০৭:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১০২)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 20
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে এল গ্রামের সাধারণ মানুষ, এরা পরবর্তীকালে অনেকে কাকদ্বীপ ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘকাল কারাযন্ত্রণা ভোগ করেন। কসোরি হালদার, যোগেন গুড়িয়া, মানিক হাজরা, ঈশ্বর কামিল্যা, ভীকু দাস, বিজয় মণ্ডল এরকম অনেক নাম এবং অসংখ্য মহিলাকর্মী যারা আন্দোলনের নেতৃত্বে উঠে আসে। আন্দোলনের নেতারা সেদিন বুঝেছিলেন ক্ষুদ্র একটা পকেটে এই জঙ্গি আন্দোলন যতই শক্তিশালী হোক তা টিকিয়ে রাখা যাবে না- একে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে দেবার কথা ভেবেছিলেন সেদিনকার কৃষক সভার নেতারা। তাই এই আন্দোলনকে সুন্দরবনের পূর্ব প্রান্ত ২৪ পরগনার সন্দেশখালী, ক্যানিং, মিনাখাঁ, হাড়োয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে দেবার কথা ভাবা হল ৪৬ সালের শেষে।

সন্দেশখালি থানার মঠের দীঘিতে আস্তানা গাড়লেন কৃষক সমিতির হরিধন চক্রবর্তী, প্রভাস রায়, হেমন্ত ঘোষাল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। কাকদ্বীপের কয়েকজন কৃষক কর্মীর আত্মীয়দের বাড়ি ছিল তিন থানা ক্যানিং, সন্দেশখালি, হাড়োয়ার মিলনস্থল মঠের দিঘি গ্রামে। ১৯৪৬ এর ডিসেম্বর এর শেষের দিকে হরিধন চক্রবর্তী এলেন এই গ্রামে তারপর প্রভাস রায় এবং হেমন্ত ঘোষাল। কাকদ্বীপের আন্দোলন তখন উচ্চগ্রামে পৌঁছে গেছে; তেভাগা আন্দোলনের খবর চাষিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হল। চাষিরা এজন্য যেন প্রস্তুত হয়েই ছিল। দীর্ঘকালের অন্যায় অত্যাচার এবং বিশেষ করে মন্বন্তরের সময়ে সদ্যজমিহারা কৃষক সে সব চাইতে অধৈর্য হয়ে পড়ল। বর্গাদার প্রধান এলাকাগুলি তেভাগা আন্দোলনের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হল।

সন্দেশখালি, ক্যানিং হাড়োয়া জুড়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ইতিমধ্যে ধান কাটার মরশুম শেষ হবার জন্য বর্গাদার তার জমির ধান মহাজন জমিদারের কাছারিতে তুলে ফেলেছে। জমিদারের কাছারিতে ধান গাদা করে রেখেছে ঝাড়াই মাড়াই এর কাজ শেষ হয়নি। এলাকায় এলাকায় দ্রুত কৃষক সমিতি গড়ে উঠল সমিতির নেতারা সিদ্ধান্ত নিল জমিদারের খামারের গাদা ভেঙে ওখান থেকে তেভাগা আদায় করে নিতে হবে। তাই সন্দেশখালি, মিনাখাঁ, ক্যানিং-এর তেভাগা আন্দোলন গাদা ভাঙ্গা আন্দেলন নামে পরিচিত। চাষিরা হাজারে হাজারে সংঘবদ্ধ হয়ে জমিদারের কাছারি ঘিরে ফেলে গাদা ভেঙ্গে ফেলে জমিদারের জন্য একভাগ রেখে দু’ভাগ ধান মাড়াই করে নিয়ে চলে এল।

দু- এক জায়গায় পুলিশ বাধা দিতে এল কিন্তু চাষিদের সংঘশক্তির কাছে পিছিয়ে গেল। জমিদারের কাছারি থেকে পাইক বরকন্দাজ নায়েবরা পালিয়ে গেল এবং এক বিশাল এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব চাষিদের হাতে চলে আসে। সন্দেশখালি, ক্যানিং – এ ধনীচাষিদের এক বড় অংশ এই আন্দোলনে সামিল হয়; জমিদার নায়েবদের দীর্ঘকালের অত্যাচার তাদেরকে উৎসাহিত করেছিল এই আন্দোলনে মদত জোগাতো তৎকালীন এই এলাকার কৃষক নেতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবস্থাপন্ন চাষি ছিলেন। চন্দ্রপাত্র ছিলেন মঠেরদিঘি এলাকার একজন অবস্থাপন্ন চাষি প্রায় দুশ বিঘা জমির মালিক। ইনি মঠেরদিঘি কৃষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। খোশদেল মিস্ত্রি সরবেড়িয়া গ্রামে ১৫০ বিঘার উপর জমি ছিল।

