০৫:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৮০) চীন–ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা নীতি বিকৃত করার অভিযোগ বেইজিংয়ের ভারতের পানি সংকটের ছায়ায় পানীয় শিল্প: রাজস্থানে জল নিয়ে বাড়ছে ঝুঁকি ও অসন্তোষ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৭) আমির খসরুর আসন পরিবর্তন, তার আসনে মনোনয়ন পেলেন সাঈদ নোমান এনসিপি ছাড়লেন তাসনিম জারা থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি চুক্তি সিলেটে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নিষিদ্ধ বিড়িসহ যুবক গ্রেপ্তার একীভূত পাঁচ ব্যাংকের আমানত উত্তোলনে বিলম্ব, এ বছর অর্থ ছাড়ের সুযোগ নেই নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন: ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, বাংলাদেশে সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৫২)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • 97

রাঙাছুটুর বাপের বাড়ি

নানার মৃত্যুর ১৫/১৬ দিন পরে নানার একমাত্র বোন ফজার মা আমাদের বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অসুস্থ ভাইকে পালকিতে করিয়া পাঠাইয়া এই বৃদ্ধা মহিলা দিনের পর দিন গনিয়াছেন আর পথের দিকে চাহিয়া থাকিয়াছেন। “কবে ভাই সুস্থ হইয়া ফিরিয়া আসিবে?” হয়তো ভিখারিদের মারফত ভাই-এর খবর লইতেও চেষ্টা করিয়াছেন। ভিখারিরা হয়তো জানিয়াও এই শোকের সংবাদ তাকে দেয় নাই। সেই সুদূর তাম্বুলখানা গ্রাম হইতে এই বৃদ্ধা মাত্র একখানা লাঠি হাতে করিয়া পথে বহুবার জিড়ান দিয়া আমাদের বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

“রাঙাছুটু। আমার ভাই কোথায়?” মা কোনোরকমে চোখের পানি গোপন করিয়া বলেন, “ফুপু! তোমার ভাই ভালো আছেন। ও-ঘরে ঘুমাইতেছেন। তুমি এখন শব্দ করিও না। হাত-পা ধুইয়া কিছু খাও। পরে ভাই-এর কাছে যাইও।”

হাত-পা ধুইয়া ফজার মা কিছু খাইলেন। তার পরই মাকে বলিলেন, “রাঙাছুটু! আমার ভাই কোন ঘরে আমাকে সেখানে লইয়া যাও।”

মা বলিলেন, “ফুপু! তোমার ভাই ও-ঘরে খুবই অসুস্থ। আজকের রাত্রের মতো তুমি এ-ঘরে ঘুমাও। কাল ভোর হইলেই তোমাকে তাঁর কাছে লইয়া যাইব।”

ফজার মা উত্তর করিলেন, “রাঙাছুটু। আমাকে ভুলাইও না। তবে কি সত্য সত্যই আমার ভাই ফুরাইয়া গিয়াছে। আমি যে আজ রাত্রে খারাপ স্বপ্ন দেখিয়াছি। একখানা সাদা পথ ধবধব করিতেছে। সেই পথ দিয়া আমার ভাই কোথায় চলিয়া গেল। আজ ভোর না হইতেই ভাই-এর খোঁজে তাই বাড়ির বাহির হইয়াছি। রাঙাছুটু। জলদি করিয়া বল, আমার ভাই কি বাঁচিয়া আছে?”

মা তখন ডাক ছাড়িয়া কাঁদিয়া উঠিলেন। বুড়ি সবই বুঝিতে পারিয়া মায়ের গলা জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। সারারাত মা আর ফজার মা নানার জীবনের অতীত কাহিনী লইয়া আলোচনা করিয়া কাটাইলেন। ভোর না হইতে নানার কবরে বসিয়া বুড়ি ডাক ছাড়িয়া কাঁদিতে লাগিলেন। এরপর বুড়িকে কে দেখাশুনা করিবে? সেই জনশূন্য ভিটার উপর বুড়ি একা কি করিয়া থাকিবেন? আজ তাঁর এত আদরের ফজা যদি বাঁচিয়া থাকিত।

