১২:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

আমাদের সন্তানদের জন্যে চোখের পাতা কি দ্রুত উম্মোচন করছি?

  • Sarakhon Report
  • ০৮:১৮:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • 19

স্বদেশ রায় 

ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণ পরিচয়, প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ, রামসুন্দর বসাকের বাল্যশিক্ষা (শোনা যায় এটাও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা), রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠের চার ভাগ । এই বইগুলোর কোনটাই স্কুলের সিলেবাসে ছিলো না- তবে স্কুলে যাবার আগে এগুলো পড়েই বাল্যশিক্ষা শুরু। তারপরে সরাসরি তৃতীয় শ্রেনীতে ফাইনাল পরীক্ষায় বসিয়ে দিয়ে চতুর্থ শ্রেনী থেকে স্কুল শুরু করাতে নিচের ক্লাসের বাল্য শিক্ষার বইগুলোর সঙ্গে ওই ভাবে পরিচয় ছিলো না- একটা বয়স অবধি। তাছাড়া তখন বাল্য শিক্ষার যে একটা প্রয়োজনীয়তা আছে এসব ভাবার মতো মনোজগত বা বোধও ছিলো না। তাই প্রথম দিন ধাক্কা খেলাম ইন্টারমিডিয়েট এর প্রথম দিনের বোটানি ক্লাসে গিয়ে।

বোটানির শিক্ষক বুলবুল কবীর। তাঁর মা রত্মগর্ভা। ভাই বোন সবাই উচ্চ শিক্ষিত। বনেয়েদি পরিবার।তিনি ক্লাসে ঢুকলেন একটা ক্রিকেট বল হাতে নিয়ে এবং কাকে যেন খুঁজছেন। একটু পরেই বুঝতে পারলাম, আমাদের সায়েন্স গ্রুপের কোন একটা ছেলে ওই ক্রিকেট বলটিকে পা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। ক্রিকেট খেলাটাও অনেকটা পার্লামেন্টের মতো। সেখানে লিখিত নিয়মের পাশাপাশি কিছু কনভেনশন মেনে চলতে হয়। তাই ক্রিকেট বলে সাধারণত কেউ পা দেয় না। হাত দিয়ে ধরে ছুড়ে দেয়। স্যার আমাদের ওই বন্ধুকে সেদিন ক্রিকেট বলের ওই বিষয়টি শুধু বোঝাতে গিয়ে বললেন, তোমাদের বা কী দোষ দেব, দোষ তো আমাদের। “প্রথম ভাগকে”  বাদ দিয়ে সেখানে তোমাদের পড়াই “সবুজ সাথী” । যেখানে ছিলো “ গুরুজনে কর নতি” তার বদলে পড়াই , একটা বাচ্চা ছেলে একজন বয়স্ক মানুষকে বলছে,  “  ও মিয়া কি কর” ?  তার পরে আবার তাঁর মুখের দাড়ি দেখে বলছে, “ মুখে কি”  — তিনি উত্তর দিচ্ছেন “লম্বা দাঁড়ি”।  একটি বালক একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে “ ও মিয়া” বলে সম্বোধন করছে। তার মুখের দাঁড়ি নিয়ে প্রশ্ন করছে। বলে স্যার কেমন যেন একটু আনমনা হয়ে গেলেন। তারপরে নিজেকে সামলে নিয়ে তাঁর বোটানির প্রথম পাঠে ঢুকে গেলেন। যদিও চল্লিশ মিনিটের মধ্যে এককোষি প্রাণ থেকে উদ্ভিদ অবধি একটা ছবি মনের ও চোখের ওপর তৈরি করে দিলেন -যা আজো জীবন্ত । তারপরেও ক্লাস শেষে শুধু নয় অনেকটা সময় ধরে মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগলো- আসলে শিশু শিক্ষায় প্রথমেই একটি শিশুকে বয়স্ক মানুষকে সম্মান সূচক সম্বোধণ না শিখিয়ে বেয়াদবি বাক্য শেখানো হচ্ছে- এ তো কোন দিন মাথায় আসেনি। যারা এই বই লিখেছেন তারাও কি আমাদের স্যারের মতো করে ভাবেননি।

