০২:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

শুভ কামনা

  • Sarakhon Report
  • ০৬:২১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • 19
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯২৫ সালের কথা। ‘চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম সুধীরবাবুদের দোকানে যাই। সেখান তখন প্রতি বিকালে একটি সাহিত্যিক আড্ডা হোত। আমি তখন নতুন সাহিত্যিক, ‘প্রবাসী’তে কয়েকটি ছোটগল্প লিখেছি মাত্র এবং ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের খসড়া করচি। তাঁদের এই বৈকালিক আড্ডাটি আমার বড় ভাল লাগতো। কাজকর্মের অবসরে মাঝে মাঝে ‘মৌচাক’, আপিসে এসে এই আড্ডাতে যোগ দিতাম। ১৯২৯ সালে আমি কলকাতায় আবার ফিরে আঁসি, কয়েক বৎসর বিহার প্রবাসের পরে। ওই বৎসরেই ‘পথের পাঁচালী’ প্রকাশিত হয়। ঐ সাল থেকে ‘মৌচাক’ আপিসে আমার যাওয়া আসা বাঁধা নিয়মে শুরু হয়ে গেল।
অনেক সাহিত্যিক, শিল্পী, মজলিসী ও রসিক ব্যক্তির সমাগমে ‘মৌচাক’-এর এ আড্ডা গমগম করতো। এইখানে বন্ধুবর হেমেন্দ্রকুমার রায়, মনীন্দ্রলাল বসু, ‘সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে। সুধীরবাবুর আদর আপ্যায়নে কত বর্ষার বৈকাল ও শীতের সন্ধ্যায় চায়ের মজলিস এখানে সরস ও আনন্দময় হয়ে উঠেচে। কত ঠোঙা ঠোঙা ‘অবাক জলপান’ ফেরি-ওয়ালার ঝুলির মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে বাদল দিনে অতিথি সৎকারে সহযোগিতা করেচে; ‘মৌচাক’-এর ইতিহাসের সঙ্গে সে সবের ইতিহাসও জড়ানো।
একদিন সুধীরবাবু বললেন- বিভূতিবাবু, মৌচাকের জন্যে লিখবেন?
আমি তো একপায়ে খাড়া। বললুম-নিশ্চয়ই।
-কি লিখবেন বলুন। ছেলেদের উপন্যাস দিন। কি বলেন?
এভাবে ছেলেদের জন্য লেখা উপন্যাস ‘চাঁদের পাহাড়’-এর সূত্রপাত। সুধীরবাবুর উৎসাহ না পেলে হয়তো ও বই লেখাই হোত না।
আজকাল কলকাতা থেকে দূরে বাস করি। কিন্তু ‘মৌচাক’-এর বৈকালিক আড্ডার আকর্ষণ এমন মোহ বিস্তার করেচে মনে, যে, কলকাতায় এলেই ওখানে না গিয়ে পারি না। অন্তত কিছুক্ষণের জন্যেও যাওয়া চাই-ই। বন্ধুবর সরোজ রায়চৌধুরী আসে, মণীন্দ্র বসু আসে, সুধীরবাবু ও অপূর্ববাবু তো থাকেনই অতীত দিনের আনন্দ মুহূর্তগুলি আবার যেন সজীব হয়ে ওঠে। সে সব দিনের হারানো অনুভূতিগুলি আবার যেন ফিরে পাই। সেজন্যই ‘মৌচাক কাগজের ওপর আমার কেমন একটা ব্যক্তিগত টান আছে-এর ভালমন্দ ব্যক্তিগত লাভক্ষতির দৃষ্টি নিয়ে দেখি।
আমি জানি ‘মৌচাক’ শুধু ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আনন্দবর্ধন করে না। তাদের পিতামাতারও অবসর বিনোদনে যথেষ্ট সাহায্য করে।
চাঁইবাসায় একটি বন্ধু গভর্নমেন্টের এনজিনিয়ার ও বিদ্বান ব্যক্তি। আমায় বললেন- এবার ‘মৌচাক’-এ হেম বাগচীর ‘গরমেটো’ কবিতা পড়েছেন?
আমি বললুম-এখনও পড়ি নি।
-পড়ে দেখবেন। চমৎকার রস আছে ওর মধ্যে। আজ দুপুরে মশগুল হয়ে ছিলাম ‘মৌচাক’ খানা নিয়ে।
এ রকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। একটা মাত্র মনে হোল।
‘মৌচাক’-এর লেখা যখন লিখতে বসি, তখন কল্পনা নেত্রে দেখি বহু ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ও তাদের কর্মক্লান্ত পিতাঠাকুরদের উৎসুক দৃষ্টি, সবাই যেন এই লেখার দিকে চেয়ে রয়েছে একদৃষ্টে-তবে অক্ষমতার জন্যে তাদের সে ঔৎসুক্য চরিতার্থ হয়তো সব সময় করে উঠতে পারি না-সে কথা আলাদা।

