০২:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
গুগল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিস্টমাস আইল্যান্ডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা জাপানে উপকূলীয় ভূমির ক্ষয়জনিত কারণে সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ বছর পরও যে জাহাজডুবি এখনও এক ভয়ংকর গল্প জাপানে বাড়ছে ভাল্লুক আতঙ্ক: নিরাপত্তা জোরদারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ বইমেলায় ৩০০ শিশুর লেখক অভিষেক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৩) শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি আল-ওথমান মসজিদের পুনঃস্থাপন কাজ শেষের পথে, রমজানের আগেই পুনরায় খোলা হবে ভুলভাবে উপস্থাপিত বক্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন মির্জা ফখরুল দিল্লিতে হামলার ছক তৈরির অভিযোগে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করল ঢাকা

অভিশাপ

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৫৫:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • 28
আবু ইসহাক
ভোর বেলা। পত্রিকা হাতে নিয়েই হেডিং-এ দেখলাম, বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘দানবীয় নাৎসি বাহিনীর নিকট দুর্বল পোল্যান্ডের আত্মসমর্পন।’ পড়তে আরম্ভ করলাম। পড়া অর্ধেক হয়েছে কি হয় নি, হঠাৎ আমার চোখ গিয়ে পড়ল একটা মাকড়সার দিকে। সঙ্গোপনে এবং অতর্কিতে সে মাছিদের তাড়া করছিল। জায়গাটা ওদের খুব প্রিয়। তাই একটা বিরাটকায় রাক্ষস ওত পেতে আছে জেনেও এ আরামের জায়গাটা ছেড়ে ওরা আর কোথাও গেল না।
বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর মাকড়সাটা খপ করে ধরল একটা মাছি। মাছিটা যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল। তাতে কান না দিয়ে মাকড়সাটা দেয়াল বেয়ে সদর্পে ওপরে উঠতে লাগল। কিন্তু আর বেশি বাহাদুরি করতে হলো না। ওর ওপরেই এখন বাহাদুরি করছে আর এক বাহাদুর। একটা টিকটিকি খপ করে ওটাকে ধরে ফেলল। ব্যস, আর যায় কোথা! মাকড়সার মুখের গ্রাস গেল মেঝেতে পড়ে। টিকটিকি মশায় মাকড়সাটিকে একবার ছেড়ে দেয়, আবার খপ করে ধরে। দুর্বলকে যাতনা দেয়াটা সবলের স্বভাব। বারবার আছাড় মেরে সে মাকড়সাটার দফা একেবারে ঠাণ্ডা করে দিল। তারপর ওটাকে গিলে টিকটিকিটা লেজ নাড়তে নাড়তে চলে গেল চোখের অন্তরালে।
মাছিটার ছোট্ট ধুকধুকে প্রাণটা এখনো বের হয়ে যায় নি। খাবারের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে একটা লাল পিঁপড়ে ওর কাছে এসে হাজির। ওর অবয়বটা ভালো করে পরখ করে ওটা ছুটল, গিয়ে ঢুকল কিছু দূরের একটা গর্তের ভেতর। যেন একটি গুপ্তচর আর কি! দলনেতার কাছে বোধহয় খবর দিতে গেল। অনুমানটা আমার মিছে নয়। কিছুক্ষণ পরেই দেখি, একদল লালফৌজ পিলপিল করে এসে হাজির। কেউ মাছিটার পায়ে, কেউ পাখায়, কেউ বা মাথায় কামড়ে ধরে ওরা ওটাকে নিয়ে চলল ওদের রাজধানীর দিকে।
ভিন্ন জাতের একটা কালো পিঁপড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ওদের কাণ্ডকারখানা দেখছিল। ভয়ে সে ওদের কাছে ঘেঁষতে সাহস করে নি। যখনই দেখল ওরা বিশাল খাবার দখল করেছে, তখুনি সে দিল ভোঁ-দৌড় জরুরি খবর নিয়ে। বুঝলাম, এটা নিশ্চয় কালো পিঁপড়েদের গুপ্তচর।
কিছুক্ষণ পরেই দেখি ঘরের কোণের এক গর্তের মুখ দিয়ে মস্ত বড় একদল কালোফৌজ যেন কুচকাওয়াজ করতে করতে আসছে। কালো ফৌজ ও লালফৌজে এবার শুরু হয়ে গেল ভীষণ মারামারি আর ধস্তাধস্তি। দুই দলই মাছিটিকে ধরে টানাটানি করতে লাগল। কালোফৌজ গায়ে বড় আর দলেও ভারি। তাই লালফৌজের দলের অনেকে হতাহত হলো। যারা বেঁচে রইল তারা পিছু হটে দাঁড়িয়ে রইল অসহায়ের মতো। আর বিশাল খাদ্যটিকে নিয়ে কালোফৌজ বিজয়গর্বে চলল ওদের রাজধানীর দিকে।
এ কি! জার্মানি ও পোল্যান্ডের লড়াই-যা এতক্ষণ কাগজে দেখছিলাম, তার রূপ যে এখানে এ খুদে জীবদের মাঝেও তার বিভীষিকা নিয়ে নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। যে ভয়ঙ্কর মারামারি-খুনোখুনি দেখলাম ইতর প্রাণীদের মাঝে, মানুষের মাঝেও তো তার কোনো ব্যতয় দেখছিনে। এই রক্তক্ষয়ী সর্ববিধ্বংসী যুদ্ধের অভিশাপ থেকে মানুষ কবে মুক্ত হবে ?
জনপ্রিয় সংবাদ