খুব ছোট বেলাতেই বাড়ির পুরোহিত ঠাকুর্দা শিখিয়েছিলেন- বিদ্যার মূল অর্থ হলো বিনয়। বিদ্যা মানুষকে বিনয়ী হতে শেখায়। বিনয় একটি সার্বিক জীবন চর্যা। যা শুধু বই দিয়ে হয় না,  একাডেমিক শিক্ষা দিয়ে হয় না, শুধু পারিবারিক শিক্ষা দিয়েও হয় না- একটা সামগ্রিক পরিবেশ ও শিক্ষা মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। এমনকি শিক্ষা যদি মানুষকে অহংকারি করে তোলে তখন কিন্তু সে আর বিদ্বান মানুষ থাকেন না। এবং এই বিদ্যা মানুষকে কেমন বিনয়ী করে তার সুন্দর একটি উদাহরণ পাই রামকষ্ণ’র কথামৃতে। তিনি বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বলেন, “ তুমি আসলে বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর না হলে এত নরম হয়। অন্য অনেক বিদ্বান কেমন আধ সেদ্ধ ব্যঞ্জনের আলু পটলের মত কচকচা থাকে। আর তুমি তো একেবারে সুন্দর রান্না সেই ব্যঞ্জনের আলু পটলের মতো একেবারে সেদ্ধ হয়ে গলে যাবার মতো নরম” । বিদ্বান বিনয়ী হলে কেমন হয় এত সহজ সরল ভাষায় এর আগে কোন উদাহরণ পায়নি।

তবে এই লাইনগুলো জানতে পারার জন্যে যার কাছে ঋনী তাকে এখানে স্মরণ করতে চাই। তিনি কবি সাইয়ীদ আতিকুল্লাহ ভাই। তখন সাংবাদিকতা করি দিন রাত জুড়ে। আবার ঢাকার অনেকগুলো আড্ডার আমরা নিয়মিত অংশ। এমনি একটি আড্ডায় একদিন আতিকুল্লাহ ভাই ঢুকে আমাকে বললেন, “ “ এই, তুমি তো কোরাণ, হাদিস , বাইবেল ত্রিপিঠক সবই পড়ো- কিন্তু মনে হয় রামকৃষ্ণ পরমহংস’র “ কথামৃত”  পড়োনি। বলি, বাড়ির অনেককে পড়তে দেখেছি- কিন্তু আমি পড়েনি। উনি ওই দিনই আমাকে বইটা কিনে দেন। আর বলেন, তোমাকে এটা পড়তে বলছি এ কারণে, তুমি মোটামুটি সহজ ভাষায় লেখ। কথামৃতটা মনোযোগ দিয়ে পড়লে তোমার ভাষা আরো সহজ ও সরল হবে।

বাস্তবে বাল্য শিক্ষার বই, পারিবারিক শিক্ষা,  বিদ্যালয়গুলোর ধাপে ধাপে শিক্ষা সর্বোপরি এই আতিকুল্লাহ ভাই এর মতো হাজার জনের পারিপার্শ্বিক এই সব মিলেই মানুষকে কম বেশি শিক্ষিত করে। আর সে শিক্ষা কয়েকটি প্রশ্ন পড়ে শুধু পাশ নয়, তার সঙ্গে আঁচার আচরণ, বিনয় বা নম্রতা, ভাষার ব্যবহার এমনি শত সহস্র বিষয় প্রতি মুহূর্তের জন্যে।

সাম্প্রতিককালে সোশ্যাল ফোরাম ও টেলিভিশনের পর্দায় আমাদের অনেক সন্তান-সন্ততির নানান আচরণ ও ভাষা প্রয়োগ দেখছে দেশের মানুষ। কিছু কিছু আচরণ ও কিছু কিছু ভাষা প্রয়োগ যে মানুষকে ব্যথিত করছে না, বললে ভুল হবে।

যারা এই ভাষাগুলো প্রয়োগ করছে, যারা এ আচরণ করছে তারা কোন এক মুহূর্তে বা কোন একটি ঘটনার ভেতর দিয়ে এ ভাষা শেখেনি। দীর্ঘকাল ধরে কোথায় একটা ক্ষতর সৃষ্টি হয়েছে- এ তারই রক্ত ক্ষরণ।

