শ্রী নিখিলনাথ রায়
কাশীমবাজার
***
নেমিনাথের মন্দির
বাঙ্গলার প্রসিদ্ধ বন্দর সপ্তগ্রামের ধ্বংসের পর যৎকালে কলি- কাতার অভ্যুদয় সুদূর ভবিষ্যগর্ভে অন্তনিহিত ছিল, সেই সময়ে কাশীম- বাজার নিম্নবঙ্গে বাণিজ্যবিষয়ে সর্ব্বোচ্চ স্থান অধিকার করে। মুর্শিদা- বাদ বাঙ্গলার রাজধানী হওয়ার পূর্ব্ব হইতে কাশীমবাজারের নাম পাশ্চাত্য জগতে বিঘোষিত হয়। ইহাতে এবং ইহার নিকটস্থ অনেক স্থানে প্রধান প্রধান ইউরোপীয় জাতির কুঠী সংস্থাপিত ছিল। তন্মধ্যে কাশীমবাজারে ইংরেজদিগের, কালিকাপুরে ওলন্দাজদিগের, শ্বেতাখাঁর- বাজারে আর্ম্মেনীয়দিগের ও সৈয়দাবাদ-ফরাসডাঙ্গায় ফরাসীদিগের চিহ্ন অদ্যাপি দেখিতে পাওয়া যায়। কাশিমবাজার ও কালিকাপুরে ইংরেজ ও ওলন্দাজদিগের এক একটি সমাধিক্ষেত্র এবং শ্বেতাখার-বাজারে আর্ম্মে-নীয়দিগের একটি উপাসনামন্দির অঙ্কাপি বিক্ষমান রহিয়াছে। কাশীম- বাজার-সমাধিক্ষেত্রে ভারতবর্ষের প্রথম গবর্ণর জেনেরেল ওয়ারেন হেষ্টিংসের প্রথমা পত্নী মেরি ও শিশু কল্পা এলিজাবেথের সমাধি আছে। আন্মেনীয়দিগের উপাসনামন্দিরে তাহার নির্মাণাব্দ ১৭৫৮ খৃঃ অব্দ লিখিত রহিয়াছে। ফরাসীদিগের নির্মিত ফরাসডাঙ্গার প্রসিদ্ধ বাঁধের ভগ্নাবশেষ।
আজিও ভাগীরথীর স্রোতঃ প্রতিহত করিরা সমস্ত নগরকে রক্ষা করিতেছে। কিন্তু এক্ষণে তাহা মৃত্তিকা-মধ্যে প্রোথিত হইয়া পড়িয়াছে। ফরাসডাঙ্গার কিছুকাল কূটনীতি-বিশারদ ডিউপ্লে বাস করিয়াছিলেন। সিরাজউদ্দৌলার সময় “ল” সাহেব এই খানে অধ্যক্ষতা করিতেন; সিরাজের সহিত তাঁহার সবিশেষ পরিচয় ছিল। কাশীমবাজারের ইংরেজ কুঠী বা রেসিডেন্সীর চাতালের সামান্য অংশ ব্যতীত অন্য কোন চিহ্নই বর্তমান নাই। তৎকালে ভাগীরথী এই সকল স্থানের নিম্ন দিয়া প্রবাহিত হইতেন; কিন্তু তাঁহার গতি বক্র হওয়ায় কাশীমবাজার হইতে মুর্শিদাবাদে যাইতে অনেক সময় লাগিত। হল্ওয়েল্ সাহেব লিখিয়াছেন যে, অন্ধকূপহত্যার পর যখন তাঁহাকে কলিকাতা হইতে বন্দী-অবস্থায় মুর্শিদাবাদে আনয়ন করা হয়, তখন তিনি প্রাতঃ- কালে সৈয়দাবাদ-ফরাসডাঙ্গা হইতে যাত্রা করিয়া অপরাহ্ণ চারি ঘটিকার সময় মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন। ১৭৮৮ খৃঃ অব্দে মুর্শিদাবাদ কারবালা হইতে ফরাসডাঙ্গা পর্য্যন্ত ভাগীরথীর একটি খাল নিখাত হওয়ায়। নদীর গতি পরিবর্তিত এবং তন্নিবন্ধন কাশীমবাজার প্রভৃতি স্থানের নিম্নস্থ ভাগীরথীর অংশ বন্ধ বিলে পরিণত হয়। এই কারণেই ভীষণ মহামারী উপস্থিত হইয়া উক্ত স্থানসমূহকে মহাশ্মশানে পরিণত করে।
খৃষ্টীয় সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে কাশীমবাজারের নাম ইউরোপ- খণ্ডে বিস্তৃত হয়। ভাগীরথীর যে অংশ পদ্মা হইতে নিঃসৃত হইয়া জলঙ্গীর সহিত মিলিত হইয়াছে, সেই ভাগকে সচরাচর ইউরোপীয়গণ কাশীমবাজার-নদী নামে অভিহিত করিতেন এবং পদ্মা, ভাগীরথী ও জলঙ্গীর মধ্যস্থিত ত্রিকোণ ভূভাগ ‘কাশীমবাজার দ্বীপ’ আখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছিল। মেজর রেনেল কাশীমবাজার দ্বীপ নাম দিয়া উক্ত ত্রিকোণ- ভূভাগের একখানি মানচিত্র অঙ্কিত করিয়াছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে উক্ত মানচিত্র, অঙ্কিত হয়; তাহাতে সৈয়দাবাদ-ফরাসডাঙ্গা হইতে কাশীমবাজারের নিম্ন দিয়া মুর্শিদাবাদ পর্য্যন্ত ভাগীরথীর বক্র- গতিই নদীর প্রবাহরূপে নির্দেশিত হইয়াছে ৪ রেনেলের মানচিত্র হইতে অষ্টাদশ শতাব্দীর অনেক স্থানের অবস্থান সুন্দররূপে অবগত হওয়া যায়।
Sarakhon Report 



