২০২৫ সালে ফিলিপাইনের ১২টি প্রধান অবকাঠামো প্রকল্প: রিয়েল এস্টেটের রূপান্তর

শুভ কামনা

০৬:২১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯২৫ সালের কথা। ‘চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম সুধীরবাবুদের দোকানে যাই। সেখান তখন প্রতি বিকালে একটি সাহিত্যিক আড্ডা হোত। আমি তখন নতুন সাহিত্যিক, ‘প্রবাসী’তে কয়েকটি ছোটগল্প লিখেছি মাত্র এবং ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের খসড়া করচি। তাঁদের এই বৈকালিক আড্ডাটি আমার বড় ভাল লাগতো। কাজকর্মের অবসরে মাঝে মাঝে ‘মৌচাক’, আপিসে এসে এই আড্ডাতে যোগ দিতাম। ১৯২৯ সালে আমি কলকাতায় আবার ফিরে আঁসি, কয়েক বৎসর বিহার প্রবাসের পরে। ওই বৎসরেই ‘পথের পাঁচালী’ প্রকাশিত হয়। ঐ সাল থেকে ‘মৌচাক’ আপিসে আমার যাওয়া আসা বাঁধা নিয়মে শুরু হয়ে গেল।
অনেক সাহিত্যিক, শিল্পী, মজলিসী ও রসিক ব্যক্তির সমাগমে ‘মৌচাক’-এর এ আড্ডা গমগম করতো। এইখানে বন্ধুবর হেমেন্দ্রকুমার রায়, মনীন্দ্রলাল বসু, ‘সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে। সুধীরবাবুর আদর আপ্যায়নে কত বর্ষার বৈকাল ও শীতের সন্ধ্যায় চায়ের মজলিস এখানে সরস ও আনন্দময় হয়ে উঠেচে। কত ঠোঙা ঠোঙা ‘অবাক জলপান’ ফেরি-ওয়ালার ঝুলির মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে বাদল দিনে অতিথি সৎকারে সহযোগিতা করেচে; ‘মৌচাক’-এর ইতিহাসের সঙ্গে সে সবের ইতিহাসও জড়ানো।
একদিন সুধীরবাবু বললেন- বিভূতিবাবু, মৌচাকের জন্যে লিখবেন?
আমি তো একপায়ে খাড়া। বললুম-নিশ্চয়ই।
-কি লিখবেন বলুন। ছেলেদের উপন্যাস দিন। কি বলেন?
এভাবে ছেলেদের জন্য লেখা উপন্যাস ‘চাঁদের পাহাড়’-এর সূত্রপাত। সুধীরবাবুর উৎসাহ না পেলে হয়তো ও বই লেখাই হোত না।
আজকাল কলকাতা থেকে দূরে বাস করি। কিন্তু ‘মৌচাক’-এর বৈকালিক আড্ডার আকর্ষণ এমন মোহ বিস্তার করেচে মনে, যে, কলকাতায় এলেই ওখানে না গিয়ে পারি না। অন্তত কিছুক্ষণের জন্যেও যাওয়া চাই-ই। বন্ধুবর সরোজ রায়চৌধুরী আসে, মণীন্দ্র বসু আসে, সুধীরবাবু ও অপূর্ববাবু তো থাকেনই অতীত দিনের আনন্দ মুহূর্তগুলি আবার যেন সজীব হয়ে ওঠে। সে সব দিনের হারানো অনুভূতিগুলি আবার যেন ফিরে পাই। সেজন্যই ‘মৌচাক কাগজের ওপর আমার কেমন একটা ব্যক্তিগত টান আছে-এর ভালমন্দ ব্যক্তিগত লাভক্ষতির দৃষ্টি নিয়ে দেখি।
আমি জানি ‘মৌচাক’ শুধু ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আনন্দবর্ধন করে না। তাদের পিতামাতারও অবসর বিনোদনে যথেষ্ট সাহায্য করে।
চাঁইবাসায় একটি বন্ধু গভর্নমেন্টের এনজিনিয়ার ও বিদ্বান ব্যক্তি। আমায় বললেন- এবার ‘মৌচাক’-এ হেম বাগচীর ‘গরমেটো’ কবিতা পড়েছেন?
আমি বললুম-এখনও পড়ি নি।
-পড়ে দেখবেন। চমৎকার রস আছে ওর মধ্যে। আজ দুপুরে মশগুল হয়ে ছিলাম ‘মৌচাক’ খানা নিয়ে।
এ রকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। একটা মাত্র মনে হোল।
‘মৌচাক’-এর লেখা যখন লিখতে বসি, তখন কল্পনা নেত্রে দেখি বহু ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ও তাদের কর্মক্লান্ত পিতাঠাকুরদের উৎসুক দৃষ্টি, সবাই যেন এই লেখার দিকে চেয়ে রয়েছে একদৃষ্টে-তবে অক্ষমতার জন্যে তাদের সে ঔৎসুক্য চরিতার্থ হয়তো সব সময় করে উঠতে পারি না-সে কথা আলাদা।