কোথা থেকে এই ক্ষত’র সৃষ্টি হলো তা সমাজ বিজ্ঞানিদের বিষয়। তারা ভবিষ্যতে গবেষণা করে প্রকৃত কারণ নির্ণয় করবেন।

তবে এ বাস্তবতা আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পারিপাশ্বির্ক সমাজের প্রতিটি মানুষের এই সকল সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্ববান হওয়া এখনই দরকার। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও সমাজ সকলকেই মনোযোগী হতে হবে নিজেদের সন্তানদের প্রতি।

যাতে তারা একটি বিনয়ী হবার জীবনাচরণে ফিরতে পারে। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্য হতে পারে। যোগ্যতা ও জীবনাচরণই মানুষের মূল শিক্ষা। অনেকগুলো ডিগ্রী নিয়েও যদি তার কাজের ক্ষেত্রে সে যোগ্য হয়ে ওঠার মতো একটি অবস্থান তৈরি করে- কোন কর্মক্ষেত্রে না আসতে পারে তাহলে সেই ডিগ্রীগুলো শেষ অবধি তাদের জন্যে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এমন বোঝা এখন সবখানে।

এই বোঝাকে সচল গাড়ি তৈরি করার জন্যে প্রথমেই জাগ্রত হতে হবে পরিবারকে, তারপরে সমাজকে। বাস্তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর  পরিবারের ও সমাজের আচরণেরই প্রতিফলন পড়বে। সেই প্রতিফলিত আলোই শিক্ষার বিষয়বস্তুর ওপর আলোর রশ্নি ফেলবে। কেন যেন দীর্ঘদিন ধরে চারপাশে তাকিয়ে মনে হয়, সে সময় বয়ে যাচ্ছে দ্রুত। অথচ আমরা চোখের পাতা তার  প্রয়োজনে দ্রুত উম্মোচন করছি না- আমাদের সন্তানদের জন্যে।

লেখক:  রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক। সম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present World. 

আমাদের সন্তানদের জন্যে চোখের পাতা কি দ্রুত উম্মোচন করছি?

০৮:১৮:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

স্বদেশ রায় 

ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণ পরিচয়, প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ, রামসুন্দর বসাকের বাল্যশিক্ষা (শোনা যায় এটাও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা), রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠের চার ভাগ । এই বইগুলোর কোনটাই স্কুলের সিলেবাসে ছিলো না- তবে স্কুলে যাবার আগে এগুলো পড়েই বাল্যশিক্ষা শুরু। তারপরে সরাসরি তৃতীয় শ্রেনীতে ফাইনাল পরীক্ষায় বসিয়ে দিয়ে চতুর্থ শ্রেনী থেকে স্কুল শুরু করাতে নিচের ক্লাসের বাল্য শিক্ষার বইগুলোর সঙ্গে ওই ভাবে পরিচয় ছিলো না- একটা বয়স অবধি। তাছাড়া তখন বাল্য শিক্ষার যে একটা প্রয়োজনীয়তা আছে এসব ভাবার মতো মনোজগত বা বোধও ছিলো না। তাই প্রথম দিন ধাক্কা খেলাম ইন্টারমিডিয়েট এর প্রথম দিনের বোটানি ক্লাসে গিয়ে।