গুগল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিস্টমাস আইল্যান্ডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা

অভিশাপ

০৬:৫৫:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
আবু ইসহাক
ভোর বেলা। পত্রিকা হাতে নিয়েই হেডিং-এ দেখলাম, বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘দানবীয় নাৎসি বাহিনীর নিকট দুর্বল পোল্যান্ডের আত্মসমর্পন।’ পড়তে আরম্ভ করলাম। পড়া অর্ধেক হয়েছে কি হয় নি, হঠাৎ আমার চোখ গিয়ে পড়ল একটা মাকড়সার দিকে। সঙ্গোপনে এবং অতর্কিতে সে মাছিদের তাড়া করছিল। জায়গাটা ওদের খুব প্রিয়। তাই একটা বিরাটকায় রাক্ষস ওত পেতে আছে জেনেও এ আরামের জায়গাটা ছেড়ে ওরা আর কোথাও গেল না।
বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর মাকড়সাটা খপ করে ধরল একটা মাছি। মাছিটা যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল। তাতে কান না দিয়ে মাকড়সাটা দেয়াল বেয়ে সদর্পে ওপরে উঠতে লাগল। কিন্তু আর বেশি বাহাদুরি করতে হলো না। ওর ওপরেই এখন বাহাদুরি করছে আর এক বাহাদুর। একটা টিকটিকি খপ করে ওটাকে ধরে ফেলল। ব্যস, আর যায় কোথা! মাকড়সার মুখের গ্রাস গেল মেঝেতে পড়ে। টিকটিকি মশায় মাকড়সাটিকে একবার ছেড়ে দেয়, আবার খপ করে ধরে। দুর্বলকে যাতনা দেয়াটা সবলের স্বভাব। বারবার আছাড় মেরে সে মাকড়সাটার দফা একেবারে ঠাণ্ডা করে দিল। তারপর ওটাকে গিলে টিকটিকিটা লেজ নাড়তে নাড়তে চলে গেল চোখের অন্তরালে।
মাছিটার ছোট্ট ধুকধুকে প্রাণটা এখনো বের হয়ে যায় নি। খাবারের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে একটা লাল পিঁপড়ে ওর কাছে এসে হাজির। ওর অবয়বটা ভালো করে পরখ করে ওটা ছুটল, গিয়ে ঢুকল কিছু দূরের একটা গর্তের ভেতর। যেন একটি গুপ্তচর আর কি! দলনেতার কাছে বোধহয় খবর দিতে গেল। অনুমানটা আমার মিছে নয়। কিছুক্ষণ পরেই দেখি, একদল লালফৌজ পিলপিল করে এসে হাজির। কেউ মাছিটার পায়ে, কেউ পাখায়, কেউ বা মাথায় কামড়ে ধরে ওরা ওটাকে নিয়ে চলল ওদের রাজধানীর দিকে।
ভিন্ন জাতের একটা কালো পিঁপড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ওদের কাণ্ডকারখানা দেখছিল। ভয়ে সে ওদের কাছে ঘেঁষতে সাহস করে নি। যখনই দেখল ওরা বিশাল খাবার দখল করেছে, তখুনি সে দিল ভোঁ-দৌড় জরুরি খবর নিয়ে। বুঝলাম, এটা নিশ্চয় কালো পিঁপড়েদের গুপ্তচর।
কিছুক্ষণ পরেই দেখি ঘরের কোণের এক গর্তের মুখ দিয়ে মস্ত বড় একদল কালোফৌজ যেন কুচকাওয়াজ করতে করতে আসছে। কালো ফৌজ ও লালফৌজে এবার শুরু হয়ে গেল ভীষণ মারামারি আর ধস্তাধস্তি। দুই দলই মাছিটিকে ধরে টানাটানি করতে লাগল। কালোফৌজ গায়ে বড় আর দলেও ভারি। তাই লালফৌজের দলের অনেকে হতাহত হলো। যারা বেঁচে রইল তারা পিছু হটে দাঁড়িয়ে রইল অসহায়ের মতো। আর বিশাল খাদ্যটিকে নিয়ে কালোফৌজ বিজয়গর্বে চলল ওদের রাজধানীর দিকে।
এ কি! জার্মানি ও পোল্যান্ডের লড়াই-যা এতক্ষণ কাগজে দেখছিলাম, তার রূপ যে এখানে এ খুদে জীবদের মাঝেও তার বিভীষিকা নিয়ে নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। যে ভয়ঙ্কর মারামারি-খুনোখুনি দেখলাম ইতর প্রাণীদের মাঝে, মানুষের মাঝেও তো তার কোনো ব্যতয় দেখছিনে। এই রক্তক্ষয়ী সর্ববিধ্বংসী যুদ্ধের অভিশাপ থেকে মানুষ কবে মুক্ত হবে ?