মা, বাজান বুড়িকে বৃথা সান্ত্বনা দিতে লাগিলেন। মা বলিলেন, ‘ফুপু। আর তোমার তাম্বুলখানায় যাইয়া কাজ নাই। তুমি এখানেই থাকিয়া যাও। আমার ছেলেদের দেখাশুনা করিও। দু’মুঠা ভাত তোমাকে আমিই দিতে পারিব।”

 

চলবে…

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৮০)

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৫২)

১১:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

রাঙাছুটুর বাপের বাড়ি

নানার মৃত্যুর ১৫/১৬ দিন পরে নানার একমাত্র বোন ফজার মা আমাদের বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অসুস্থ ভাইকে পালকিতে করিয়া পাঠাইয়া এই বৃদ্ধা মহিলা দিনের পর দিন গনিয়াছেন আর পথের দিকে চাহিয়া থাকিয়াছেন। “কবে ভাই সুস্থ হইয়া ফিরিয়া আসিবে?” হয়তো ভিখারিদের মারফত ভাই-এর খবর লইতেও চেষ্টা করিয়াছেন। ভিখারিরা হয়তো জানিয়াও এই শোকের সংবাদ তাকে দেয় নাই। সেই সুদূর তাম্বুলখানা গ্রাম হইতে এই বৃদ্ধা মাত্র একখানা লাঠি হাতে করিয়া পথে বহুবার জিড়ান দিয়া আমাদের বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

“রাঙাছুটু। আমার ভাই কোথায়?” মা কোনোরকমে চোখের পানি গোপন করিয়া বলেন, “ফুপু! তোমার ভাই ভালো আছেন। ও-ঘরে ঘুমাইতেছেন। তুমি এখন শব্দ করিও না। হাত-পা ধুইয়া কিছু খাও। পরে ভাই-এর কাছে যাইও।”

হাত-পা ধুইয়া ফজার মা কিছু খাইলেন। তার পরই মাকে বলিলেন, “রাঙাছুটু! আমার ভাই কোন ঘরে আমাকে সেখানে লইয়া যাও।”

মা বলিলেন, “ফুপু! তোমার ভাই ও-ঘরে খুবই অসুস্থ। আজকের রাত্রের মতো তুমি এ-ঘরে ঘুমাও। কাল ভোর হইলেই তোমাকে তাঁর কাছে লইয়া যাইব।”

ফজার মা উত্তর করিলেন, “রাঙাছুটু। আমাকে ভুলাইও না। তবে কি সত্য সত্যই আমার ভাই ফুরাইয়া গিয়াছে। আমি যে আজ রাত্রে খারাপ স্বপ্ন দেখিয়াছি। একখানা সাদা পথ ধবধব করিতেছে। সেই পথ দিয়া আমার ভাই কোথায় চলিয়া গেল। আজ ভোর না হইতেই ভাই-এর খোঁজে তাই বাড়ির বাহির হইয়াছি। রাঙাছুটু। জলদি করিয়া বল, আমার ভাই কি বাঁচিয়া আছে?”

মা তখন ডাক ছাড়িয়া কাঁদিয়া উঠিলেন। বুড়ি সবই বুঝিতে পারিয়া মায়ের গলা জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। সারারাত মা আর ফজার মা নানার জীবনের অতীত কাহিনী লইয়া আলোচনা করিয়া কাটাইলেন। ভোর না হইতে নানার কবরে বসিয়া বুড়ি ডাক ছাড়িয়া কাঁদিতে লাগিলেন। এরপর বুড়িকে কে দেখাশুনা করিবে? সেই জনশূন্য ভিটার উপর বুড়ি একা কি করিয়া থাকিবেন? আজ তাঁর এত আদরের ফজা যদি বাঁচিয়া থাকিত।

মা, বাজান বুড়িকে বৃথা সান্ত্বনা দিতে লাগিলেন। মা বলিলেন, ‘ফুপু। আর তোমার তাম্বুলখানায় যাইয়া কাজ নাই। তুমি এখানেই থাকিয়া যাও। আমার ছেলেদের দেখাশুনা করিও। দু’মুঠা ভাত তোমাকে আমিই দিতে পারিব।”

 

চলবে…