বোটানির শিক্ষক বুলবুল কবীর। তাঁর মা রত্মগর্ভা। ভাই বোন সবাই উচ্চ শিক্ষিত। বনেয়েদি পরিবার।তিনি ক্লাসে ঢুকলেন একটা ক্রিকেট বল হাতে নিয়ে এবং কাকে যেন খুঁজছেন। একটু পরেই বুঝতে পারলাম, আমাদের সায়েন্স গ্রুপের কোন একটা ছেলে ওই ক্রিকেট বলটিকে পা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। ক্রিকেট খেলাটাও অনেকটা পার্লামেন্টের মতো। সেখানে লিখিত নিয়মের পাশাপাশি কিছু কনভেনশন মেনে চলতে হয়। তাই ক্রিকেট বলে সাধারণত কেউ পা দেয় না। হাত দিয়ে ধরে ছুড়ে দেয়। স্যার আমাদের ওই বন্ধুকে সেদিন ক্রিকেট বলের ওই বিষয়টি শুধু বোঝাতে গিয়ে বললেন, তোমাদের বা কী দোষ দেব, দোষ তো আমাদের। “প্রথম ভাগকে”  বাদ দিয়ে সেখানে তোমাদের পড়াই “সবুজ সাথী” । যেখানে ছিলো “ গুরুজনে কর নতি” তার বদলে পড়াই , একটা বাচ্চা ছেলে একজন বয়স্ক মানুষকে বলছে,  “  ও মিয়া কি কর” ?  তার পরে আবার তাঁর মুখের দাড়ি দেখে বলছে, “ মুখে কি”  — তিনি উত্তর দিচ্ছেন “লম্বা দাঁড়ি”।  একটি বালক একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে “ ও মিয়া” বলে সম্বোধন করছে। তার মুখের দাঁড়ি নিয়ে প্রশ্ন করছে। বলে স্যার কেমন যেন একটু আনমনা হয়ে গেলেন। তারপরে নিজেকে সামলে নিয়ে তাঁর বোটানির প্রথম পাঠে ঢুকে গেলেন। যদিও চল্লিশ মিনিটের মধ্যে এককোষি প্রাণ থেকে উদ্ভিদ অবধি একটা ছবি মনের ও চোখের ওপর তৈরি করে দিলেন -যা আজো জীবন্ত । তারপরেও ক্লাস শেষে শুধু নয় অনেকটা সময় ধরে মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগলো- আসলে শিশু শিক্ষায় প্রথমেই একটি শিশুকে বয়স্ক মানুষকে সম্মান সূচক সম্বোধণ না শিখিয়ে বেয়াদবি বাক্য শেখানো হচ্ছে- এ তো কোন দিন মাথায় আসেনি। যারা এই বই লিখেছেন তারাও কি আমাদের স্যারের মতো করে ভাবেননি।

খুব ছোট বেলাতেই বাড়ির পুরোহিত ঠাকুর্দা শিখিয়েছিলেন- বিদ্যার মূল অর্থ হলো বিনয়। বিদ্যা মানুষকে বিনয়ী হতে শেখায়। বিনয় একটি সার্বিক জীবন চর্যা। যা শুধু বই দিয়ে হয় না,  একাডেমিক শিক্ষা দিয়ে হয় না, শুধু পারিবারিক শিক্ষা দিয়েও হয় না- একটা সামগ্রিক পরিবেশ ও শিক্ষা মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। এমনকি শিক্ষা যদি মানুষকে অহংকারি করে তোলে তখন কিন্তু সে আর বিদ্বান মানুষ থাকেন না। এবং এই বিদ্যা মানুষকে কেমন বিনয়ী করে তার সুন্দর একটি উদাহরণ পাই রামকষ্ণ’র কথামৃতে। তিনি বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বলেন, “ তুমি আসলে বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর না হলে এত নরম হয়। অন্য অনেক বিদ্বান কেমন আধ সেদ্ধ ব্যঞ্জনের আলু পটলের মত কচকচা থাকে। আর তুমি তো একেবারে সুন্দর রান্না সেই ব্যঞ্জনের আলু পটলের মতো একেবারে সেদ্ধ হয়ে গলে যাবার মতো নরম” । বিদ্বান বিনয়ী হলে কেমন হয় এত সহজ সরল ভাষায় এর আগে কোন উদাহরণ পায়নি।

