তারপরই দেখতে পেলুম প্রায় শ’খানেক যুদ্ধবন্দীকে।

কিন্তু কই, শেকল দিয়ে তো বাঁধতে দেখলুম না ওদের, তাছাড়া ওদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল মাত্র ছ’জন সৈন্য।

অস্ট্রিয়ানদের ক্লান্ত, গোমড়া মুখগুলো ওদের পাঁশুটে রঙের ফৌজী কোট আর দোমড়ানো-মোচড়ানো টুপির সঙ্গে মিলেমিশে যেন এক হয়ে গিয়েছিল। ওরা হে’টে যাচ্ছিল নিঃশব্দে, সার বেধে, সৈন্যরা যেমন মাপা পা-ফেলে হাঁটে তেমনিভাবে।

দলটার সার বোধে চলে যাওয়া দেখতে দেখতে ফেকা আর আমি ভাবছিলুম, ‘ওঃ, তাহলে শত্রু হল এইরকম। এরাই তাহলে সেই অস্ট্রিয়ান আর জার্মান যাদের অত্যাচারে সব দেশের লোক আজ স্তম্ভিত হয়ে গেছে। ভুরু কুচকেই আছ, তাই না? যুদ্ধবন্দী হওয়াটা তেমন পছন্দসই লাগছে না, কেমন? ঠিক হয়েছে, কেমন জব্দ হয়েছ সব!’

দলটা চলে গেলে ফেদুকা ওদের দিকে ঘুসি বাগিয়ে বার কতক নাড়ল।

‘বিষাক্ত গ্যাস আবিষ্কার করেছে ব্যাটারা!’

বাড়ি ফিরলুম কিছুটা মনমরা হয়ে। কেন, তা বলতে পারব না। ওই সব ক্লান্ত চেহারার, পাঁশুটে মুখওয়ালা যুদ্ধবন্দীরা আমরা যেমন ভেবেছিলুম তেমন ভয়ভক্তি আমাদের মনে জাগাতে পারল না বলে বোধহয়। ছোঃ, ভারি সব বীর, গায়ে ফৌজী কোট না থাকলে ওদের দিব্যি শরণার্থী বলেই চালিয়ে দেয়া যেত। সেই একইরকম রোগা, চিসানো সব মুখ, চারপাশের সবকিছু সম্বন্ধে সেই একরকম ক্লান্ত আর উদাস-উদাস ভাব।

২০২৫ সালে ফিলিপাইনের ১২টি প্রধান অবকাঠামো প্রকল্প: রিয়েল এস্টেটের রূপান্তর

ইশকুল (পর্ব-২০)

০৮:০০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
আর্কাদি গাইদার

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

‘নিশ্চয়ই,’ বলল ফেদকা। তারপর পায়ের বেগ কমিয়ে দিয়ে, আর আমরা যেন মাঠে না-থেকে লোকের ভিড়ের মধ্যে আছি এইভাবে এদিক-ওদিক ভালো করে দেখে নিয়ে বলল, ‘আরে ইয়ার, উনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাজনীতি করতেন বলে।’

আমাদের মাস্টারমশাই ঠিক কী ধরনের রাজনীতি করতেন বলে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সে-কথাটা ফেদ্‌কাকে জিজ্ঞেস করতে যাব এমন সময় রাস্তার মোড়ের ওধার থেকে তালে তালে পা-ফেলে এগিয়ে-আসা একদল লোকের ভারি জুতোর শব্দ শোনা গেল।

তারপরই দেখতে পেলুম প্রায় শ’খানেক যুদ্ধবন্দীকে।

কিন্তু কই, শেকল দিয়ে তো বাঁধতে দেখলুম না ওদের, তাছাড়া ওদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল মাত্র ছ’জন সৈন্য।

অস্ট্রিয়ানদের ক্লান্ত, গোমড়া মুখগুলো ওদের পাঁশুটে রঙের ফৌজী কোট আর দোমড়ানো-মোচড়ানো টুপির সঙ্গে মিলেমিশে যেন এক হয়ে গিয়েছিল। ওরা হে’টে যাচ্ছিল নিঃশব্দে, সার বেধে, সৈন্যরা যেমন মাপা পা-ফেলে হাঁটে তেমনিভাবে।

দলটার সার বোধে চলে যাওয়া দেখতে দেখতে ফেকা আর আমি ভাবছিলুম, ‘ওঃ, তাহলে শত্রু হল এইরকম। এরাই তাহলে সেই অস্ট্রিয়ান আর জার্মান যাদের অত্যাচারে সব দেশের লোক আজ স্তম্ভিত হয়ে গেছে। ভুরু কুচকেই আছ, তাই না? যুদ্ধবন্দী হওয়াটা তেমন পছন্দসই লাগছে না, কেমন? ঠিক হয়েছে, কেমন জব্দ হয়েছ সব!’

দলটা চলে গেলে ফেদুকা ওদের দিকে ঘুসি বাগিয়ে বার কতক নাড়ল।

‘বিষাক্ত গ্যাস আবিষ্কার করেছে ব্যাটারা!’

বাড়ি ফিরলুম কিছুটা মনমরা হয়ে। কেন, তা বলতে পারব না। ওই সব ক্লান্ত চেহারার, পাঁশুটে মুখওয়ালা যুদ্ধবন্দীরা আমরা যেমন ভেবেছিলুম তেমন ভয়ভক্তি আমাদের মনে জাগাতে পারল না বলে বোধহয়। ছোঃ, ভারি সব বীর, গায়ে ফৌজী কোট না থাকলে ওদের দিব্যি শরণার্থী বলেই চালিয়ে দেয়া যেত। সেই একইরকম রোগা, চিসানো সব মুখ, চারপাশের সবকিছু সম্বন্ধে সেই একরকম ক্লান্ত আর উদাস-উদাস ভাব।