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১০২)

১২:০০:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে এল গ্রামের সাধারণ মানুষ, এরা পরবর্তীকালে অনেকে কাকদ্বীপ ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘকাল কারাযন্ত্রণা ভোগ করেন। কসোরি হালদার, যোগেন গুড়িয়া, মানিক হাজরা, ঈশ্বর কামিল্যা, ভীকু দাস, বিজয় মণ্ডল এরকম অনেক নাম এবং অসংখ্য মহিলাকর্মী যারা আন্দোলনের নেতৃত্বে উঠে আসে। আন্দোলনের নেতারা সেদিন বুঝেছিলেন ক্ষুদ্র একটা পকেটে এই জঙ্গি আন্দোলন যতই শক্তিশালী হোক তা টিকিয়ে রাখা যাবে না- একে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে দেবার কথা ভেবেছিলেন সেদিনকার কৃষক সভার নেতারা। তাই এই আন্দোলনকে সুন্দরবনের পূর্ব প্রান্ত ২৪ পরগনার সন্দেশখালী, ক্যানিং, মিনাখাঁ, হাড়োয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে দেবার কথা ভাবা হল ৪৬ সালের শেষে।

সন্দেশখালি থানার মঠের দীঘিতে আস্তানা গাড়লেন কৃষক সমিতির হরিধন চক্রবর্তী, প্রভাস রায়, হেমন্ত ঘোষাল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। কাকদ্বীপের কয়েকজন কৃষক কর্মীর আত্মীয়দের বাড়ি ছিল তিন থানা ক্যানিং, সন্দেশখালি, হাড়োয়ার মিলনস্থল মঠের দিঘি গ্রামে। ১৯৪৬ এর ডিসেম্বর এর শেষের দিকে হরিধন চক্রবর্তী এলেন এই গ্রামে তারপর প্রভাস রায় এবং হেমন্ত ঘোষাল। কাকদ্বীপের আন্দোলন তখন উচ্চগ্রামে পৌঁছে গেছে; তেভাগা আন্দোলনের খবর চাষিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হল। চাষিরা এজন্য যেন প্রস্তুত হয়েই ছিল। দীর্ঘকালের অন্যায় অত্যাচার এবং বিশেষ করে মন্বন্তরের সময়ে সদ্যজমিহারা কৃষক সে সব চাইতে অধৈর্য হয়ে পড়ল। বর্গাদার প্রধান এলাকাগুলি তেভাগা আন্দোলনের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হল।

সন্দেশখালি, ক্যানিং হাড়োয়া জুড়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ইতিমধ্যে ধান কাটার মরশুম শেষ হবার জন্য বর্গাদার তার জমির ধান মহাজন জমিদারের কাছারিতে তুলে ফেলেছে। জমিদারের কাছারিতে ধান গাদা করে রেখেছে ঝাড়াই মাড়াই এর কাজ শেষ হয়নি। এলাকায় এলাকায় দ্রুত কৃষক সমিতি গড়ে উঠল সমিতির নেতারা সিদ্ধান্ত নিল জমিদারের খামারের গাদা ভেঙে ওখান থেকে তেভাগা আদায় করে নিতে হবে। তাই সন্দেশখালি, মিনাখাঁ, ক্যানিং-এর তেভাগা আন্দোলন গাদা ভাঙ্গা আন্দেলন নামে পরিচিত। চাষিরা হাজারে হাজারে সংঘবদ্ধ হয়ে জমিদারের কাছারি ঘিরে ফেলে গাদা ভেঙ্গে ফেলে জমিদারের জন্য একভাগ রেখে দু’ভাগ ধান মাড়াই করে নিয়ে চলে এল।

দু- এক জায়গায় পুলিশ বাধা দিতে এল কিন্তু চাষিদের সংঘশক্তির কাছে পিছিয়ে গেল। জমিদারের কাছারি থেকে পাইক বরকন্দাজ নায়েবরা পালিয়ে গেল এবং এক বিশাল এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব চাষিদের হাতে চলে আসে। সন্দেশখালি, ক্যানিং – এ ধনীচাষিদের এক বড় অংশ এই আন্দোলনে সামিল হয়; জমিদার নায়েবদের দীর্ঘকালের অত্যাচার তাদেরকে উৎসাহিত করেছিল এই আন্দোলনে মদত জোগাতো তৎকালীন এই এলাকার কৃষক নেতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবস্থাপন্ন চাষি ছিলেন। চন্দ্রপাত্র ছিলেন মঠেরদিঘি এলাকার একজন অবস্থাপন্ন চাষি প্রায় দুশ বিঘা জমির মালিক। ইনি মঠেরদিঘি কৃষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। খোশদেল মিস্ত্রি সরবেড়িয়া গ্রামে ১৫০ বিঘার উপর জমি ছিল।