তবে এই লাইনগুলো জানতে পারার জন্যে যার কাছে ঋনী তাকে এখানে স্মরণ করতে চাই। তিনি কবি সাইয়ীদ আতিকুল্লাহ ভাই। তখন সাংবাদিকতা করি দিন রাত জুড়ে। আবার ঢাকার অনেকগুলো আড্ডার আমরা নিয়মিত অংশ। এমনি একটি আড্ডায় একদিন আতিকুল্লাহ ভাই ঢুকে আমাকে বললেন, “ “ এই, তুমি তো কোরাণ, হাদিস , বাইবেল ত্রিপিঠক সবই পড়ো- কিন্তু মনে হয় রামকৃষ্ণ পরমহংস’র “ কথামৃত”  পড়োনি। বলি, বাড়ির অনেককে পড়তে দেখেছি- কিন্তু আমি পড়েনি। উনি ওই দিনই আমাকে বইটা কিনে দেন। আর বলেন, তোমাকে এটা পড়তে বলছি এ কারণে, তুমি মোটামুটি সহজ ভাষায় লেখ। কথামৃতটা মনোযোগ দিয়ে পড়লে তোমার ভাষা আরো সহজ ও সরল হবে।

বাস্তবে বাল্য শিক্ষার বই, পারিবারিক শিক্ষা,  বিদ্যালয়গুলোর ধাপে ধাপে শিক্ষা সর্বোপরি এই আতিকুল্লাহ ভাই এর মতো হাজার জনের পারিপার্শ্বিক এই সব মিলেই মানুষকে কম বেশি শিক্ষিত করে। আর সে শিক্ষা কয়েকটি প্রশ্ন পড়ে শুধু পাশ নয়, তার সঙ্গে আঁচার আচরণ, বিনয় বা নম্রতা, ভাষার ব্যবহার এমনি শত সহস্র বিষয় প্রতি মুহূর্তের জন্যে।

সাম্প্রতিককালে সোশ্যাল ফোরাম ও টেলিভিশনের পর্দায় আমাদের অনেক সন্তান-সন্ততির নানান আচরণ ও ভাষা প্রয়োগ দেখছে দেশের মানুষ। কিছু কিছু আচরণ ও কিছু কিছু ভাষা প্রয়োগ যে মানুষকে ব্যথিত করছে না, বললে ভুল হবে।

যারা এই ভাষাগুলো প্রয়োগ করছে, যারা এ আচরণ করছে তারা কোন এক মুহূর্তে বা কোন একটি ঘটনার ভেতর দিয়ে এ ভাষা শেখেনি। দীর্ঘকাল ধরে কোথায় একটা ক্ষতর সৃষ্টি হয়েছে- এ তারই রক্ত ক্ষরণ।

কোথা থেকে এই ক্ষত’র সৃষ্টি হলো তা সমাজ বিজ্ঞানিদের বিষয়। তারা ভবিষ্যতে গবেষণা করে প্রকৃত কারণ নির্ণয় করবেন।

তবে এ বাস্তবতা আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পারিপাশ্বির্ক সমাজের প্রতিটি মানুষের এই সকল সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্ববান হওয়া এখনই দরকার। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও সমাজ সকলকেই মনোযোগী হতে হবে নিজেদের সন্তানদের প্রতি।

যাতে তারা একটি বিনয়ী হবার জীবনাচরণে ফিরতে পারে। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্য হতে পারে। যোগ্যতা ও জীবনাচরণই মানুষের মূল শিক্ষা। অনেকগুলো ডিগ্রী নিয়েও যদি তার কাজের ক্ষেত্রে সে যোগ্য হয়ে ওঠার মতো একটি অবস্থান তৈরি করে- কোন কর্মক্ষেত্রে না আসতে পারে তাহলে সেই ডিগ্রীগুলো শেষ অবধি তাদের জন্যে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এমন বোঝা এখন সবখানে।

এই বোঝাকে সচল গাড়ি তৈরি করার জন্যে প্রথমেই জাগ্রত হতে হবে পরিবারকে, তারপরে সমাজকে। বাস্তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর  পরিবারের ও সমাজের আচরণেরই প্রতিফলন পড়বে। সেই প্রতিফলিত আলোই শিক্ষার বিষয়বস্তুর ওপর আলোর রশ্নি ফেলবে। কেন যেন দীর্ঘদিন ধরে চারপাশে তাকিয়ে মনে হয়, সে সময় বয়ে যাচ্ছে দ্রুত। অথচ আমরা চোখের পাতা তার  প্রয়োজনে দ্রুত উম্মোচন করছি না- আমাদের সন্তানদের জন্যে।

লেখক:  রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক। সম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present World.